Inqilab Logo

রোববার ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১, ০৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন জাতিকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে’

সুশীল সমাজের আন্দোলন হবে ‘ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন’

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:৩৯ এএম

আগামী নির্বাচনে সব নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সুশীল সমাজের একটাই আন্দোলন হবে জনগণের ভোট নিশ্চিত করতে ‘ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন’। সেই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হবে। ‘উন্নয়ন, গনতন্ত্র ও সুশাসন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে দেশের বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেন। তারা আরো বলেন, ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতা ছাড়ার নির্বাচনের চেষ্টা দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে। দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান নিরপেক্ষ ও সৎ নেই। প্রসাশন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচার প্রসাশনসহ সব প্রতিষ্ঠান একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে। সরকার সব জায়গায় ভোট চাইবে অন্য কেউ চাইতে পারবে না- এটা হতে পারে না। দি ঢাকা ফোরামের উদ্যোগে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেন, ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতা না ছাড়ার নির্বাচন জাতিকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে। মনে রাখতে হবে, অবাধ নির্বাচনের দাবি, জাতীয় দাবি এটা কোনো দল বিশেষের দাবি নয়। সংসদীয় গণতন্ত্রের নির্বাচন সংসদীয় ব্যবস্থার মধ্যেই নিহিত। ভোট চুরির প্রয়োজনে যারা শাসনতন্ত্র ভেঙ্গেছে তাদরেকেই সমাধান দিতে হবে।
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, দেশে বিচারহীনতা, দুর্ণীতি ও ভোগের সংস্কৃতি চলছে। মানুষের আয় বৈষম্য বেড়েছে। মধ্যবিত্তরা ক্রমান্বয়ে দরিদ্র হচ্ছে। দুর্ণীতির মাধ্যমে সিস্টেম করে জনগনের পকেট কেটে কিছু লোক ও প্রতিষ্ঠানকে বড়লোক করা হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়াবেই।
মূল প্রবন্ধে ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, উন্নয়নকে সুশাসন ও গনতন্ত্র থেকে আলাদা করে দেখা ঠিক নয়। উন্নয়ন ও গণতন্ত্র অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। গনতন্ত্র ছাড়াও বিশ্বের কিছু দেশে উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সে উন্নয়ন টেকসই ও সমতা ভিত্তিক নয়। সেখানে শুধু বস্তুনির্ভর প্রবৃদ্ধি ও ভোগবাদের প্রসার হয়েছে। মূল্য বোধ, ব্যক্তি স্বাধীনতা এগুলোর প্রাধান্য দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ ওই পথে চলুক, আমরা সেটা চাইনা। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন দুটিই পাশাপাশি চলতে হবে। আপনি শুধু উন্নয়ন নিশ্চিত করলেন আর গনতন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে গেলেন তাহলে স্থায়ী, টেকসই, সমতাভিত্তিক ও অর্থবহ সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। ড. সালেহ উদ্দিন আরো বলেন, দেশে উন্নয়নের বিভিন্ন সূচক বাড়লেও তার সুফল সাধারন মানুষের কাছে পৌছাচ্ছে না। দিন দিন ধনী দরিদ্রের ফারাক বাড়ছে। এই অসম উন্নয়ন গ্রহনযোগ্য নয়। তিনি বলেন, দেশে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা না থাকলেও অনিশ্চয়তা আছে। কী হবে, না হবে। কী ধরনের সরকার হবে। দেশে সুশাসনের অভাব চলছে, স্বচ্ছতা নেই, জবাবদিহিতা নেই। কেউ অন্যায় করলে শাস্তি হয় না। সবচেয়ে মারাত্মক হল রুল অব ল নেই। আইন আছে কিন্তু বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। রাজনীতির আসল জিনিসটা যে খালি ভোট দিলে হয়ে গেল তা নয়। সুশাসন ছাড়া কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে রাজনীতির চর্চা জনগনের স্বার্থে হচ্ছে না। রাজনৈতিক সহনশীলতা ও সুস্থ রাজনীতি চর্চার অভাব প্রকট। জনগনকে বিভিন্ন বিষয়ে সম্পৃক্ত না করার প্রবণতাও বেশি। এতে জনগনের অনেক সমস্যার সমাধান হয় না। সবচেয়ে বড় বিষয় সমস্যাগুলোর সমাধান না করে বরং তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয় এবং এর দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানোর প্রবণতা বিদ্যমান।
এম. হাফিজ উদ্দিন বলেন, দেশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। এক দলের নেত্রী সারাদেশ ঘুরে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। আর বিরোধীদলের নেতারা তা করতে পারছেন না। তিনি দেশবাসীকে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ’৫২, ’৬৯ ও ’৭১ সালের মত আন্দোলন করার আহবান জানিয়ে বলেন, আমরা বাঙ্গালিরা এক সময় খ্বুই প্রতিবাদী ছিলাম। সে সময় শুধু আন্দোলন নয়, সশস্ত্র আন্দোলন হয়েছিল। এখন সেই সাহস গেল কোথায়? আগে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচন করার বিধান ছিল। এখন আইন করে সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। তারা এখন ইভিএম প্রকল্প হাতে নিয়ে আছে। প্রকল্প পাস হওয়ার আগেই একটি প্রতিষ্ঠানকে ইভিএম কিনতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যারা ইতোমধ্যে এলসিও খুলে ফেলেছে। কাজের অর্ডার পাবার আগেই কিভাবে এলসি খোলা হল তা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। এম. হাফিজ উদ্দিন বলেন, ইসির উচিত সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা। সবাই যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করা। না হলে তাদের চলে যাওয়া উচিত। তিনি বলেন, দেশের সর্বত্র এখন বিশৃংখলা চলছে। কোনো প্রতিষ্ঠান নিরপেক্ষ ও সৎ নেই। প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচার প্রশাসনসহ একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থার মধ্য দিয়ে সব প্রতিষ্ঠান চলছে। ব্যাংকে চরম নৈরাজ্য চলছে। সবকিছু রাজনৈতিকভাবে দেখা হচ্ছে। চাকরির জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনের গিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে সে কোন দল করে, কোন দলকে ভোট দেয় ইত্যাদি। উন্নয়নের মহাসড়কে ওঠার দাবি করা হচ্ছে। অথচ সাধারণ মানুষের জীবনমানে কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।
আবু আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ মানুষ এখন আর বিশ্বাস করে না। কাগজে কলমে দেশের বিভিন্ন সূচকের উর্ধগতি দেখানো হলেও বাস্তব জীবনে তা দেখা যায় না। জনগনের টাকা কিছু লোকের পকেটে চলে যাচ্ছে। এসব টাকা অবৈধ পথে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে।
ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, দেশে উন্নয়নের প্রচারণা চলছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কতটুকু উন্নয়ন হয়েছে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। দেশে যে জিডিপি আছে তা মিয়ানমার, পাকিস্তানের চেয়েও কম। তিনি বলেন, জনগনকে বাইরে রেখে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশে সুশাসনের অভাব রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আইনের শাসন নেই, সর্বত্র দুর্নীতি আর দুর্ণীতি। মানুষ কথা বলতে ভয় পায়। প্রশাসন এখন রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছে। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না।
ড. রাশেদ তিতুমীর বলেন, দেশে যে উন্নয়নের প্রচার করা হচ্ছে তা টেকসই নয়। আমরা ভাঙ্গা সেতুর উপর দাঁড়িয়ে আছি। এ সেতু যেকোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে। ড. ম. ইনামুল হক বলেন, উন্নয়ন নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হচ্ছে। কিন্তু দূষন নিয়ে কোন কথা নেই। বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয় দ্বিগুন-তিনগুন বাড়ছে। মানুষের ঘাড়ে ঋণের বোঝা বাড়ছে। ব্যাংকে লুটপাট চলছে। কোথাও সুশাসন নেই। তিনি বলেন, যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য এত আন্দোলন এক মুহূর্তে তা ্উড়িয়ে দেয়া হল। জনগনের মত না নিয়ে বাদ দিয়ে দেয়া হল। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যে ক্ষমতা পায় তিনি আর ছাড়েননা। আসলে তিনি নিজেই ক্ষমতা ছাড়তে চাচ্ছেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও দি ঢাকা ফোরামের চেয়ারম্যান ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সুজন সভাপতি এম. হাফিজ উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও নিউ নেশন সম্পাদক ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, অর্থনীতিবিদ প্রফেসর আবু আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ ড. রাশেদ তিতুমীর, ড. মাহমুদুর রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক ড. ম. ইনামুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর শামসুল হক, ঢাবি সহকারী অধ্যাপক ড. রাফিয়া রহমান, সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ফিনান্সিয়াল এক্সসিলেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ট্রেড হাব লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, দি ঢাকা ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সিরাজুল ইসলাম, সাবেক রাষ্ট্রদূত এফ এ শামীম আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত ইফতেখারুল করিম, সাবেক রাষ্ট্রদূত মাসুদ আজিজ, প্রফেসর ডা. এম মাজহারুল হক প্রমুখ।



 

Show all comments
  • জাফর ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৬:২৫ এএম says : 1
    শুধু সুশীল সমাজের নয়, সকলের আন্দোলন হবে ‘ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন’
    Total Reply(0) Reply
  • Hero ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১:১০ পিএম says : 0
    শুধু দল নয় প্রত্যেক ব্যাক্তি ও সংগঠন কে এই অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাড়াতে হবে, আর তার সময় এখনই। এখন নাহলে অঘোষিত বাকশাল কায়েম হবে তখন কিছুই করার থাকবেনা
    Total Reply(0) Reply
  • Abdullah Mamun ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ২:১৫ পিএম says : 0
    তারা দেশের জনগণ,সুশীল সমাজ,বিশিষ্ট জন কারো কথা তোয়াক্কা করছে না৷ক্ষমতার লোভে উঁচু নিচু সব সমান মনে করছে৷
    Total Reply(0) Reply
  • Sahin Sami ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ২:১৬ পিএম says : 0
    আপনারা ও বিএনপির সাথে এক হয়ে আন্দোলনে মাঠে নামুন কথা আর কাজে মিল থাকবে
    Total Reply(0) Reply
  • MD Tofazzal Hossain ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ২:১৭ পিএম says : 0
    কে শুনে কার কথা ?
    Total Reply(0) Reply
  • Mk Liton ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ২:১৭ পিএম says : 0
    ১০০% সহমত
    Total Reply(0) Reply
  • Ismail Abedi ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৫:০৩ পিএম says : 0
    Fired from, Care taker government, Moinul Hossain now in BNP? The party should be desperate.
    Total Reply(0) Reply
  • M A HAKIM CHY ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১:৪৮ পিএম says : 1
    SHOSHILDER EK VAI MONTRI AREK VAI DALAL . EI PORJONTO SHUSHIL DER DARA DESHER KONO LAV HOYNI BORONSE TARA DOI NETRIKE ALDO FALDO BOLE SHOB SHOMOY BANGLADESHER POLITICAL MOVMENT GOLAT KORESE.
    Total Reply(0) Reply
  • adnan ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৪:১৪ পিএম says : 0
    দূ,চোখে অশ্রু ঝরে ,গণতন্ত্র বন্ধী , মীর জাফর আর ক্লাইভের পাকাপাকী সন্ধী , মোহন লাল , মোহন লাল , মোহন লাল।
    Total Reply(0) Reply
  • Sana de ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:৪৮ পিএম says : 0
    Godite bose vut ? Ata hotee parena .
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ