পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘আমার কোরআনে হাফেজ হয়ে ফেরার কথা, সে লাশ হয়ে ফিরলো কেন?’ সালমা বেগমের এমন প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারছিলেন না। সন্তানের লাশ বাসায় আসার পর কফিনের উপর আছড়ে পড়ছিলেন তিনি। তার আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল (সোমবার) বিকেলে নগরীর এনায়েত বাজার জুবিলী রোডের ফোম মার্কেট গলির বাসায় নিয়ে আসা হয় শাহরিয়ার আলম সাকিবের (১২) লাশ।
রোববার রাতে নগরীর হালিশহরের নতুন বাজার মসজিদ গলির নাহদাতুল উম্মাহ মাদরাসা থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই মাদরাসার আবাসিক ছাত্র সাকিব হেফজখানায় পড়তো। ইতোমধ্যে পবিত্র কোরআনের ১৪ পারা মুখস্থ করেছে সে। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, সাকিব আত্মহত্যা করেছে। তবে পরিবারের অভিযোগ মাদরাসায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ হত্যা রহস্যের কুলকিনারা খুঁজছে। থানার ওসি বলছেন, আমরা ঘটনার তদন্ত করছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যু রহস্য উদঘাটন হবে।
সন্তানকে হাফেজ বানানোর স্বপ্ন দেখতেন সাকিবের মা। কিন্তু তার মৃত্যুর সাথে সাথে মায়ের সে স্বপ্নেরও মৃত্যু হয়েছে। সাকিবের পিতা মো. নুরুল আলম শাহীন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ছেলে হাফেজ হবে আমার জানাজা পরাবে। এখন আমিই তার লাশ বহন করছি।
মাদরাসার পরিচালক মনির হোসেন দাবি করেন, রোববার রাতে শোয়ার বিছানা বদল করে দেয়ায় রাগে-ক্ষোভে আত্মহত্যা করেছে সাকিব। তিনি দাবি করেন, সাকিব বাথরুমে ঢুকে নিজের পরনের লুঙ্গি খুলে তা রশির মত পেঁচিয়ে বাথরুমের ভেন্টিলেটরের গ্রিলের সাথে বেঁধে আত্মহত্যা করে। সাকিবের মৃত্যু সম্পর্কে মাদরাসা পরিচালকের বক্তব্যের সমর্থন করে সেখানকার অন্য শিক্ষার্থীরা বলেন, এর আগেও সাকিব ছুরি নিয়ে বাথরুমে ঢুকে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। ওই ঘটনার পর মাদরাসার পরিচালক সাকিবকে না রাগাতে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
এদিকে সাকিবের মা সালমা বেগম অভিযোগ করেন, তার সন্তানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এজন্য মাদরাসার শিক্ষক আক্তার মজুমদার ও বাবুর্চি মোঃ রাশেদকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, রাশেদ প্রায়ই তার ছেলেকে মারধর করতো। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে বলে অভিযোগ করেন সাকিবের পিতা নুরুল আলম।
সহপাঠীদের কাছে প্রায়ই সাকিব তার মা-বাবা সম্পর্কে বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলতো। কখনো বলতো তার বাবা আইনজীবী, আবার কখনো বলতো জজ। কথায় কথায় রাগ করা এবং খাবার বন্ধ করে দেয়া ছিল সাকিবের নিয়মিত ঘটনা। বিষয়টি মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্ররা সবাই জানতেন এবং এ কারণেই তাকে সবাই এড়িয়ে চলতেন বলেও জানায় শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে নগর পুলিশের ডবলমুরিং জোনের সহকারী কমিশনার আশিকুর রহমান বলেন, রোববার রাত সাড়ে ১১টায় ওই হেফজখানার টয়লেটে সাকিবকে ঝুলন্ত অবস্থায় পায় মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। আমরা এসব বিষয় খতিয়ে দেখছি। তার পরিবারের পক্ষ থেকে যে অভিযোগ করা হয়েছে তাও তদন্ত করা হচ্ছে।
হালিশহর থানার ওসি মাহফুজুর রহমান বলেন, মাদরাসার পরিচালক এটাকে আত্মহত্যার ঘটনা বলেছেন। ঘটনাস্থলের প্রাথমিক আলামত দেখেও সেটাই মনে হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।