পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে অর্থমন্ত্রী ভুল করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। এদিকে নিজের দেয়া একদিন আগের বক্তব্য থেকে সরে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ২০ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার ও ২৭ ডিসেম্বর ভোট হতে পারে বলে বুধবার যে মন্তব্য করেছি সেটি অনুমান থেকে। তবে ডিসেম্বরে নির্বাচন হচ্ছে এটি মোটামুটি চূড়ান্ত। অপরদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ২৭ ডিসেম্বর নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ, এটি নিশ্চিত হলেও তা বলার দায়িত্ব আমাদের না, এটি নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশনকে বিব্রত করা আমাদের কাজ না। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনই বলবে, কবে নির্বাচন হবে। এটি বলার দায়িত্ব সরকার কিংবা সরকারের কোনো মন্ত্রীর নয় কিংবা দলের কোনো নেতার না। তাই আমাদের যার যার এরিয়ার মধ্যে সীমিত থেকে রেসপনসিবল ভূমিকায় থাকলে দেশ, গণতন্ত্র ও সরকারের জন্য ভালো। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গত বুধবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ‘আগামী ২০ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। আর ২৭ ডিসেম্বর নির্বাচন হতে পারে’ এ বিষয়ে এসব কথা বলেন তাঁরা।
রাজধানীর হোটেল র্যাডিসনে দক্ষিণ এশিয়ার নির্বাচন কমিশনের সংগঠন ফোরাম অব ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিস অব সাউথ এশিয়া (এফইএমবিওএসএ-ফেমবোসা) এর দুই দিনব্যাপী সম্মেলন শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে
কে এম নূরুল হুদা বলেন, আমরা তাকে বলিনি। তার এভাবে বলা উচিৎ হয়নি। আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। মিডিয়ার সামনে বললাম, অর্থমন্ত্রী ভুল করেছেন। এটা তার কাজ নয়। এভাবে বলা তার ঠিক হয়নি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সক্ষম।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে সিইসি ফেমবোসা সম্মেলন সম্পর্কে জানান, ৯ দফা ঢাকা ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ সম্মেলন শেষ হয়েছে এবং বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তিনি ( কে এম নূরুল হুদা) এর চেয়ারপারসনের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি জানান, ফেমবোসার আগামী সম্মেলন ভুটানে অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে গতকাল সচিবালয়ের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গ্রামীণ ব্যাংকের শেয়ারের ডিভিডেন্ড প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি বুধবার নির্বাচনকালীন সরকার ও ভোটের তারিখের বিষয়টি মোটামুটি অনুমান করে বলেছি। নির্বাচনকালীন সরকার তিন মাস আগে হতে হয়। সে হিসেবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে কেউ বলছেন সেপ্টেম্বরের শেষে, কেউ বলছেন অক্টোবরের শুরুতে। ওই সময়টাকে মাথায় রেখে আমার ধারণা আগামী ২০ দিনের মধ্যেই এটা হতে পারে। তবে এটি একেবারেই প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তিনিই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আর ভোটের তারিখের বিষয়টাও আমার অনুমান। আমার ধারণা অমন একটা তারিখেই নির্বাচন হতে পারে। তবে এটা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। নির্বাচন কমিশন ভোটের তারিখ ঘোষণা করবে। একই সঙ্গে আমি আর নির্বাচন করবো না এটা মোটামুটি ঠিক হয়ে গেছে। তবে আমার নির্বাচনকালীন সরকারে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়টিও চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী।
ডিভিডেন্ড প্রদানের অনুষ্ঠানে শেয়ার হোল্ডারদের হাতে ডিভিডেন্ড হস্তান্তর করেন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাবুল সাহা। এ সময় ৬ কোটি ২৪ লাখ টাকার ডিভিডেন্ড হস্তান্তর করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এমডি হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকে রাখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব ছিল। সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র এখনও বাংলাদেশকে কোটামুক্ত জিএসপি সুবিধা দেয়নি। তবে এরপরেও আমরা এগিয়ে গিয়েছি। গ্রামীণ ব্যাংকও এখন ভালো চলছে। এটা নিয়ে কোনও সমস্যা নাই।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি আর নির্বাচন করছি না এটি মোটামুটি চূড়ান্ত। যদি নির্বাচন না করেন তাহলে ওই আসনে কাকে রেখে আসছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার ভাই মোমেন (এম এ মোমেন)। তার প্রতি আমার আস্থা ও সমর্থন আছে। তবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি মনোনয়ন বোর্ড এটি চূড়ান্ত করবে। আমি আশা করবো তাকে ওই আসনে মনোনয়ন বোর্ড মনোনীত করবে।
অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির নেতাদের পাশাপাশি ড. কামাল, বি চৌধুরীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতা ও দলগুলো যে দাবি তুলেছে সে বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর অভিমত জানতে চান সাংবাদিকরা। এর জবাবে মুহিত বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি ‘অবান্তর, অবাস্তব এবং বোগাস।’ কারণ, ২০০৮ সালের নির্বাচনে সব দল অংশ নিয়েছে। সেখানে নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন ছিল না। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আনফরচুনেটলি একটি বড় দল অংশ নেয়নি। সেটি তাদের বিষয়। কিন্তু, ওই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে তো প্রশ্ন তোলেনি। কাজেই তাদের এ ধরনের প্রস্তাব অবাস্তব এবং অবান্তর।’
নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবে ২৫ জানুয়ারি। এর আগেই আরেকটি সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে যাবে। আর নতুন সংসদ নির্বাচিত হলে আগের সংসদ অটোমেটিক ভেঙে যায়। তাই সংসদ ভেঙে দেওয়ার কোনও দরকার দেখি না।
অপরদিকে গতকাল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাজশাহী মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে অর্থমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে সাংবাদিকদের কাছে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার কখন হবে, আকার কী হবে, আকারে কতটা ছোট হবে, মন্ত্রিসভায় কতজন থাকবেন, তা একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া এ বিষয়ে আর কেউ জানেন না। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনিও জানেন না।
জাতীয় ঐক্যে আওয়ামী লীগকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানালে যাবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ঐক্যে বিশ্বাসী। জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন হলে আওয়ামী লীগ ডাক দেবে। এখন আওয়ামী লীগ জনগণের ঐক্য চায়। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা গণতন্ত্রের বিষয়। নির্বাচন মানেই হলো প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্ব›িদ্বতা। আওয়ামী লীগ একটি প্রতিদ্ব›িদ্বতাহীন নির্বাচনে যাচ্ছে এমন তো নয়। ঐক্যও হতে পারে। নির্বাচন এলে জোট হবেই।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দল আওয়ামী লীগ। তাই এ বড় দলের সমর্থক ও ভোটারদের বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হাস্যকর। আওয়ামী লীগ ছাড়া ১৪ দল আছে। এ দলগুলোকে বাদ দিয়ে যেটা হবে, তা হলো সাম্প্রদায়িক ঐক্য। জাতীয় ঐক্যের নামে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ হচ্ছে। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হয় নাকি? জাতীয় ঐক্য এ শব্দগুলো ব্যবহার না করাই ভালো। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি একমাত্র বিএনপির পক্ষে শোভা পায়। আওয়ামী লীগের ইতিহাসে অনিয়ম, জালিয়াতি নেই। নির্বাচনে কারচুপি করে ক্ষমতায় গেছে বিএনপি।
সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার প্রতিযোগিতায় দলের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলায় বিচ্যুতি ঘটেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজশাহীর নেতাদের ডাকার নিশ্চয় কোনো কারণ আছে। প্রতিযোগিতা অসুস্থতা, অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় দলের নেতাদের ডাকতেই হবে। এখন সবার এমপি হওয়ার প্রতিযোগিতায় দলের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলায় বিচ্যুতি ঘটাচ্ছে। দায়িত্বশীল নেতারা যদি অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন, তাহলে কর্মীরা কী শিখবেন?
দলীয় নেতাদের আত্মঘাতী প্রবণতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী কাদের বলেন, চা দোকানে বসে গ্রæপ মিটিং করে দলের একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে প্রচারণা করেন, যেটা হওয়ার কথা ছিল বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে। এর চেয়ে আত্মঘাতী প্রচারণা আর কিছু হতে পারে না। এ আত্মঘাতী প্রবণতা বন্ধ করতেই হবে। নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, শূণ্যতা না থাকলে নির্বাচন পর্যন্ত কোনো কমিটি ভাঙা যাবে না। নতুন কোনো কমিটিও করা যাবে না। আর নিজেদের মধ্যে দলাদলি করে এক গ্রæপ আরেক গ্রæপকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা, এটি কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। বরগুনাতে একটি ঘটনা ঘটেছে এবং আরেকটি ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরে। তা দল মোটেও গ্রহণ করবে না। কারও অভিযোগ থাকলে সরাসরি লিখিত আকারে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেবে। এটি দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকেরা সমাধান করবেন।
কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ জনমতের ভিত্তিতেই মনোনয়ন দেবে। যিনি বেশি গ্রহণযোগ্য, তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে যতই প্রভাবশালী নেতা হোন না কেন, মনোনয়ন দেওয়া হবে না। নির্বাচন আর দল এক কথা না।
আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুজ্জামান লিটন, আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।