পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে বিস্ময়, হতাশা ও দু:খ প্রকাশ করেছে সম্পাদক পরিষদ। গত রোববার অনুষ্ঠিত সম্পাদক পরিষদের সভায় জানানো হয়েছে, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ এবং সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিমত ও উদ্বেগ পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। পরে সম্পাদক পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই প্রতিবেদন আমরা প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ, খসড়া আইটিতে ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারায় মৌলিক পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। এসব ধারা মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুতর হুমকি। তবে ৩ নম্বর ধারার অধীনে তথ্য অধিকার আইনের (আরটিআই) অন্তর্ভুক্তিকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু ঔপনিবেশিক আমলের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন (অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট) অন্তর্ভুক্ত করায় আমরা উদ্বেগ জানাচ্ছি। এটি আরটিআই’র সঙ্গে পরিষ্কার সাংঘর্ষিক। কেন সম্পাদক পরিষদ প্রতিবেদন ও খসড়া আইনটি প্রত্যাখ্যান করছে, তার কারণ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি সংবিধানের ৩৯ (২) ক ও খ ধারায় দেয়া মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের নিশ্চয়তার পরিপন্থী। এটি চিন্তার স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ধারণার বিরোধী, যে স্বাধীনতা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ। এটি গণতন্ত্রের মৌলিক চর্চার বিরোধী, যে গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশ সব সময় লড়াই করেছে এবং এর পাশে থেকেছে। এটি সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মৌলিক নীতিমালার বিরোধী, যার জন্য বাংলাদেশের সাংবাদিকরা লড়াই করেছেন।
গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রীসভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া অনুমোদিত হওয়ার পর সাংবাদিক সমাজ এবং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোসহ বিভিন্ন মহল এই আইনের বিভিন্ন ধারা নিয়ে আপত্তি উত্থাপন করে, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ জানায়। এর প্রেক্ষিতে সরকারী মহল থেকে জানানো হয়, আইন পাসের আগে আপত্তিজনক ধারাগুলো পর্যালোচনা করা হবে এবং প্রয়োজনে সংশোধন অথবা বাদ দেয়া হবে। যা কিছুই করা হোক না কেন, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেই করা হবে। অংশীজন হিসাবে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে যে বৈঠক হয় সে বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আইনমন্ত্রী এই মর্মে আশ্বাস করেন যে, তারা সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে থাকবেন এবং তার উদ্বেগ প্রশ মনের ব্যবস্থা নেবেন। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গেও এ নিয়ে সম্পাদক পরিষদের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে বিএফইউজে ও অ্যাটকোর প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। এরকম দু’দফা বৈঠকের পর পরবর্তিতে আরো বৈঠকের কথা বলা হলেও সে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, প্রস্তাবিত আইনটির কতিপয় ধারা নিয়ে আপত্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ১০টি দেশ। ওই সব দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিরা আইনমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে তাদের দেশের আপত্তি ও উদ্বেগের কথা জানান। আইনমন্ত্রী তখন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সরকার তাদের বক্তব্য দেখবে এবং বিবেচনা করবে। বলাবাহুল্য, এত কিছুর পরও এখন দেখা যাচ্ছে, ‘সকলই গরল ভেল’। কোনো আশ্বাস বা প্রতিশ্রæতিই রক্ষা করা হয়নি। প্রবাদের ভাষায় বলতে হয়, যে লাউ সেই কদু। সংসদীয় কমিটির তরফে দাবি করা হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে সংজ্ঞা নির্দিষ্ট করাসহ ১৬টি ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অন্তরায় এবং মানবাধিকারের পরিপন্থী হিসাবে বিবেচিত ও উল্লিখিত ধারা-উপধারাগুলো বহাল তরিয়তেই আছে।
আইসিটি আইনের ৫৭ ধারাসহ কতিপয় ধারা নিয়ে আপত্তি ও বিরোধিতা শুরু থেকেই রয়েছে। এসব ধারা বিশেষ করে ৫৭ ধারার ব্যাপক অপব্যবহার হয়েছে। বহু মানুষ হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সরকারী মহল আশ্বাস দিয়েছিল, আপত্তিজনক ধারাগুলো সংশোধন বা বাতিল করা হবে। সেটা এখনো করা হয়নি। কদিন আগে বলা হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হলে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা থাকবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, আইসিটি আইনের চেয়ে অনেক বেশি কঠোর করা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। কাজেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হলে আইসিটি আইন বা ওই আইনের ৫৭ ধারার কোনো প্রয়োজন হবে না। উল্লেখ করা দরকার, আইসিটি আইনের আপত্তিকর ধারাগুলো কোনো না কোনোভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এই আইনের ব্যাপারে অংশীজনদের একটি বড় আপত্তি এই যে, কোনো সাংবাদিক যদি বিনা অনুমতিতে সরকারি তথ্য সংগ্রহ করে তবে তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির মামলা হতে পারে। সংসদীয় কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সেটি বাতিল করা হয়নি। বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অনুসরণ করা হবে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, এই ধরনের একটি ত্রæটিপূর্ণ ও নিবর্তনমূলক আইন পাস হলে তা হবে আত্মঘাততুল্য। কাজেই এ আইন পাস করা কোনো মতেই সদ্বিবেচনার পরিচায়ক হবে না। আমরা মনে করি, তাড়াহুড়া করে নির্বাচনের আগে আইনটি পাসের কোনো প্রয়োজন নেই। এনিয়ে আরও চিন্তাভাবনা ও পর্যালোচনা করা যেতে পারে। সম্পাদক পরিষদ জাতীয় সংসদের প্রতি আহŸান জানিয়েছে, সংসদ যেন আইনটি পাস না করে। এটা আমাদেরও মত এবং এতে গোটা দেশবাসীর অভিমতেরই প্রতিফলন রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।