Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

শ্রমবাজার সংকোচন অত্যন্ত উদ্বেগজনক

| প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

বাংলাদেশের বৃহত্তম শ্রমবাজার সউদী আরব থেকে উদ্বেগজনক বার্তা এসেছে। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, সউদী সরকার বিভিন্ন খাতে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিক ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্যোগের ফলে বিপুল সংখ্যাকে বাংলাদেশী শ্রমিকের কর্মচ্যুত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এই সঙ্গে সেখানে নতুন করে শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ সংকুচিত হয়ে পড়তে পারে বলেও আশংকা করা হচ্ছে। সউদী সরকার বেকারত্বের হার ১২ দশমিক ৮ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনতে অভিবাসী শ্রমিক ছাঁটাইয়ের এই উদ্যোগ নিয়েছে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সউদী আরবের শ্রম ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, তিন ভাগে ১২ ধরনের বেসরকারী খাত সউদীকরণ করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপের কারণে সউদী প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা আতংকিত হয়ে পড়েছে। তাদের অনেকেরই দেশে ফিরে আসতে হতে পারে। সউদী আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, বেসরকারী বিভিন্ন খাত সউদীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় সার্বিকভাবে বাংলাদেশীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এক্ষেত্রে কূটনেতিক কোনো উদ্যোগ নিলেও কিছু হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। সউদী সরকার তার দেশের স্বার্থে যে কোনো উদ্যোগ নিতে পারে। কিন্তু যেহেতু কথিত উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশ বা তার মতো অন্যান্য শ্রমিক প্রেরণকারী দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, সুতরাং সউদী সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা বা কূটনৈতিক উদ্যোগ তারা নিতে পারে। বাংলাদেশেরও সেটাই করা উচিৎ ছিল। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সে রকম কোনো উদ্যোগের কথা জানাতে পারেননি। সাফ বলে দিয়েছেন, কূটনৈতিক কোনো উদ্যোগে কিছু হবে না। এটা কীভাবে তিনি বলতে পারেন! তার জবানিতেই জানা গেছে, বিষয়টি দেড় বছর আগেই সউদী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে সরকারের বা রাষ্ট্রদূত হিসাবে তার পক্ষ থেকে কি করা হয়েছে, জানা যায়নি। নতুন অথবা বিকল্প খাতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়তো হতে পারতো। এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন, চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে অগ্রগতির কোনো তথ্য নেই। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এটা বড় ধরনের কূটনৈতিক ব্যর্থতারই নজির।
শুধু সউদী শ্রমবাজার নয়, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্যান্য শ্রমবাজার নিয়েও একই ধরনের হতাশাজনক খবর আছে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো স্থগিত করে দিয়েছে সে দেশের সরকার। শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ এই স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে। অনেক দিন বন্ধ থাকার পর জি-টু-জি পদ্ধতিতে সেখানে শ্রমিক পাঠানো শুরু হয়। মালয়েশিয়ার একটি কোম্পানী ও ১০টি বাংলাদেশী এজেন্সি এ ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়। অভিযোগ উঠেছে, তারা যোগসাজস করে ব্যাপক দুর্নীতি করেছে। খবর প্রকাশিত হয়েছে, এই দেড় বছরে প্রায় দু’লাখ শ্রমিক মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। তাদের কাছ থেকে কথিত ১০ এজেন্সি নির্ধারিত অর্থের বাইরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্তে¡ও কোনো শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। কয়েক বছর ধরে এই শ্রমবাজারে শ্রমিক পাঠানো বারিত হয়ে আছে। এই বন্ধ দুয়ার খোলার কোনো পদক্ষেপ নেই। দুটি প্রধান শ্রমবাজারে শ্রমিক পাঠানো অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় এবার বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা অনর্জিত থেকে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। আশংকা করা হচ্ছে, এখাত থেকে রেমিট্যান্স প্রাপ্তি ও কমে যাবে। একথা সবাই জানে, জনশক্তি রফতানিই আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত। গার্মেন্টও একটি বড় খাত। কিন্তু এই খাত থেকে অর্জিত আয়ের বৃহদাংশই বেরিয়ে যায়। জনশক্তি রফতানি থেকে অর্জিত আয়ই সলিড আয়। জনশক্তি রফতানি ও এখাতের আয় কমে যাওয়া দেশের জন্য কতটা ক্ষতি ও বিপদ ডেকে আনতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
জনশক্তি রফতানি বা বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে দুর্নীতি শুরু থেকেই ছিল এবং এখনো আছে। সম্প্রতিক বছরগুলোতে এই দুর্নীতি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দুর্নীতি নিরোধে লাগাতার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। অভিযোগ আছে, দুর্নীতির সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্তাব্যক্তিও জড়িত। গত দেড় বছরে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের তা অজানা থাকার কথা নয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় দুর্নীতি রোধে কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। জানাজানি হওয়ার পর মন্ত্রী কেবল ওই ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শোকজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। দুর্নীতি ছাড়াও শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে যাওয়ার আর একটি বড় কারণ, যথাযথ কূটনৈতিক তৎপরতার অভাব। বরাবরই এটা আমরা দেখে আসছি। জনশক্তি আমদানিকারী দেশগুলোর বেশিরভাগই মুসলিম দেশ। এটা বাংলাদেশের জন্য এমন একটা বাস্তবতা যে, ওইসব দেশে তার শ্রমিকরা তুলনামূলকভাবে অগ্রাধিকার পাবে। অথচ দেশগুলোতে শ্রমিক পাঠানো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, কমে যাচ্ছে কিংবা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেশগুলোর সঙ্গে সম্ভাব ও রাজনৈতিক সম্পর্ক অটুট এবং কূটনৈতিক যোগযোগ অব্যাহত থাকলে এমনটি হওয়ার কথা নয়। চলমান প্রেক্ষাপটে, তাদের সঙ্গে সম্ভাব ও সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং কূটনৈতিক যোগাযোগ জোরদার করতে হবে। শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে দুর্নীতি ডেডস্টপ করতে হবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি নতুন বাজার সন্ধান করতে হবে। অন্যায় এক্ষেত্রে একটা ভয়ঙ্কর বিপর্যয় নেমে আসবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শ্রমবাজার


আরও
আরও পড়ুন