বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বিরোধ আর তিক্ততা ভুলে একসঙ্গে পথচলার ঘোষণা দিলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির ও কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালামের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে বাকযুদ্ধ চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। এ নিয়ে দলের ভেতরে চলছিল তোলপাড়। অবশেষে নেতাদের হস্তক্ষেপে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই নেতাকে এক টেবিলে বসানো হলো।
গতকাল (সোমবার) সিটি কর্পোরেশনের সম্মেলন কক্ষে নগর আওয়ামী লীগ, চসিক ও সিডিএ অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। সিনিয়র সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন সেখানে। সভাশেষে মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যান হাত ধরাধরি করে সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। সভায় নগর আওয়ামী লীগ নেতা সুনীল সরকার, আলতাফ হোসেন বাচ্চু, আবদুর রশিদ, নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্ণেল মহিউদ্দিন আহমেদ, সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী জসীম উদ্দীন ও পানিবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী কাদের নেওয়াজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলে আসছিলেন, সিডিএ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করছে না। ফলে নগরীতে জনদুর্ভোগ হচ্ছে বলেও মত ছিল মেয়রের। সমন্বয়হীনতা নিয়ে গত ২১ জুন দলীয় সভায় নাছির ও ছালামের মধ্যে বাকবির্তকেও হয়। এরপর সিডিএ চেয়ারম্যান ২৪ জুন সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয় সভায়ও অনুপস্থিত থাকেন। পরে আর কোনো সমন্বয় সভাতেও উপস্থিত ছিলেন না ছালাম।
গতকালের বৈঠকে মেয়র দাবি করেছেন, তাদের মধ্যে কোন সমন্বয়হীনতা ছিল না। আর ছালামের দাবি, মহানগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার কোন দূরত্ব নেই। আ জ ম নাছির বলেন, সমন্বয়হীনতার কারণে জনদুর্ভোগ হচ্ছে এ বক্তব্য সঠিক নয়। তবে জনদুর্ভোগ হচ্ছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র। আবার মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সিডিএ চেয়ারম্যান মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। সিডিএ এ শহরে অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আমরাও সিটি কর্পোরেশনের যতটুকু দায়িত্ব আছে তার আলোকে নগরবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
আমাদের মধ্যে বিরোধ হলে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা কোনো কোনো মহলের থাকতে পারে। মেয়র বলেন, নির্বাচন সন্নিকটে। আমরা সরকারেও আছি। সুতরাং সরকারের ধারাবাহিকতা যাতে বজায় থাকে, সে লক্ষে একসঙ্গে কাজ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। মহানগরীর প্রতিটি আসন যাতে আমরা আওয়ামী লীগকে উপহার দিতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সুতরাং এখানে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই।
সভায় নিজেকে মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মী উল্লেখ করে আবদুচ ছালাম বলেন, আমি পরীক্ষায় পাশ করে কিংবা বিসিএস পাশ করে সিডিএ চেয়ারম্যান হইনি। আমার একমাত্র যোগ্যতা আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী। মহানগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্বের কোন সুযোগ নেই। এটা যদি আমি করি তাহলে তো বিশ্বাসঘাতকের তালিকায় আমার নাম উঠবে। মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবেই আমি সিডিএ চেয়ারম্যান হয়েছি। আমরা এ সভা থেকে ম্যাসেজ দিতে চাই, উই আর ইউনাইটেড।
সভাপতির বক্তব্যে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যানকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। যাতে সরকারের ভাবমর্যাদা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনাম অক্ষুণ্ন থাকে। খোরশেদ আলম সুজন মেয়রকে উন্নয়ন কাজের জন্য সাময়িক বন্ধ থাকা আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের এক পাশ জনগণ ও যান চলাচলের সুবিধার্থে খুলে দেয়ার আহ্বান জানান।
দুই নেতার বিরোধ মিটিয়ে চসিক ও সিডিএর কর্মকাণ্ডে সমন্বয় আনতে সর্বশেষ গত ১৪ সেপ্টেম্বর নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে মেয়র নাছির ও ছালামকে একসাথে বসানোর উদ্যোগ নেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। টেলিফোনে তিনি দু’জনকে কথা বলিয়ে দেন। এ ধারাবাহিকতায় গতকাল দুই নেতা বৈঠকে বসলেন। তবে এ বৈঠকের পর দু’জনের মধ্যে দূরত্ব কতটুকু কমবে কিংবা প্রকল্প বাস্তবায়নে সিটি কর্পোরেশনের বরাদ্দ বাড়বে কিনা তা দেখার অপেক্ষায় নগরবাসী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।