Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে ভোট রাজনীতির জোয়ার-ভাটা

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

কর্ণফুলী নদীর মোহনায় জোয়ার-ভাটার জনপদ চট্টগ্রাম। এ অঞ্চলে ভোট রাজনীতিতে কখনো দেখা যায় জোয়ার কখনো ভাটা। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ঘুরছে রাজনীতির চাকা। নির্বাচনী রাজনীতিতে আপাতত যেন ভাটার টান। প্রধান দুই পক্ষ আওয়ামী লীগ আর বিএনপি এবং তাদের সমর্থিত জোট-মহাজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তৎপর। ঘরে-বাইরে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসছে সংসদ নির্বাচন।
তবে প্রথম সারির নেতৃবৃন্দ এবং তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের নির্বাচনমুখী রাজনীতি নিয়ে মাঠে-ময়দানে সরব পদচারণা এখন তেমন চোখে পড়ছে না। কয়েক মাস আগেও ছিল বেশ চাঙ্গা ভাব। তৃণমূলের কর্মীদের মাঝে আগামীতে নির্বাচনী পরিবেশ কেমন হবে তা নিয়েই ঘুরেফিরে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে। তাছাড়া নির্বাচন নিয়েও জনমনে রয়েছে নানামুখী সন্দেহ-সংশয়। এ অবস্থায় চট্টগ্রামে এবার পবিত্র ঈদুল আজহার আগে থেকেই ভোট রাজনীতির মন্দাভাব এখনও কাটেনি।
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের নেতা ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফিরিস্তি এবং তার সুফল স্থানীয় সভা-সমাবেশে এলাকাবাসীর কাছে তুলে ধরছেন। অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচনী লড়াইয়ের পাশাপাশি আন্দোলনমুখী প্রস্তুতি অব্যাহত রেখেছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি, অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ, দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা ও হয়রানি বন্ধের বিষয়গুলো সামনে চলে এসেছে। এর পাশাপশি উভয় প্রধান দল ও জোট-মহাজোট নিজেদের ঘর গুছিয়ে সাংগঠনিক অবস্থান সংহত করার প্রয়াস চালাচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন ‘দুয়ারে কড়া নাড়ছে’। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১৯টি নির্বাচনী এলাকাওয়ারি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌঁড়-ঝাঁপ চলছে। কেউ এগিয়ে আবার কেউবা পিছিয়ে। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় ও জোটগত মনোনয়ন আয়ত্তে আনার জোরালো প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। ধর্না দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে ঘন ঘন হাজির হয়ে। শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন লাভের দৌড়ে কার ভাগ্য খুলবে কার কপাল পুড়বে তা নিয়ে সবাই টেনশনে।
অভিজ্ঞ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকগণ জানান, চাটগাঁর মানুষ বেশিমাত্রায় রাজনীতি সচেতন। নির্বাচনী পরিবেশ ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকান্ড নিয়ে জনগণের মাঝে অনেক প্রশ্ন ও সংশয় থাকায় আপাতত চট্টগ্রামে রাজনীতি ঝিমিয়ে আছে। তবে সবকিছু যখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট ও খোলাসা হবে তখনই নির্বাচনমুখী রাজনীতি নতুন উদ্যমে গা-ঝাড়া দিয়ে উঠবে। এ মুুহূর্তে স্থানীয় সাধারণ মানুষজন নিজ নিজ এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা, তাদের অতীত-বর্তমান ভালমন্দ ও এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে আলোচনায় মশগুল। তারা নিবিড়ভাবে পরখ করছে রাজনীতির গতি-প্রকৃতি।
চট্টগ্রাম মহানগরীর তিনটি আসন, চট্টগ্রাম জেলায় ১৩টি আসন এবং তিনটি পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির তিনটি আসন মিলে এ অঞ্চলে নির্বাচনী আসন মোট ১৯টি। বেশ কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতৃত্বে তাদের জোট-মহাজোটের প্রার্থী মনোনয়ন অনেকটা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। যেসব আসনে মনোনয়ন ঠিকঠাক না হওয়ার কারণে প্রার্থী-জট তৈরি হয়েছে সেসব আসনে মনোনয়ন নিশ্চিত করে নেয়া এবং নিজেদের এলাকায় অবস্থান ‘পাক্কা’ করতে অনেকেই তৎপর।
আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও তাদের সমর্থিত জোট-মহাজোটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী, মনোনয়ন প্রত্যাশী সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিগত ২০০১ সালের নির্বাচনী ফলাফলকে আবারো সামনে মেলে ধরেই কৌশলী হিসাব-নিকাশের অঙ্ক কষছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের সমর্থিত জোট অংশগ্রহণ করেনি। অনেক আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী জয়ী হন খালি মাঠে গোল দিয়ে। সেহেতু এবার আওয়ামী লীগ ও তাদের মহাজোট শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে মোকাবিলায় নতুন মুখ প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে। এ কারণে আওয়ামী লীগকে প্রার্থী-জট সমস্যাও অতিক্রম করতে হচ্ছে। দল ও জোটগত মনোনয়ন প্রশ্নে দুই পক্ষেই স্থানীয় বিরোধ, কলহ-কোন্দল দিন দিন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। সেই সাথে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঘিরে চলছে নানামুখী মেরুকরণ।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সবক’টি এলাকায় প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ জনপ্রতিনিধি, আলেম-মাশায়েখগণ, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কদর বেড়ে গেছে। তাদের কাছে গিয়ে সমর্থন ও দোয়া চাইছেন সম্ভাব্য প্রার্থী বা মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এলাকাওয়ারি উন্নয়ন, আইন-শৃঙ্খলা, মাদক নেশা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন নাগরিক সমস্যার পরিকল্পিত সমাধানের আগাম আশ্বাসও তারা দিয়ে যাচ্ছেন।
নির্বাচনী রাজনীতির প্রসঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বিএনপি আন্দোলন এবং নির্বাচনের জন্য সবসময়েই প্রস্তুত। দলের সর্বস্তরের কর্মীরা সক্রিয় রয়েছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিএনপি অনেক শক্তিশালী। বিএনপির ঘাঁটি চট্টগ্রাম। জনগণ চায় দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন। নির্বাচনের সুষ্ঠু নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত থাকলে বিএনপি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের জনসমর্থন নেই। তাই জনগণকে তাদের ভয়। তাদের নির্বাচনী তৎপরতা নেই। বরং বিএনপির নিরীহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করতেই তৎপর।
আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রদূত নুরুল আলম চৌধুরী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে চট্টগ্রামে অনেকগুলো উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পন্ন হয়েছে। অনেক প্রকল্প চলমান রয়েছে। যার সুফল ভোগ করছে চট্টগ্রামবাসী। বন্দরনগরীর গুরুত্ব অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে জনগণ উন্নয়নের পক্ষে আওয়ামী লীগের পাশেই আছে। অতীতে বিএনপি চট্টগ্রামের উন্নয়ন ও নাগরিক সমস্যা সমাধানের ওয়াদা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল। তিনি জানান, দল ও মহাজোটের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে তৎপর রয়েছে। তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় কার্যক্রম এগিয়ে নিতে দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। চট্টগ্রামে উন্নয়নের ধারার পক্ষেই জনসমর্থন থাকবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ