বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা কুমিল্লা নগরীর অর্ধশতাধিক ভবনে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে হাজারো মানুষের কেউ কর্মব্যস্ততা কেউবা পারিবারিক জীবনের মূল্যবান সময় পার করছেন। কিন্তু ভূকম্পনের ঘটনায় দেশ কেঁপে উঠলেও টনক নড়ছে না ওইসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন মালিকদের। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) কর্তৃপক্ষ ওইসব ভবন ভেঙ্গে ফেলা বা সংস্কার করার জন্য মালিকদের দফায় দফায় নোটিশ দিয়েও কার্যকর সাড়া পাচ্ছেন না। তবে গত ৫-৬ বছরে ১৪-১৫টি ভবন ভেঙ্গে ফেলা ও সংস্কার হয়েছে। কিন্তু অর্ধশতাধিক ভবন এখনো ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও অত্যধিক ভূকম্পের আশংকায় ২০০৯ সালের মার্চে কুমিল্লা শহর এলাকায় যে জরিপ চালানো হয়েছিল তাতে ১১টি ওয়ার্ডের ৬৬ ভবন অধিক ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় আনা হয়। ২০০৯ সালের ১জুন তৎকালীন কুমিল্লা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী মো: আরিফ ৬৬টি ভবন ভেঙ্গে অপসারণের নির্দেশ দেন। ঝুঁকিপূর্ণ ৬৬ ভবনের সঙ্গে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নতুন তালিকায় নতুন করে যোগ হয় আরও ১০টি ভবন। গত ৯ বছরে ৭৬টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মাত্র ১৫টি ভবন ভেঙ্গে ফেলা ও সংস্কার করা হয়। আর অর্ধশতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙ্গা বা সংস্কারের কোন নামগন্ধ নেই। ভূমিকম্প হলেই এসব ভবনের লোকজন হুড়াহুড়ি করে রাস্তায় নেমে আসে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ঘিরে আশপাশের বাড়িঘর, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেরও লোকজনও সবসময় আতঙ্কে থাকেন।
কুমিল্লা নগরীর অর্ধশতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের অধিকাংশই শত বছরের পুরানো। ভবনগুলোর দেয়াল ও ছাদ থেকে আস্তর খসে পড়েছে। কোনটির দেয়াল ও ছাদের অংশে গাছ গাছালি গজিয়েছে। আবাসিক ভবনগুলোতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লোকজন বসবাস করছে। আর বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে আতংকের মধ্যেই কাজকর্ম চলছে। আবার নতুন করে নির্মিত অনেক ভবনই বিল্ডিংকোড না মেনে করার কারণে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে পড়েছে। কুমিল্লা নগরীতে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে এমনসব ভবনের মধ্যে অন্যতম কান্দিরপাড়ের পূবালী ব্যাংক ভবন। বছর দুয়েক আগে এ ব্যাংক ভবনের একটি অংশ ধসে পড়ে গিয়েছিল। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ব্যাংকের সামনের অংশের দোতলায় ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হলেও নিচতলায় চলছে দোকানপাট ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম। এছাড়াও ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে এমন পুরানো ভবনের মধ্যে কান্দিরপাড় চত্বরে পূবালী ব্যাংক ভবন, মনোহরপুরে কৃষি ব্যাংক ভবন, মনোহরপুর-রাজগঞ্জ সড়কে জাতীয় পার্টির অফিসসহ বাটা দোকান ও আফতাব ব্রাদার্স নিয়ে পুরো ভবন, রাণীর দিঘীর পূর্বপাড়ে ফুলার হোস্টেল, কাপড়িয়াপট্টি এলাকায় এস ইসলাম ভবন, মুন্সেফ বাড়ি এলাকায় অ্যাডভোকেট হাবিব উল্লাহ চৌধুরীর বাসভবন, উজির দিঘীপাড়ে দুদুকের সাবেক কার্যালয় (বর্তমানে এ্যাপোলো নামে একটি কিন্ডারগার্টেন), বাদুরতলা এলাকায় সাবেক সিংহ প্রেস, অশোকতলায় এনএসআই অফিস বিল্ডিং, অশোকতলায় প্রয়াত শিল্পী নাছির উদ্দিনের সরকারী বন্দোবস্তীয় দোতলা ভবন ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, ধর্মপুরে জাতীয় মহিলা সংস্থার কার্যালয়, বাগিচাগাঁও এলাকায় আনন্দকানন ভবন, গণপূর্ত বিভাগের কোয়াটার, রামঘাট এলাকায় বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন কার্যালয়, মোগলটুলির তাজমহল বিল্ডিং, ঠাকুরপাড়ার মৃণালিনী দত্ত ছাত্রী নিবাস, ঝাউতলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত রাজলক্ষী ভবন ও কামিনী কুটির, শাসনগাছায় ট্রাষ্ট সুপার মার্কেট, হোটেল আবেদীন উল্লেখযোগ্য। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন মেয়র মনিরুল হক সাক্কু জানান, নগরীতে তালিকাভুক্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ভবন মালিকদেরকে একাধিকবার ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙ্গে ফেলতে, সংস্কার করতে বা অপসারণ করতে নোটিশ দেয়া হয়েছিল। হাতেগোনা ১৪/১৫জন ভবন ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ ও সংস্কার করেছেন। যারা এখনো ঝুঁকি নিয়ে ওইসব ভবন ব্যবহার করছেন তাদের আহ্বান জানাচ্ছি জীবন রক্ষার্থে অন্তত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙ্গে ফেলুন বা ব্যবহার উপযোগী হলে যথাযথভাবে সংস্কার করুন। অন্যথায় সিটি করপোরেশন কর্তপক্ষ যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণে কঠোর পদক্ষেপ নেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।