Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাঙন কেড়েছে চোখের ঘুম

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

পদ্মা, মেঘনা ও মধুমতি নদীতে তীব্র আকার ধারণ করছে ভাঙন। ভাঙণে রোধে বিভিন্ন স্থানে সরকার কর্র্তৃক গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পও ভেস্তে যাচ্ছে। ভাঙন ইতোমধ্যে ভয়াবহ রুপে কেড়ে নিয়েছে নদী পাড়ের মানুষের চোখের ঘুম। জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় পদ্মার পানি বৃদ্ধি ও ভাঙনে দুই মাসের মাথায় ধসে যাচ্ছে কুঠিবাড়ী রক্ষা বাঁধ প্রকল্প। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মধুমতী নদীর ভাঙনে ৬ গ্রামের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় শতাধিক বাড়ি ঘর। ভাঙন অব্যাহত থাকায় প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ঝুঁকিতে রয়েছে শতাধিক ঘর-বাড়ি। চাঁদপুরে মেঘনার ভাঙনে শহর রক্ষা বাঁধের পুরাণবাজার হরিসভা পয়েন্টে প্রায় ৬০ মিটার বøকবাঁধ তলিয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে সেখানে ভাঙন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নদী পাড়ের মানুষগুলো কোথায় থাকবে, কোথায় যাবে এ নিয়ে জনমনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্য নিয়ে এ রিপোর্ট :
এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে জানান, প¥আর ভাঙনে ২শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কুষ্টিয়ার শিলাইদহে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ী রক্ষা বাঁধ প্রকল্প মাত্র দুই মাসের মাথায় ধসে যাচ্ছে । প্রমত্ত পদ্মার ভাঙন থেকে বিশ্বকবির কুঠিবাড়ি রক্ষায় বাঁধটি নির্মাণ করেন সরকার। কয়া ইউনিয়নের কালোয়া অংশে ভয়াবহ ভাঙনে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে রক্ষাবাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড তত্ত¡াবধায়নে “কুষ্টিয়া জেলায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ী সংলগ্ন এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় পদ্মা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ” প্রকল্পের ৩ হাজার ৭২০ মিটার বাঁধ নির্মাণ করে সরকার। কিন্তু পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে দুইমাস আগে নির্মিত বাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় কয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম স্বপন বলেন, কুঠিবাড়ি রক্ষাবাঁধের কয়া ইউনিয়নের কালুয়া অংশে হঠাৎ ভাঙন দেখা দেয়। মুহুত্বেই প্রায় ৫০ মিটার বাঁধ ভেঙ্গে নদীগর্ভে চলে যায়। যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে, তাকে মনে হচ্ছে কয়েক দিনের মধ্যে পুরো বাঁধ ভেঙে নদী গর্ভে চলে যাবে।
এ বিষয়ে কুঠিবাড়ী রক্ষাবাঁধ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান জানান, কালোয়া এলাকার কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার সকল কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত অংশে তাৎক্ষনিক ভাঙন রোধে সেখানে জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে।
আতিয়ার রহমান নড়াইল থেকে জানান, মহিষাহপাড়া, মঙ্গলহাটা, করফা, আতোষপাড়া, শিয়রবর ও ঘাঁঘাঁ গ্রামে গত দুই সপ্তাহের মধ্যে মধুমতী নদীতে বিলীন কয়েক শত বাড়ি রয়েছে। এতে করে প্রায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে। মল্লিকপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. জিন্নাত শেখ জানান, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে এই নদী ভাঙা গড়া চলছে। আমি নিজেই নয়বার বাড়ি সরিয়েছি। আমি এখন সিএন্ডবিতে (রাস্তার পাশে) কোন রকম ঘর তুলে আছি।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) এমএম আরাফাত হোসেন বলেন, ‘নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ অনেক পরিবার আমাদের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করছেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠিয়ে দিচ্ছি। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। তারা যাতে দ্রæত ব্যবস্থা নেয় সে বিষয়েও তাগিদ দেয়া হচ্ছে।’
নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, ‘আমরা শিয়েরবর বাজার এলাকায় ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু মহিষাহপাড়া, মঙ্গলহাটা, করফা, আতোষপাড়া এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ হাট-বাজার না থাকায় কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’
বি এম হান্নান, চাঁদপুর থেকে জানান, আবারো মেঘনার ভাঙন শুরু হয়েছে চাঁদপুর শহর রক্ষাবাঁধের পুরাণবাজার হরিসভা পয়েন্টে। গত বৃহস্পতিবার ঐ এলাকায় শহর রক্ষাবাঁধের প্রায় ৬০ মিটার বøকবাঁধ নদীতে তলিয়ে যায়। মুহুর্তের মধ্যে সেখানে ভাঙন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পাউবো চাঁদপুরের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী ভাঙন স্থল পর্যবেক্ষণ করে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, হরিসভা কমপ্লেক্সে সাতটি মন্দির। আশপাশে বিরাট বসতি। রাস্তা-ঘাট, মসজিদ-মাদ্রাসা ও গণকবর রয়েছে। নদী ভাঙনের ভয়াবহতা নিয়ে এলাকাবাসী খুবই শঙ্কিত। পানি উন্নয়ন বোর্ড সঠিকভাবে কাজ না করায় শহর রক্ষা বাঁধ বার বার ভাঙছে এমন অভিযোগ তাদের। এতোগুলো পরিবার কোথায় থাকবে, কোথায় যাবে এ নিয়ে জনমনে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান বলেন, বর্ষা মৌসুমে পুরাণবাজার এলাকায় নদীর পরিস্থিতি ভালো না। প্রবল ঘূর্ণিস্্েরাত প্রবাহিত হয়। হরিসভা পয়েন্টে নদীর গভীরতা অনেক। সেখানে স্কাউরিং বেশি হওয়ায় প্রায় ৬০ মিটার বøক বাঁধে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে স্টকে রাখা বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলছি। সিসি বøকও ফেলা হবে। সরকার অপ্রতুল বরাদ্দ দেয়ায় পুরাণবাজারের নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী কাজ করাতে পারছেন না বলেও জানান পাউবোর এ কর্মকর্তা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘুম

২ সেপ্টেম্বর, ২০২২
২৭ আগস্ট, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ