Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুলিশের সোর্সই ‘গুম’

হদিস নেই ইশরাক, মারুফ ও হাসিনের

আবদুল্লাহ আল মামুন | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

রাজধানী থেকে পুলিশের এক সোর্স নিখোঁজ হওয়ার পরে চার মাস পেরিয়ে গেলেও তার কোন সন্ধ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী ব্যক্তির পরিবার মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করলেও পুলিশ তার বিষয়ে কোন খোঁজ দিতে পারেনি। নিখোঁজ হওয়া এই যুবকের নাম রিফাত আহমেদ হৃদয় (২১)। তিনি মোহাম্মদপুরের হুমায়ন রোডের ৬/২৪ নম্বর বাসায় বাবা, মা ও স্ত্রীসহ ভাড়া থাকতেন। পরিবারের অভিযোগ, হৃদয় পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতো। দুই মাস আগেও পুরান ঢাকায় পুলিশের একটি অভিযানে হৃদয়কে দেখা গেলেও রহস্যজনকভাবে পুলিশ তাকে ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার করছে।

স্বজনরা অভিযোগে জানায়, হৃদয় শেরেবাংলা নগর ও মোহাম্মদপুর থানা এলাকার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী আর মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পুলিশকে জানাতো। গত ৫ মে’র পর থেকে তিনি আর বাসায় ফেরেননি। ওইদিন সন্ধ্যার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পায় তার স্ত্রী গোলাপ শাহ। বাসায় না ফেরায় একদিন পর স্ত্রী মোহাম্মদপুর ও শেরেবাংলানগর থানায় খোঁজ নেন। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় গিয়েও তিনি তার স্বামীর খোঁজ পাননি। পরে রিফাতের সনজু নামে এক বন্ধু তার স্ত্রীকে জানায় যে, ৫ মে সন্ধ্যার দিকে শ্যামলী শিশু মেলার সামনে একটি দোকানে হৃদয় আর তিনি এক সঙ্গে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় তাদের সামনে একটি গাড়ি থেকে তার ভেতর থেকে ৩/৪ জন সাদা পোষাকের ব্যক্তি নেমে এসে রিফাতের সঙ্গে কথা বলে। তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোক ছিল। কিছুক্ষণ কথা বলার পর ওই লোকগুলো হৃদয়কে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। তিনি ঘটনা দেখে সেখান থেকে পালিয়ে যান। বিষয়টি জানার পর স্ত্রী গোলাপ শাহ ২৮ মে মোহাম্মদপুর থানায় একটি নিখোঁজের জিডি করেন।
জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই সজীব গতকাল বলেন, হৃদয় একজন ছিনতাইকারী ও পকেটমার। সে শ্যামলী শিশু মেলা বাস স্টপেজে মহিলাদের ভ্যানিটি ব্যাগ টান দিয়ে পালিয়ে যেত। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় তিনটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে। ওই গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এক মাস আগেও হুমায়ন রোডের বিহারী কলোনীতে তাকে দেখা গিয়েছিল বলে এলাকাবাসী পুলিশের কাছে জানিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, হৃদয়ের দাদা যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। মোহাম্মদপুরের হুমায়ন রোডের ৬/২৪ নম্বর ঠিকানায় হৃদয়ের দাদা তোজাম্মেল হোসেন সপরিবারে থাকেন। রিফাতের বাবা নূর আলম সিদ্দিকী একজন সরকারী কর্মচারী। রিফাত পরিবারের অমতে বিহারী কলোনীর গোলাপ শাহ নামে এক মেয়েকে বিয়ে করার পর সেখান থেকে বের করে দেয়। এরপর রিফাত তার স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকা শুরু করেন। পুলিশের ধারণা, রিফাতকে কেউ তুলে নিয়ে যায়নি। রিফাত তার স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে থাকতে এই আত্মগোপনের নাটক করেছেন। এছাড়া সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা থেকে যেন বঞ্চিত না হন-এ জন্য রিফাতের স্ত্রী থানায় একটি জিডি করেছেন বলে এসআই জানান।
রিফাতের স্ত্রী গোলাপ শাহ বলেন, তার স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার পরে পুলিশের কাছে বহুবার গিয়ে কাকুতি মিনতি করলেও পুলিশ তার কোন খোঁজ দিচ্ছে না। হৃদয় নিখোঁজের দুই মাস পর পুরান ঢাকায় পুলিশের একটি অভিযানে তাকে দেখা গেছে এমন একটি তথ্য পাওয়ার পরে মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে তার স্বামীকে ফিরিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু পুলিশ বলছে, তার স্বামীকে পাওয়া যায়নি। স্ত্রী বলেন, আমি ধারণা করছি- ‘পুলিশই হয়তো আমার স্বামীকে গুম করেছে।’
গতকাল রিফাতের দাদা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা তোজাম্মেল হোসেন বলেন, রিফাতকে আমরা এখনও খুঁজে পাইনি। আগে আমারই কাছে থাকত সে। কিন্তু বিহারী কলোনীর এক মেয়েকে বিয়ে করে রিফাত পৃথক হয়ে যায়। তবে তার বিরুদ্ধে অনেক অপকর্মের অভিযোগ আমরা শুনেছি। সেসব অপকর্ম ঢাকতে রিফাত আত্মগোপন করেছেন কিনা- তা তিনি নিশ্চিত নন তিনি।
তিন জন এখনও ফেরেননি : এদিকে, গত ২৫ আগস্ট ধানমন্ডির স্টার কাবারের সামনে থেকে কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাক আহমেদ (২০) নিখোঁজ হন। ছুটিতে ঢাকায় বেড়াতে এসে ওই শিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়েছিলেন। এ ঘটনায় নিখোঁজ ছাত্রের বাবা তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী জামালউদ্দিন আহমেদ ধানমন্ডি থানায় একটি জিডি করেন। নিখোঁজের এক বছর পেরিয়ে গেলেও তার কোন সন্ধ্যান দিতে পারেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। ওই বছরের ৪ ডিসেম্বর বিকালে ধানমন্ডির ৯/এ নম্বর সড়কের ৮৯ নম্বর বাসা থেকে ভিয়েতনামের সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে বের হন। ওই দিন বেলজিয়াম থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল তার মেয়ে সামিহা জামানের। সামিহা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে বাবার ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোনটি বন্ধ পাওয়ায় পর তিনি একটি ট্যাক্সিতে করে বাসায় ফেরেন। তখন থেকে মারুফ জামানের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন সামিহা ধানমন্ডি থানায় একটি জিডি করেন। এ ব্যাপারে ধানমন্ডি থানার ওসি আব্দুল লতিফ বলেন, ইশরাক ও মারুফ জামান নিখোঁজের ঘটনায় দায়ের করা দুইটি জিডি তদন্ত করা হচ্ছে। তবে তাদের এখনও কোন সন্ধান পাইনি।
গত ৮ আগস্ট রাত ১০ টা ২০ মিনিটের দিকে মিরপুর ডিওএইচএস এলাকার ১১ নম্বর রোডের ৭৯২ নম্বর বাড়ির সামনে থেকে র‌্যাব-৭ এর সাবেক অধিনায়ক লে.কর্নেল (চাকরিচ্যুত) হাসিনুর রহমানকে মাইক্রোবাসে করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ডিওএইচএস এলাকার ৪ নম্বর এভিনিউয়ের ১০ নম্বর রোডের ৬৫৯ নম্বর বাড়িতে হাসিনুর রহমান সপরিবারে থাকতেন। এ ঘটনার পর তার স্ত্রী শামীমা আক্তার পল্লবী থানায় একটি জিডি করেন। গতকাল পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, নিখোঁজের ঘটনায় দায়ের করা জিডি তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা এখন পর্যন্ত তার কোন সন্ধান পাইনি।
##



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ৭:২১ এএম says : 0
    পুলিশের সোর্স গুম এটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা, এধরনের ঘটনা প্রায়ই ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরে ঘটছে। জান যায় এসব ঘটনা ঘটার কারন পকেট বানিজ্যের হিস্যা নিয়ে। জানা যায় পুলিশ তাদের সোর্সদের মাধ্যমে প্রচুর টাকা আদায় করে থাকে সেখান থেকে যতসামান্য টাকা সোর্সরা পেয়ে থাকে যানাকি তাদের জন্যে কিছুই না। এই জন্যে তারা পুলিশের চাহিদার চেয়েও বেশী টাকা মোক্কেলদের কাছ থেকে আদায় করে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ এটা জানতেও পারেনা, আবার শুনা যায় অনেক সময় পুলিশের কাছে এদের অতিরিক্ত টাকা আদায়ের ঘটনা প্রকাশ পেয়ে যায় তখনই হয় গুম কিংবা ক্রস ফায়ার। এদিকে আরো তিনটা নিখোজের কথা এখানে বলা হয়েছে তার মধ্যে একটি ঘটনা ধানমণ্ডির স্টার কাবাব ঘরের সামনে হয়েছে। এই ষ্টার কাবাব ঘরে বা এর সামনে এধরনের অনেক ঘটনা ঘটছে যানাকি পত্রিকায় আসেনা কিন্তু থানায় লিপিবদ্ধ হয় এবং ষ্টার কাবাবের মালিকের হস্তক্ষেপে সেই সব মামলা পুলিশের খাতায়ই সিমা বদ্ধ থেকে যায়। ষ্টার কাবাব ঘরের সম্পর্কে অনেক ঘটনা শোনা যায় কিন্তু পুলিশ সেসব ঘটনার নালিশ পেয়েও কোন ব্যবস্থা নেয়না বলেও অনেক অভিযোগ শুনা যায়। পুলিশদের সাথে সন্ত্রাসীদের যোগসাজোশ থাকার কারনেই এরকম ঘটনার কোন সুরাহা হচ্ছেনা বলে অনেকেই মন্তব্য করে থাকেন। ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন শহরের অধিবাসীরা পুলিশের হাতে জিম্মি হয়ে আছে এটাই সকলের অভিযোগ। দেশবাসী চান সরকার প্রধান এদেকে নজর দিক এবং পুলিশকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যে তাদেরকে আগের মত প্রশাসনের নিকট জবাবদাহি করার ব্যাবস্থা নেয়া হউক। আল্লাহ্‌ আমাদের দেশের পুলিশকে সত্য কথা বলার ও আল্লাহ্‌র নির্দেশিত সরল পথে চলার ক্ষমতা দান করুন। আমিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ