Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বেচ্ছাচারিতায় উবার

আবদুল্লাহ আল মামুন | প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:৩৬ এএম

গণপরিবহনের দুর্ভোগে যাত্রীরা যখন নাকাল ঠিক তখনই ২০১৬ সালের নভেম্বরে বিশ্বের ৩৩তম শহর হিসেবে ঢাকায় যাত্রী সেবা দেয়া শুরু করে উবার। সিএনজিচালিত অটোরিকসা চালকদের স্বেচ্ছাচারিতায় বিপর্যস্ত ঢাকাবাসী উবারকে আশীর্বাদ মনে করেছিল। কিন্তু সেবাটি চালুর পর জনপ্রিয় হতে যেমন সময় লাগেনি তেমনি নানা অনিয়মে বিরক্তির কারণ হতেও সময় নেয়নি। উবারের সেবার মান ও চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে ব্যক্তিগত ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্তর অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চালকদের দুর্ব্যবহার ও গালাগালি, নিয়ম বহির্ভূতভাবে এবং যাত্রীদের অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে গাড়িতে তোলা, অস্বাভাবিক রুটের ব্যবহার, অ্যাপসে দুরত্ব ও গন্তব্যের মারাত্মক অংসগতি, অফার চলাকালে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা কাটে উবার। একইভাবে গন্তব্য পছন্দ না হলে চালকদের যেতে অনাগ্রহ, প্রতিবাদ করলে যাত্রীকে হুমকি প্রদান ও যাত্রীকে রিকুয়েস্ট ক্যান্সেলে বাধ্য করে জরিমানা আদায় করে। গাড়ির মান নিয়েও রয়েছে অভিযোগ- অনুন্নত গাড়ির মান, পথিমধ্যে হঠাৎ নষ্ট হওয়া, এয়ার কন্ডিশন ঠিক না থাকাসহ বিস্তর অভিযোগ।এ ছাড়া নারী যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার ও বখাটেপণা করারও অভিযোগ রয়েছে উবারের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীরা বলেন, উবারের সেবার মান, চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্বব্যবহারসহ কোন বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথভাবে অভিযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। অনেক যাত্রী ঝামেলা এড়াতে অভিযোগ দিতে চান না। এ ছাড়া চালক বা সেবার মান নিয়ে কোন অভিযোগ করলেও প্রতিকার পাওয়া যায় না।
যাত্রীদের অভিযোগ, কয়েক বছর না যেতেই সেবাটির মান যেমন খারাপ হয়েছে তেমনি উবার চালকদের আচার-ব্যবহার অটোরিকসা চালকদের চেয়ে নিম্নে পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভুক্তভোগী ও নগর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরে চালক ও গাড়ির লাইসেন্স তল্লাশিতে কড়াকড়ি হওয়ায় ঢাকার রাস্তায় গণ পরিবহনের সঙ্কট অনেক বাড়ে। এ ছাড়া নগরীর মূল সড়কে হিউম্যান হলার বন্ধ করে দেওয়ায় এ সঙ্কট আরও ভয়াবহ। পরিবহন সঙ্কটের এই সুযোগে নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে বেপরোয়া ও স্বেচ্ছাচারী আচরণ করছে উবার চালকরা। বিশেষজ্ঞদের আতঙ্ক- ‘পরিস্থিতি এভাবে এগুতে থাকলে পরিবহণ সেক্টরে উবারসহ বিভিন্ন রাইড শেয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর অনৈতিক রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। তারাও নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় প্রভাবশালীদের সঙ্গে আঁতাত করবে। এতে দেশের পরিবহন সেক্টর বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এ দিকে যাত্রীদের ধর্ষণ-হয়রানিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে বিশ্বের উন্নত অনেক দেশে উবারকে নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। ফেসবুকে ‘উবার ইউজার্স অব বাংলাদেশ’ নামক একটি গ্রুপে রাশেদুল হক লিখেছেন, ‘আমাকে মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে পাইলে নাকি খবর আছে। চালককে ট্রিপ চলাকালীন গ্যাস নিতে বারণ করায় রাইড শেষে ফোনে গালাগালি করে এমন হুমকি দেয় চালক।’ ‘উবার কি ইদানিং মাস্তান পালা শুরু করল?’ এমন প্রশ্ন করেন তিনি। রাসেল শিকদার উবারের অফার প্রতারণা নিয়ে, ‘এটা কোন ধরণের ফাজলামি? অফার দিয়েছে ঠিকই কিন্তু ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। একই লোকেশনে পাঠাও’য়ের ভাড়া উবার অফার দেওয়ার পরেও কম।’ রব্বানি শাহিন লিখেছেন, ‘স্টুপিড সার্ভিস, প্রমো ব্যবহারের ক্ষেত্রে উবার এক্স ও প্রিমিয়ার একই, এই সব প্রমোর ধান্দা বন্ধ করা দরকার।’
তাওফিক হাসান লিখেছেন, ‘চালক রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করে ফোন দেয়নি, আমিই বাধ্য হয়ে ফোন দিলাম। গন্তব্য শোনার পর যেতে অনাগ্রহী হলেন এবং মুখের ওপর রিকুয়েস্ট ক্যান্সেল করে ফোন কেটে দিলেন।’
‘উবার ইউজার্স অব ঢাকা’ গ্রুপে শেহজাদ আলভী লিখেছেন, ‘নিউ মার্কেটে যাওয়ার জন্য উবারে রিকুয়েস্ট পাঠালাম, এক চালক রিকুয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করে অনেক্ষণ বসিয়ে রেখেও আসেনি। আমি বাধ্য হয়ে রিকুয়েস্ট ক্যান্সেল করে ৩০ টাকা জরিমানায় পড়েছি।’
মাহাদি সাব্বির লিখেছেন, ‘উবার মোটোতে পান্থপথ থেকে ধানমন্ডি ৩২ এ আসার পর চালকের অ্যাপসে রাইডটি ক্যান্সেল দেখায়। অথচ ওই সময় আমার মোবাইলে রাইড চলমান দেখাচ্ছিল। আমার তাড়া থাকলেও চালককে ৭০ টাকা দিয়ে মাঝপথে গাড়ি থেকে নেমে যেতে বাধ্য হই।’
নাজির আহমেদ লিখেছেন, ‘গন্তব্য জানতে চাওয়া এখন চালকদের নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কর্তৃপক্ষের বিষয়টি সমাধান করা উচিত।’
গত ৪ মে রাতে ধানমন্ডি থেকে গুলশান যাওয়ার সময় ভাস্কর ও মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণীর কন্যা ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনীকে কোন কারণ ছাড়াই তাদের মাঝপথে নামিয়ে দেয় চালক। প্রিয়নন্দিনী বলেন, চালক হঠাৎ নামিয়ে দিলেও পুরো ভাড়াটা রেখে দিয়েছিল। প্রতিবাদ করলে উল্টো গালাগালি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
ফারহানা বলেন, অফিস শুরু ও ছুটির সময়, বৃষ্টি পড়লে বা অতিরিক্ত গরম পড়লেও অতিরিক্ত ভাড়া রাখে উবার। উৎসবের সময় অনেক বেশি ভাড়া রাখে। রুবিনা হক বলেন, অ্যাপসে ‘টয়োটা এলিয়ন’ গাড়ি দেখালেও বাস্তবে ‘এক্স করোলা’ বা অন্য কোন গাড়ির আসার ঘটনাও ঘটে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উবার চালক বলেন, মাঝে মধ্যে অ্যাপসে অনেক বেশি ভাড়া দেখায়। তার গাড়িতে এমন হয়েছে। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করতে বলেছেন। এছাড়া অনেকে রাস্তা ঠিকমতো না চিনে পার্টটাইম উবার চালানোয় যাত্রীদের সাথে ঝামেলা হয়। একজন মালিক জানান, এক ট্রিপ থেকে অন্য ট্রিপ ধরার খরচও মালিকের। এছাড়া কমিশন হিসেবে উবার ৩০ শতাংশ টাকা কেটে রাখে। এতে মালিকদের কিছু থাকে না।
উবারের অনিয়ম ও অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দেওয়া নম্বরে ইনকিলাব থেকে কল করা হলেও কারো সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
ই-মেইল বার্তায় ঢাকার উবার কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘উবারের ভাড়া ডায়নামিক্যালি নির্ধারিত হয়। এর মধ্যে দূরত্ব, সময়, যানজট, উবার ব্যবহার করা গ্রাহক ও চালকের সংখ্যা নির্ভর করে। তবে যাত্রীদের অনেক অভিযোগের উত্তর দেয়নি উবার।
বিআরটিএ সংশ্লিষ্টরা বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান অভিযোগ নিষ্পত্তি না করলে যাত্রীরা বিআরটিএকে অভিযোগ জানাতে পারে। এর আগে ২০১৭ সালে অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবাগুলোর জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করেছে সরকার।



 

Show all comments
  • বৃষ্টি ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৪:৫৩ এএম says : 1
    পরিস্থিতি এভাবে এগুতে থাকলে পরিবহণ সেক্টরে উবারসহ বিভিন্ন রাইড শেয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর অনৈতিক রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মানিক ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৪:৫৩ এএম says : 0
    এরকম আরও কিছু প্রতিষ্ঠান হওয়া দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • আজগর ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৪:৫৪ এএম says : 0
    অভিযোগ পেলে প্রশাসনকে উবারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উবার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ