Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চলে নির্বাচনী হাওয়া

মহাজোটে সক্রিয় একাধিক প্রার্থী আন্দোলনের তাগিদ ২০ দলীয় জোটের

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মাদারীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২৩টি সংসদীয় আসনে মহাজোটের প্রার্থীরা আবারো সক্রিয় হয়ে উঠছে। এলাকায় বিভিন্ন ব্যানার পোস্টার নিয়ে জানান দিচ্ছেন তাদের উপস্থিতি। যদিও গত পাঁচ বছরে এদের অনেকেরই রাজনীতির মাঠে দূরের কথা দলের সাথেও ছিলো না তেমন যোগাযোগ। অপরদিকে বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় আর কোন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার পক্ষে শক্ত অভিমত রয়েছে ২০ দলীয় জোটের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। তাদের মতে, বরিশালসহ ৩টি সিটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় প্রমান করে বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
তবে আন্দোলনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারেও তাগিদ রয়েছে বিরোধী জোটের মাঠ পর্যায়ে। এছাড়া মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদসহ আরো বেশ কয়েকটি দলের পক্ষ থেকেও দলীয় প্রতীক ও নিবন্ধণ রক্ষায় এবার দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে ।
জানা গেছে, ‘বিরোধী জোট দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসবেনা’ এমন ভাবনা মাথায় রেখেই মহাজোটের প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুধু মনোনয়ন লাভের জন্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, ‘এসব আগ্রহী প্রার্থীদের অনেকেই ইতোমধ্যে এমন ধারণাও পোষণ করতে শুরু করেছেন যে, শুধু মহাজোটের মনোনয়ন লাভ করলে সংসদে বসতে আর কোন বাধা থাকছে না’। তবে আসন্ন নির্বাচন যেভাবেই হোক না কেন,  মহাজোটের সম্ভাব্য প্রার্থীই এলাকার চেয়ে কেন্দ্রে লবিং-এ এখন বেশি ব্যস্ত। এদের বেশীর ভাগই এলাকায় নেত্রীর ছবিসহ পোস্টার, ব্যানার-ফেস্টুনসহ নানামুখী প্রচারণাও শুরু করেছেন।
বরিশাল বিভাগীয় সদর আসনে বর্তমান এমপি জেবুন্নেছা আফরোজ তার স্বামী শওকত হোসেন হিরনের অকাল মৃত্যুতে ভোটারবিহীন উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত হন। শওকত হোসেন হিরন ২০১৩-এর ১৫ জুনের সিটি নির্বাচনে ১৭ হাজারেরও বেশী ভোটে বর্তমান মেয়র আহসান হাবীব কামালের কাছে পরাজিত হলেও ২০১৪-এর নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় এমপি হন। ১৯৭৩ সালের পরে কোন নিরপেক্ষ নির্বাচনে বরিশাল সদর আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হতে পারেন নি।
আসন্ন নির্বাচনে এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন বীর বিক্রম এ বছরের শুরু থেকে সক্রিয় রয়েছেন। প্রথমে তিনি মেয়র পদে আগ্রহী থাকলেও সে পদে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর জ্যেষ্ঠ পুত্র সাদিক আবদুল্লাহর প্রতি দলীয় নেতা-কর্মীদের সমর্থন ভারি দেখে তিনি এখন এমপি পদে আগ্রহী। মাহবুব উদ্দিন ইতোপূর্বে বরিশাল সদর আসনে এমপি ছাড়াও অধুনালুপ্ত পৌরসভার চেয়ারম্যান পদেও নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। ২০০১-এর নির্বাচনে তিনি আদি নিবাস মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী থেকে নির্বাচন করেও পরাজিত হন। ২০০৮ সালে আবার বরিশালে ফিরে এসে সদর আসন থেকে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে অনেকদিন নিষ্ক্রিয় ছিলেন। এ আসনে সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহিদ ফারুক শামিমও আগ্রহী। তবে বর্তমান এমপি মনোনয়ন নিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করলেও শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাবেন বলে ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে।
অপরদিকে উজিরপুর-বানরীপাড়া নিয়ে বরিশাল-২ আসনে শের এ বাংলার দৌহিত্র ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ.কে ফয়জুল হকের ছেলেও সক্রিয় রয়েছেন। বাবুগঞ্জ-মুলাদী নিয়ে বরিশাল-৩ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন আবার ফিরে আসবেন কিনা তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। ঐ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমান এমপি টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে মহাজোট ছাড়াও নিজ দলেই মতবিরোধ রয়েছে। বরিশাল-৪ আসনের বর্তমান এমপি পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে সক্রিয় জতীয় পার্টি থেকে দলে ফেরা একটি প্রভাবশালী গ্রুপ। বরিশাল-৬ আসনটি রয়েছে ঘরের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির হাতে। পার্টির মহাসচিবের সহধর্মীনি রত্মা আমীনকে এবার ছাড় দিতে নারাজ মহাজোটের মূল শরিক দলের মাঠ পর্যায়ের বেশীরভাগ নেতা। তবে এ আসনেও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। পটুয়াখালী-১ আসনটিতেও জাতীয় পার্টির রুহুল আমীন হাওলাদারকে আর ছাড় দিতে নারাজ মহাজোটের মূল শরিক দল। এ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকলেও ঘরের বিরোধী দলকে ছাড় না দিতে একমত সকলে।
পটুয়াখালীর বাউফল আসনে বর্তমান চীফ হুইপ আসম ফিরোজের বিরুদ্ধে দলের মধ্যেই প্রতিবন্ধকতা বেশী। এছাড়াও পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা ও ঝালকাঠির সংসদীয় আসনগুলোতে মহাজোটের মূল শরিক দলের মধ্যই গৃহবিবাদ ক্রমে প্রকাশ্যে আসছে। এমনকি পিরোজপুর-১ আসনে বর্তমান এমপি আবদুল আউয়ালের বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে আপন সহদর আবদুল মালেক মাঠে প্রচারণা শুরু করেছেন। পিরোজপুরের অন্য দুটি আসনেও মহাজোটের শরিক দল ও মূল শরিকের মধ্যে একাধিক প্রার্থী সক্রিয় হয়ে উঠেছেন নির্বাচনী মাঠে।
মাদারীপুরের দুটি আসনেই দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক চাপা ক্ষোভ রয়েছে। কালকিনী আসনের এমপি সেচ্ছাসেবক লীগের বাহাউদ্দিন নাছিম নিজেও সদর আসনের এমপি শাহজাহান খানের বিরুদ্ধে দলীয় ফোরামে সোচ্চার। তবে বাহাউদ্দিন নাছিমের নিজ আসনেও দলীয় আরো প্রার্থী মাঠে প্রচারণায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন ইতোমধ্যে। তবে ভোলায় তোফায়েল আহমদ ও ঝালকাঠিতে আমীর হোসেন আমুর আসন দুটিতে কোন প্রতিদ্ব›দ্বী নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ