পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
বিগত ৭১ বছর ধরে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে। এটা হওয়ার কারণ রাষ্ট্র বিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘ন্যাশনালিস্টস অব কনভিকশন’কে ‘ন্যাশনালিস্টস অব অপরচুনিজম’ অনেক ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখছে পাকিস্তান ও ভারত। অথচ তারাই নিজেদের মধ্যে শান্তি বজায় রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। তারা তাদের জনগণের শান্তি ও কল্যাণ বৃদ্ধির জন্য বিরোধগুলো নিস্পত্তি করতে পারছে না। এটা হওয়ার কারণ জাতিসংঘ সনদের ৩৩ ধারা অনুযায়ী দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ রক্ষায় তাদের ব্যর্থতা। ভারত সরকার নিরাপত্তা পরিষদে ধারা ৩৪ তলব করেছে।
নিরাপত্তা পরিষদের পূর্ণ এখতিয়ারে কাশ্মির পরিস্থিতি তদন্ত হয়েছে, বিতর্ক হয়েছে। এখন শুধু জাতিসংঘের তত্ত¡াবধানে গণভোট অনুষ্ঠানের প্রস্তাব ভারত ও পাকিস্তানের মেনে নেয়ার অপেক্ষা। জাতিসংঘ সনদের ধারা ৩৩-এ বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাকে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং কাশ্মির এর ব্যতিক্রম কিছু নয়। নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মির নিয়ে আলোচনাকালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগের গুরুত্ব যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
১৯৫২ সালের ৫ ডিসেম্বর নিরাপত্তা পরিষদের ৬০৭তম বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র কাশ্মির বিরোধের দ্বিপাক্ষিকতার সুযোগ ভালোভাবে ব্যাখ্যা ও নিস্পত্তি করেছে। সেদিন নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধি আর্নেস্ট এ গ্রস দ্বিপাক্ষিক আলোচনা গুরুত্ব তুলে ধরে বক্তব্য রেখেছিলেন।
তিনি বলেন: ‘টেকসই রাজনৈতিক নিস্পত্তি অবশ্যই সম্মত নিস্পতির মাধ্যমে হতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমরা মনে করি বিরোধ নিস্পত্তির জন্য দুই পক্ষ যে কোন চুক্তিতে পৌছাবে নিরাপত্তা পরিষদ তাকে স্বাগত জানাবে।’
তাই জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে ভারত ও পাকিস্তানের উপর সনদ মেনে নিজেদের মধ্যে বিরোধগুলো শান্তিপূর্ণভাবে মিটিয়ে ফেলার দায়িত্ব বর্তায়। একই সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য অংশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তারা সহযোগিতাও করবে।
সনদ মানার এই বাধ্যবাধকতার বাইরেও ভারত ও পাকিস্তানের আন্ত:রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতাও কিছু রয়েছে। দু:খের বিষয় হলো রাষ্ট্র দুটি’র এই বাধ্যবাধকতা কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ, বাস্তব প্রয়োগ ক্ষেত্রে নেই।
১৯৬৬ সালের তাসখন্দ ঘোষণা, ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি, ১৯৯৯ সালের লাহোর ঘোষণায় দ্বিপাক্ষিক আচরণ ও বিরোধ নিস্পত্তির অনেক নীতির কথা উল্লেখ রয়েছে। সিমলা চুক্তিতে ‘শান্তিপূর্ণ উপায়ে’র কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে কোন শান্তিপূর্ণ উপায় অথবা দুইপক্ষ সম্মত হয়েছে এমন অন্য যেকোন শান্তিপূর্ণ উপায়ে দেশ দুটি তাদের মতবিরোধ নিস্পত্তি করার ইচ্ছা ব্যক্ত করছে। শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে ক্ষতিকর এমন কোন কাজ, সংস্থা, সহযোগিতা প্রতিরোধ করবে বলে সিমলায় দুই পক্ষ একমত হয়।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাসখন্দ ঘোষণা ও সিমলা চুক্তিতে দুই পক্ষ জাতিসংঘ সনদের বাধ্যবাধকতা মেনে কাশ্মির বিরোধের চূড়ান্ত নিস্পত্তি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু লাহোর ঘোষণায় দুই পক্ষ প্রথম বারের মতো জাতিসংঘ সদনের উল্লেখ এড়িয়ে যায়। তবে, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কটিকে দ্বিপাক্ষিকতার নীতি ও সুযোগ অনুসরণ করা উচিত।
বিরোধের মূল বিষয় – জম্মু-কাশ্মিরের জনগণ এসব ফোরামের কোনটিতেই প্রতিধিত্ব বা পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব করেনি। এরপরও বিরোধ নিস্পত্তির ক্ষেত্রে তাদের মূল স্বার্থগুলোর মধ্যে ভারসাম্য কোনভাবেই নষ্ট করা যাবে না। জাতিসংঘ সনদের ধারা ১০৩ বহাল থাকার পর ভারত যেভাবে দ্বিপাক্ষিকতাকে ব্যাখ্যা করছে তার কোন মূল্য নেই।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ও দ্বিপাক্ষিকতার সুযোগটি জম্মু-কাশ্মিরবাসীর ক্ষোভগুলোর সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরির মধ্যে ঝুলে আছে। ভারত পাকিস্তানকে ওইসব রাজনৈতিক বিরোধের দিকে নজর দিতে হবে যেগুলো শান্তিকে হুমকিগ্রস্ত করছে। ভারত ও পাকিস্তানকে অবশ্যই সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে হবে এবং আজ হোক বা কাল, আলোচনা শুরু করতে হবে। সূত্র : এসএএম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।