পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মালয়েশীয় সরকার অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার থেকে গ্রেফতার অভিযান শুরু করেছে। এতে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত একটা বড় অংশ গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছে। বিশেষ করে যেসব অবৈধ অভিবাসী কৃষিকাজ এবং অবকাঠামো নির্মাণ কাজে নিয়োজিত তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযান তীব্র করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের হাজার হাজার শ্রমিক যাদের যথাযথ কাগজপত্র নেই, তারা গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে আছে। মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ এদের ব্যাপারে খুবই কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ইতোমধ্যে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের সাথে যে জি টু জি-প্লাস নামে এসপিপিএ সিস্টেমের আওতায় শ্রমিকদের নিয়োগ দিত, তা স্থগিত করেছে। দেশটির সরকার তা বাংলাদেশকে জানিয়েও দিয়েছে। উল্লেখ্য, বর্তমান পদ্ধতিতে যে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ করা হত তা মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ বাতিল ঘোষণা করেছে। সরকার হয়তো নতুন কোনো পদ্ধতি চালু করবে। তবে তাতে অনেক সময় লাগবে। এতে যারা অবৈধ বা যথাযথ কাগজপত্র না নিয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে, তারা বিপদে পড়বে। গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করবে। তাদের দুঃখ-দুর্দশার অন্ত থাকবে না। সবচেয়ে বড় বিষয়, দেশের ভাবমর্যাদা তাতে মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হবে।
মালয়েশয় সরকার অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা তাদের একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। কোনো দেশই চাইবে না তার দেশে অবৈধ অভিবাসী বসবাস বা কাজ করুক। সে চাইবে তাদের বিতাড়িত করতে। এটা স্বাভাবিক। এর দায় পুরোপুরি অবৈধ অভিবাসী এবং যারা তাদের যথাযথ কাগজপত্র না দিয়ে পাঠিয়েছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমিক ও অভিবাসীদের ক্ষেত্রে এমন অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলেই আজ তারা বিপাকে পড়েছে। এতে তাদের কোনো দোষ না থাকলেও তাদের যেসব এজেন্সি পাঠিয়েছে, তারা দায়ী। বাংলাদেশের ১০টি এজেন্সি, যারা একচেটিয়াভাবে শ্রমিক প্রেরণ করেছে, এর দায় তাদের উপরই বর্তায়। নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং নির্ধারিত অর্থের চেয়ে প্রায় দশগুণ বেশি অর্থ নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছে। এর মধ্যে কাগজপত্রে ঘাপলাও রয়েছে। যেখানে ৪০ হাজার টাকায় মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা, সেখানে অনেকের কাছ থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বলা বাহুল্য, এর দায় প্রবাস কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও এর দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীও এড়াতে পারেন না। এমন অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্তদের আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে বায়রার সাবেক অনেক নেতা মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে আছে। তারা সিন্ডিকেট করে শ্রমিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় যেমন করেছে, তেমনি তাদের যথাযথ কাগজপত্র দিয়েও পাঠায়নি। তারা গত দেড় বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় পৌঁছে শ্রমিকরা এখন মহাবিপদে। তারা একূল-ওকূল দুই কূলই হারাতে বসেছে। এই সিন্ডিকেট যে শুধু নিজেদের স্বার্থে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড় একটি বাজার নষ্ট করে ফেলল, এর দায় নিশ্চিতভাবেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও এর দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর ওপর বর্তায়। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবার কবে খুলবে তা এখন অনিশ্চিত। তবে সেখানে যারা ধরপাকড়ের শিকার হবে তাদের কী হবে এবং যারা এদের যথাযথভাবে না পাঠিয়ে বিপদে ফেলেছে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রীর কোনো বক্তব্য নেই। সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে সে ভূত যে তাড়ানো যায় না, তা সহজে অনুমেয়।
মালয়েশিয়ায় যে হাজার হাজার বাংলাদেশি অভিবাসী যথাযথ কাগজপত্রের অভাবে গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছে, তাদের ব্যাপারে সরকারের কী ভূমিকা তা এখনও স্পষ্ট নয়। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, এসব হতভাগ্য এবং নিঃস্ব অবৈধ অভিাবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ ক্ষেত্রে উদ্যোগী হয়ে মালয়েশিয়ান সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনা করে সমস্যার সুরাহা করা জরুরী। তা নাহলে হাজার হাজার শ্রমিক যেমন মহাবিপদে পড়বে, তেমনি দেশের ভাবমর্যাদাও ভুলুণ্ঠিত হবে। অন্যদিকে যারা এসব শ্রমিকদের যথাযথ কাগজপত্র না দিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে এবং অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম বিশাল শ্রমবাজার হারানো এবং দেশের বদনাম করে এত বড় ক্ষতি যারা করেছে, তাদের ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিশাল এই শ্রমবাজার অটুট রাখতে এবং সেখানে যথাযথভাবে শ্রমিক পাঠাতে সতর্ক হতে হবে এবং সৎ ও দায়িত্বশীল এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে শ্রমিক পাঠানোর মাধ্যমে দেশের সুনাম ফিরিয়ে আনার কার্যকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।