পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1720337904](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
৩০ অক্টোবরের পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। সারাদেশে নির্বাচনী ডামাডোলও শুরু হয়ে গেছে। প্রশ্ন হলো এ কেমন নির্বাচনী ডামাডোল? এক পক্ষ দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। ট্রেন মার্চ করে স্টেশনে স্টেশনে সমাবেশ করেছে। নির্বাচনী প্রচারণায় রোড মার্চ ও লঞ্চ মার্চ করার কর্মসুচি দিয়েছে। অন্যপক্ষ আদালতের বারান্দায় ঘুরতে ঘুরতে ঘাম ঝড়াচ্ছে। এক পক্ষ রেল স্টেশনে ট্রেন দাঁড় করিয়ে সমাবেশ করছে; অন্য পক্ষ্যকে মানববন্ধন করতে হলেও হাজারো শর্ত মেনে পুলিশের অনুমতি নিতে হচ্ছে। আবার শান্তিপূর্ণ সমাবেশ থেকে শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। গেল ঈদুল আজহার পর থেকে সারাদেশে বিএনপির প্রায় এক লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শত শত নেতাকর্মীকে ‘ভৌতিক’ মামলায় আটক করা হচ্ছে বলে দাবি বিএনপির। এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সারাদেশে লক্ষাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সরকার ভৌতিক মামলা দিয়েছে। ১২ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রামেগঞ্জেও বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরে ঘুমাতে পারছেন না’।
পৃথিবীর গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে কয়েক বছর পর পর নির্বাচন হয়। প্রতিদ্ব›িদ্ব দলগুলো নির্বাচন প্রস্তুতির সমান সুযোগ পায়। স্বৈরতান্ত্রিক দেশে অবশ্য ভিন্ন কথা। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে নির্বাচনের অনেক দিন আগে থেকেই প্রতিদ্ব›িদ্ব দলগুলোর ভোটের প্রস্তুতি নেয়। দুই তিন বছর ধরে তারা ভোটারদের কাছে যায়, প্রচারণা চালায়। রাজনৈকিত দলগুলো নিজেদের আদর্শ নীতি ও কর্ম পরিকল্পনা তুলে ধরেন ভোটারদের সামনে। ভোটাররা সব দলের আদর্শ নীতি ও কর্ম পদ্ধতি দেখে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেয়ার সুযোগ পায়। এটাই রেওয়াজ। কিন্তু বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনে যেন একমাত্র ক্ষমতাসীন দলই জনগণের কাছে যাওয়া এবং নির্বাচনী প্রচারণার স্বাধীনতা ভোগ করবে; অন্য প্রতিদ্ব›িদ্ব দলগুলো নয়।
নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় খরচে যখন যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই জনগণের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাচ্ছেন। নির্বাচনী প্রচারণা তিনি জোরেশোরেই চালাচ্ছেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল নীল সাগর ট্রেনে উত্তরাঞ্চলে নির্বাচনী সফর করেন। নির্বাচনী এই ট্রেন যাত্রার শুরুতে কমলাপুর স্টেশনে তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন কাজ তৃণমূলে পৌঁছে দিতে এবং দলকে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতেই উত্তরাঞ্চলে আওয়ামী লীগের ট্রেন সফর। দেশব্যাপী দলকে শক্তিশালী করতে ভবিষ্যতে নৌ ও সড়ক পথেও সফর করা হবে। তাদের এই নির্বাচনী ট্রেন যাত্রায় বিভিন্ন স্টেশনে অনির্ধারিত ভাবে ট্রেন দাঁড় করিয়ে জনসভা করা হয়। সমাবেশের জন্য যেমন অনুমতির প্রয়োজন পড়েনি; তেমনি যাত্রীদের পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। ১৩ সেপ্টেম্বর নদীপথে নির্বাচনী প্রচারণার কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে ২৫ শর্তে অনুমতি নিতে হয় বিএনপিকে। বেগম জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে এক ঘন্টার মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের পুলিশের কাছে অনুমতি নিতে হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ওই কর্মসূচি পালনের সময় শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এ প্রসঙ্গে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘যেভাবে ধরপাকড় হচ্ছে এটা নিয়ে উদ্বেগের কারণ আছে। কারো অপরাধ থাকলে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। তাও সংবিধানে স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে কিভাবে আইনের আওতায় আনতে হবে। এখন যা হচ্ছে সরকার তা করতে পারে না। যেখানে স্বৈরাচার থাকে সেখানে যাকে তাকে গ্রেফতার করা যায়। এখনই ধরপাকড় বন্ধ করা হোক’।
নির্বাচনে ভোট দেয়া নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের মাধ্যমে সে অধিকার দেশের মানুষ হারিয়ে ফেলেছে। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা সময়ের দাবি। সে কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুধু ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা নয়; এই নির্বাচনের গুরুত্ব ঐতিহাসিক। এই নির্বাচনে জনগণ ভোটের অধিকার ফিরে পেলে ইতিহাসের মোড়ও ঘুরে যাবে। প্রখ্যাত সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ লিখেছেন, ‘সব গণতান্ত্রিক দেশেই নির্বাচন বড় ঘটনা। কোনো কোনো নির্বাচন ঐতিহাসিক ঘটনা। সেসব নির্বাচন জাতির জীবনে আনে ঐতিহাসিক পরিবর্তন। বাঙালি জাতির জীবনেও তেমন নির্বাচন হয়েছে প্রথমটি ১৯৩৭ সালে, দ্বিতীয়টি ১৯৪৬ সালে, তৃতীয়টি ১৯৫৪ এবং চতুর্থটি ১৯৭০ সালে। স্বাধীন বাংলাদেশে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে ১৯৯১ সালে’। তিনি লেখেন- ‘উপমহাদেশে প্রথম গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে; ১৯৪৬ সালের নির্বাচন হয় পাকিস্তান ইস্যুতে; ১৯৫৪ সালে হয় বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার নির্বাচন; ১৯৭০ সালের নির্বাচন বাঙালির ভাগ্য নির্ধারণ হয়; অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের ভেতর দিয়ে ১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয়’। সৈয়দ মাকসুদ চমৎকার ভাবে কিভাবে ওই সব নির্বাচনের ঐতিহাসিকভাবে ইতিহাসে যায়গা করে নিয়েছে; তার ব্যাখ্যা করেছেন।
এবার যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে সেটারও ওই রকম ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। আর দশটা জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে এই নির্বাচন অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতা এবং নির্বাচনে শতকরা ৫ ভাগ মানুষের ভোটাদানের ঘটনা গোটা বিশ্ব বিবেকে নাড়া দিয়েছে। ওই পাতানো নির্বাচনের পর স্থানীয় নির্বাচনসহ যেসব নির্বাচন হয়েছে তার অধিকাংশতেই জনগণ ভোট দিতে পারেনি। সবগুলো নির্বাচনই হয়েছে নিয়ন্ত্রিত। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনের ৪০ বছরের মাথায় জনগণ কার্যত ভোটের অধিকার হারায় ২০১৪ সালে। কাজেই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হলে তা হবে ঐতিহাসিক ঘটনা। কিন্তু আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক পক্ষ প্রচারণা চালাচ্ছে বাধাহীন ভাবে; অন্যপক্ষকে প্রচারণা দূরের কথা গ্রেফতার করে কারাগারে ভরা হচ্ছে। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।