পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ব্যাংকগুলো থেকে ৮৪ হাজার ৫০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা পেয়েছেন খেলাপি গ্রাহকরা। এসব গ্রাহক নির্ধারিত সময়ে এই পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করেননি। অথচ তাদের খেলাপিও বলা যাচ্ছে না। ব্যাংকাররা বলছেন, প্রভাবশালী গ্রাহকদের চাপের মুখে পুনঃতফসিল সুবিধা দিতে বাধ্য হচ্ছে ব্যাংক।
এমনকি একই গ্রাহকের কোনও কোনও ঋণ ১০ বারও পুনঃতফসিল করতে হয়েছে। এরপরও এসব গ্রাহকের কাছ থেকে ব্যাংকের টাকা আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নেওয়ার কারণে আরও এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বছরের পর পর আদায় করতে পারছে না ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকের টাকা ফেরত না দেওয়ার সংস্কৃতি বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যেই বেশি। তারাই টাকা ফেরত না দেওয়ার ব্যাপারে সব সময় টালবাহানা করে। পুনঃতফসিল করার চেষ্টা করে। উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে। আবার ব্যালান্সশিটে খেলাপি ঋণ কম দেখাতে গিয়েই ব্যাংকগুলো নিজেরাই ঢালাওভাবে বড় কিছু গ্রাহককে ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা দিচ্ছে। দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের ঘাটতির কারণে অসৎ ব্যবসায়ী ও ব্যাংকাররা জনগণের আমানতের অর্থ তছরুপ করছেন। ভালো গ্রাহকরা ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা পেলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। তবে খারাপ গ্রাহকরা এটিকে অর্থ আত্মসাতের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। ছোট ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকেন। আবার ছোট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ব্যাংক টাকা আদায় করেও স্বস্তি পায়।
সংশ্লিষ্টরা সূত্রে জানা যায়, অসাধু ব্যবসায়ীরা কোনও টাকা জমা না দিয়েই ঋণ পুনঃতফসিল করে নিচ্ছে। অন্যদিকে বেশিরভাগ ব্যাংক এ সুযোগে খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখিয়ে নিজেদের দুর্বলতা আড়াল করছে। কোনও কোনও ব্যাংক খেলাপি ঋণের বোঝা কমাতে গণহারে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকও চাচ্ছে দেশে খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে থাকুক। এজন্য বছরের শেষের দিকে বাছবিচার ছাড়াই ঋণ পুনঃতফসিল আবেদনের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, যদি সত্যিকারের ব্যবসায়িক কারণে কারও টাকা আটকে যায়, আর ঋণ যদি পুনঃতফসিল করলে টাকাটা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে পুনঃতফসিল করতে হয়। কিন্তু ব্যাংক খাতে এখন ঢালাওভাবে পুনঃতফসিল হয়, যা হয় মূলত সময়ক্ষেপণের জন্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে দেশের ব্যাংকগুলোর ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছিল ১৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। সেখান থেকে প্রায় ২৪ শতাংশ বেড়ে গত বছর এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১৯ হাজার ১২০ কোটি টাকায়। সব মিলিয়ে গত বছর মোট ঋণের ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ পুনঃতফসিল করেছে ব্যাংকগুলো। এভাবে গত পাঁচ বছরে মোট ৮৪ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে ব্যাংক খাতে।
জানা গেছে, ২০১২ সালে মোট ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে ব্যাংকগুলো। এর পরের বছর থেকে ব্যাংকগুলোর ঋণ পুনঃতফসিলের গতি বেড়ে যায় অস্বাভাবিক হারে। ২০১৩ সালে ১৮ হাজার ২০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পেয়েছিলেন খেলাপি গ্রাহকরা। ২০১৪ সালে ১২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে ১৯ হাজার ১৪০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়।
ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ঢালাওভাবে ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা দেওয়ার পক্ষপাতী আমি নই। অনেক সময় ব্যাংকের ব্যালান্সশিট পরিচ্ছন্ন রাখতে ঋণ পুনঃতফসিল করতে হয়। তবে ক্যাশ ফ্লো দেখে তবেই গ্রাহকদের ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা দেওয়া উচিত।
ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টের তথ্য মতে, ২০১৭ সালে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের ৫৩ দশমিক ১ শতাংশই বেসরকারি ব্যাংকগুলোর। ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ ঋণ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পুনঃতফসিল করেছে। ২০১৭ সালে এই ব্যাংকগুলো ঋণের ২৩ দশমিক ২ শতাংশই পুনঃতফসিল করেছে। বিশেষায়িত দুটি ব্যাংক করেছে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ। বেসরকারি ৪০টি ব্যাংক বিতরণকৃত ঋণের ৬ দশমিক ৯ শতাংশ পুনঃতফসিল করেছে। বিদেশি ব্যাংকগুলো করেছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা, যা ব্যাংকিং খাতে ঋণের ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর বাইরে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন করে ব্যালান্সশিট থেকে বাদ দিয়েছে ব্যাংকগুলো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।