পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের জনগণের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলো আগামীতে জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে। তারই যেন প্রাথমিক প্রদর্শনী হয়ে গেলে নাগরিক ঐক্যের আলোচনা সভায়। জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ওই সভায় বি. চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন থেকে শুরু করে ২০ দলীয় জোটের মির্জা ফখরুল, জেনারেল (অব) ইব্রাহিম পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন বাম ও ডানপন্থী দলগুলোর কিছু নেতা। কেউ কেউ আবার ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবেন কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বক্তারা কী বলেন তা শুনতে এসেছিলেন। যারা বক্তৃতা করেছেন তাদের সবার কন্ঠে এক আওয়াজ ধ্বনিত হয়েছে। বক্তাদের মুখে যে ঐক্যের সুর এবং উপস্থিতির মধ্যে যে স্পৃহা তাতে মনে হচ্ছে মাস খানেকের মধ্যে ঐক্য প্রক্রিয়ার পালে লাগতে পারে নতুন হাওয়া। সৃষ্টি হতে পারে ঐতিহাসিক রাজনৈতিক মেরুকরণ।
যুক্ত ফ্রন্ট- গণফোরামের ঐক্য এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। এ ছাড়া বামপন্থী ৮টি দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য জোট জাতীয় ঐক্যে সরাসরি যুক্ত না হলেও একই দাবিতে রাজপথে যুগপৎ কর্মসূচী পালন করবে। নূন্যতম পাঁচ দফা দাবির ভিত্তিতে তারা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আলোচনা সাপেক্ষে এ দাবি সাত দফায়ও রূপ নিতে পারে। ঐক্য প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, চলতি মাসেই নির্বাচন কমিশন পুণর্গঠনের দাবিতে কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামবে ‘জাতীয় ঐক্য’। নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচী ঐক্যবদ্ধভাবে পালনের মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্যের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। এ ছাড়া গত বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত এক সেমিনারে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের বক্তব্য থেকেও জাতীয় ঐক্যের প্রাথমিক যাত্রার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যেসব দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলো হচ্ছে ১. নির্বাচনের তফিসল ঘোষনার আগে সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে ২. নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে ৩. নির্বাচন কমিশন পুণর্গঠন করতে হবে ৪. নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতারোধে নির্বাচনের ১০দিন আগে থেকে পরবর্তী ১০দিন ম্যাজিস্টেসি পাওয়ারসহ সেনা মোতায়েন এবং ৫. বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় ও পুলিশি হয়রানি এখন থেকে বন্ধ করতে হবে, রাজনৈতিক হয়রানিমূলকভাবে আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে এ দাবিগুলো সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চলতি মাসের শেষের দিকে শুরু হবে। এরপর সময় এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় চূড়ান্তভাবে নতুন কর্মসূচী ঘোষিত হতে পারে।
জাতীয় ঐক্যের অন্যতম উদ্যোক্তা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় এ বিষয়ে বলেছেন, আজকের এই সভায় যে উপস্থিতি তাতে জাতীয় ঐক্যের সূচনা হয়েছে। জাতীয় ঐক্য গড়ার লক্ষে যে আয়োজন তাতে আমি আনন্দিত। নির্ভেজাল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আমেদের এই জাতীয় ঐক্য। এই আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার থেকে জাতি মুক্তি লাভ করবে। ঐক্যবদ্ধ হলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমাদের সৌভাগ্য যে বাংলাদেশের জনগণ নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। আমরা এই আয়োজন থেকে বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় ঐক্য গড়ে একটি স্বাধীন, প্রভাবমুক্ত এবং কার্যকরী নির্বাচনের লক্ষে কাজ করে যাবো। বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচন হলে তাদের মৌলিক ক্ষমতার প্রমাণ হবে। এজন্য অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন হতে হবে। এইভাবে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা বাংলা ভাষা এবং স্বাধীনতাসহ সকল মৌলিক অধিকার পেয়েছি।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ঐক্য প্রক্রিয়ার আরেক অন্যতম নেতা বিকল্পধারার প্রধান সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, বর্তমান স্বৈরাচারে কবল থেকে মুক্ত হতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই। আজকের এই আলোচনা সভা ঐক্যের প্রাথমিক সূচনা ধরে নেয়া যায়। আমাদের প্রধান দাবি নিরপেক্ষ নির্বাচন। নির্বাচন নিরপেক্ষ না হলে গণতন্ত্র হবে না। গণতন্ত্রের মূল শর্ত নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। তার জন্য নির্বাচনের সময়ে এমন সরকার হবে যে সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। এসব দাবিতে এবার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় ঐক্যের আহবান জানিয়ে বলেন, আজকে যারা এখানে এসেছেন, নেতৃস্থানীয় আমাদের বড় ভাইরা এসেছেন। তাদের কাছে এই জাতির দাবি অনেক বেশি। আপনারা এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সামনে ছিলেন। এই স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম আপনারা দিয়েছেন, সেই দেশটি আজ ডুবে যাচ্ছে নিমজ্জিত হচ্ছে। একে তোলার চেষ্টা করুন। সবাই মিলে আসুন আমরা এক সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই বাংলাদেশকে তুলে ধরি।
মির্জা ফখরুল বলেন, দশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। আমরা তার কথা শুনে সেই জাতীয় ঐক্য তৈরি করবার জন্যে আমরা সকলের কাছে যাচ্ছি, বলছি। এখানে ধর্ম-বর্ণ-মত সব কিছুকে দূরে রেখে দেশকে রক্ষা করবার জন্যে, দেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করবার জন্যে, মানুষের গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার জন্যে আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। তিনি বলেন, আমরা ন্যুনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে ঐক্য চাই। বাংলাদেশকে রক্ষা করি। আমরা বার বার করে বলেছি, আমাদের দেশনেত্রীসহ সকল রাজবন্দি রাজনীতির জন্য যারা কারাগারে আছেন তাদের সকলকে মুক্তি দিতে হবে, যত মিথ্যা মামলা আছে সব প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা বলেছি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে, নির্বাচনের সময়ে সেনা বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। সেজন্য আমরা চেষ্টা করছি. সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সত্যিকার অর্থে একটা নতুন বাংলাদেশ, স্বপ্নের বাংলাদেশ, একাত্তর সালে যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম সেই স্বপ্নের বাংলাদেশকে আমরা তৈরি করতে চাই।
জেএসডি‘র সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, দমনপীড়ন করে আর একতরফা ও একদলীয় নির্বাচন এদেশে হতে দেয়া হবে না। সরকারকে বলতে চাই, এখনো সময় আছে, নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। তা না হলে এই জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে যে গণআন্দোলন গড়ে উঠবে তাতে সরকারের শোচনীয় পতন কেউ ঠেকাতে পারবে না।
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ন মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সরকার জুলুমবাজ-চোর। সারাদেশ লুটেপুটে খেয়েছে। শুরু করেছিলো শেয়ারবাজার দিয়ে, তারপরে ব্যাংক খেয়েছে, মানুষের ব্যবসাপতি বন-জঙ্গল, জায়গা-জমি,কয়লা-পানি পাথর, সোনা সব কিছু খেয়েছে। কোন কিছু বাকী নেই। প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনার জবাবে মান্না বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী আফসোস করেন আওয়ামী লীগের পক্ষে কিছু লিখতে বললে মাহমুদুর রহমান মান্নার সে কী কান্না ? আমি কাঁদি, প্রধানমন্ত্রীকে দেখে কাঁদি, বেশি কাঁদি আওয়ামী লীগকে দেখে। এই আওয়ামী লীগকে আমি যা দেখেছি ওই আওয়ামী লীগ নাই। আমি লিখতে পারি, তারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছিলো, ৬ দফা দিয়েছিলো, বঙ্গবন্ধু লড়াই করেছিলেন, জেল খেটেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো। সেই যুদ্ধে নেতৃত্বে দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ। এখন যদি লেখি তাহলে এই দল ২০১৪ সালে সারাদেশের লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষের ভোট খেয়ে ফেলেছে। ওরা ভোট চুরি করেছে, টাকা চুরি তো করেছে। এই সরকারকে এখন দেশের মানুষ আর চায় না। মান্না বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আমাদের ঐক্য হয়েছে। এই দাবিতে আমরা রাজপথে নামবো অপেক্ষা করুন। সবাই মিলে রাস্তায় নামতে হবে। একবার যদি রাজপথে নামতে পারেন একত্রে তাহলে অত বড় শক্তিধর প্রাণীও ধীরে ধীরে তার ফানা নামাবে। সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের সামনে বিজয় ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। হারবার কোনো উপায় নেই। আমরা পরাজয় স্বীকার করতে পারি না স্বৈরাচারের কাছে, আমরা অত্যাচারে কাছে মাথা নত করতে পারি না।
জাতীয় ঐক্যের সাথে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যজোটের নেতা গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকী ইনকিলাবকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কয়েকটি দফা সামনে নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষনা করেছি। এর মধ্যে রয়েছে তফসিল ঘোষনার আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবী। নির্বাচন কমিশন পুর্নগঠনের দাবীসহ আরও কয়েকটি সাংবিধানিক সংস্কারের দাবি রয়েছে। আমাদের এ সব দাবির সাথে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান আমরা জানিয়েছি। এখন যদি এই আন্দোলনের ইস্যু অভিন্ন হয়, অন্যরাও এ সব ইস্যু নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষনা করেন তাহলেতো যুগপৎ আন্দোলন হতেই পারে। নির্বাচন কমিশন পুর্নগঠনের দাবিতে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর আমাদের কমিশন ঘেরাও কর্মসূচী আছে। এখন যদি অন্যরাও এ ইস্যুতে কর্মসূচী ঘোষনা করে তাহলে যুগপৎ আন্দোলন হতেতো কোন বাধা নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।