Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজনীতিতে নয়া মেরুকরণ

ফারুক হোসাইন/ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নানা মেরুকরণ। ভোটের হিসাব নিকাশ মাথায় রেখে জোট সম্প্রসারণে চলছে ব্যাপক তোড়জোড়। নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ১৪ ও বিএনপির ২০ দলীয় জোটের বাইরে গড়ে ওঠছে আরও একাধিক জোট। ৮টি বাম রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত হয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। অন্যদিকে ৫৮টি ইসলামী দল নিয়ে এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টি গড়েছে সম্মিলিত জাতীয় জোট। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন এবং যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে নতুন জোটের খবরটি। ডান-বাম সকল ঘরানার দল-মতকে নিয়ে গঠিত এই জোটকে রাজনৈতিক অঙ্গনের নতুন মেরুকরণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটের বাইরে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষে ও সুষ্ঠু নির্বাচনে আগ্রহী সকল দলই এতে অংশ নেবে বলে মনে করছেন তারা।
জোট-মহাজোট সম্প্রসারণ, বৃহত্তর ঐক্য, জাতীয় ঐক্য ইত্যাদির নানা মেরুকরণের মধ্যেই নির্বাচনের ফল ঘরে তুলতে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মতো করে ছক কষছে। শাসক দল আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকরা চাচ্ছে ক্ষমতা ধরে রাখতে। অন্যদিকে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো তা পুনরুদ্ধারের কৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে থাকা দলের নেতারাও বসে নেই। কোন দল কার সঙ্গে জোট বাঁধবে? আসন কীভাবে ভাগ হবে? এ নিয়ে ভোটের আগে জোট-মহাজোটের বাইরের দলগুলোও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। মাঠের বিরোধী দল বিএনপি যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে দফায় দফায় আলোচনা করছে। আগামী নির্বাচনে পর্দার আড়ালে দলগুলোর মধ্যে চলছে দরকষাকষি। তফসিল ঘোষণার পর রাজনীতির মেরুকরণ স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও বিশ্লেষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন জোট এখন সময়ে দাবি। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী অবস্থান এবং বিএনপির সাংগঠনিক দূর্বলতার কারণেই এটির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তবে নতুন যে জোট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে এই জোটের একাধিক হ্যাভিওয়েট নেতা থাকলেও ভোটের মাঠে তাদের দূর্বলতা আছে বলে তারা জানিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলেন, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ডা. বি. চৌধুরী, কৃষক-শ্রমিক-জনতা পার্টির সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবসহ যারা এই নতুন জোটের নেতৃত্বে যারা রয়েছেন তাদের সকলেরই ব্যক্তি ইমেজ রয়েছে। দেশের মানুষের কাছে ব্যক্তি হিসেবে তাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। দেশের সকল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও তাদের সম্মান করেন। কিন্তু সমস্যা হলো তাদের দলগুলো ভোটের রাজনীতিতে তেমন শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলতে পারেনি। তাই ক্ষমতার পালাবদল করতে হলে তাদেরকে বড় কোন রাজনৈতিক দলকে সাথে নিতে হবে। পাশাপাশি বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী তাই এই দলকে ক্ষমতাচ্যূত করতে হলে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবেই মাঠে নামতে হবে।
তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সভাপতি হাফিজ উদ্দিন খান ইনকিলাবকে বলেন, ড. কামাল হোসেন একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে তিনি পিছিয়ে আছেন। তৃণমূলের সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই। যদি আ স ম রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী জনবল দিয়ে ড. কামাল হোসেনকে সহায়তা করতে পারেন তাহলে তাদের দ্বারা কিছু করা সম্ভব হবে।
রাজনীতিতে নতুন জোটকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. নূরুল আমিন বেপারী বলেন, বড় প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা, নাকি ৫ জানুয়ারির মতো হবে, আগে সেটি ঠিক হতে হবে। নতুন জোটের বিষয়ে তিনি বলেন, এই জোটের যারা নেতৃত্বে আছেন তাদের ব্যক্তিগত ইমেজ অনেক ভাল, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে। কিন্তু তাদের দলের ভোটের সংখ্যা কম। পরিবতর্ন আনতে হলে তাদেরকে অবশ্যই অন্যদের সাথে আতাত করতে হবে। হতে পারে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নানা কারণে দেশে এখন জনবিরোধী দলে পরিণত হয়েছে। তা না হলে কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে কিভাবে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসলো। কারণ তাদের মধ্যে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ রয়েছে। এটি তারই বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, নতুন জোটকে সতর্কভাবে এগুতে হবে যদি তারা আওয়ামী লীগের সাথে নিয়ে এগুতে চায় তাহলে মনে রাখতে হবে শূণ্য যোগ শূণ্য সমান সমান শূণ্য। আর বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দূর্বল হলেও সারাদেশে তাদের একটা ভোট ব্যাংক আছে। সরকারের কারণে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতাও বেড়েছে। যেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে সেখানেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোটের ব্যবধানটা বোঝা যাচ্ছে। যেমন সিলেটের স্থগিত দুটি কেন্দ্রে হয়েছে। এজন্য বিএনপির সাথে নতুন জোটকে আসতে হলে সকলকে ছাড় দিতে হবে। বিএনপির এই জোটকে ছাড় না দিয়ে কোন উপায় নেই, নাহলে তাদের অস্তিত্বও থাকবে না। আবার নতুন জোটে ব্যক্তি ইমেজের লোক থাকলেও ভোট লাগবে। এজন্য তাদেরকে অন্য কারো সাথে আতাত করতেই হবে। তবে মনে রাখতে হবে দরকষাকষি বেশি করতে গেলে তিক্ততা বাড়বে সেক্ষেত্রে সুযোগ নেবে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন হলে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা বন্ধ হয়ে যাবে। যার জন্য আওয়ামী লীগ ৭১ সালে যুদ্ধ করেছিল। নতুন জোট যে লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে তা সফল হলে দেশের জন্য দেশেল জনগণের জন্য এবং গণতন্ত্রের জন্য এক নতুন ধারার সৃষ্টি হবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই রাজনীতির মেরুকরণ স্পষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বাইরে অবস্থান নিচ্ছে তাদের জোটের বাইরে থাকা দলগুলো। এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট বা জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা না আসলেও তা সময়ের ব্যাপার মাত্র বলে মনে করছেন অনেকেই। বিশেষ করে গত মঙ্গলবার রাতে ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে জোট বেঁধেছে যুক্তফ্রন্ট এবং গণফোরাম। একই সঙ্গে তারা দাবি আদায়ের সংগ্রাম এগিয়ে নিতে একমঞ্চ থেকে অভিন্ন কর্মসূচি দেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মাঠে নামবেন তারা। এর মধ্যে ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে সমাবেশও করবে নতুন এই জোট। সেখানে জামায়াত ছাড়া সব রাজনৈতিক দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে তাদের প্রতিনিধি দল সেই সমাবেশে অংশগ্রহণও করবে। পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের অনেক রাজনৈতিক দলও উপস্থিত থাকবে সেই মঞ্চে। অন্য দিকে আওয়ামী লীগ নিজেদের জোট সম্প্রসারণ করতে চাইলেও ড. কামাল ও ডা. বি. চৌধুরীর জোটকে কিছুটা বাকা চোখেই দেখছেন। আওয়ামী লীগ মনে করছে এই জোটকে বিএনপি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, রাজনৈতিক এতিমরা এক হয়েছে, হোক। তাদের এই ঐক্যে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা জনগণের সঙ্গে আছি। তিনি বলেন, এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময় তার। এই কামাল হোসেনের বয়স যখন ৩০ এর মধ্যে ছিল, তখন স্বাধীনতা যুদ্ধেও অংশ নেননি। বরং ওই সময় শ্বশুরবাড়ি পাকিস্তানে চলে গেছেন। এখন বুড়ো বয়সে এসে একটি গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচিত সরকার হটানোর জন্য আরও কয়েকজন মিলে এক হচ্ছেন। এই সরকারকে হটিয়ে তারা কি স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠীকে ক্ষমতায় আনতে চায়?’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ড. কামাল হোসেন, বি চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না এদের একটা চক্র আছে। এদের অতীত ইতিহাস কী বলে? এরা কোথাও ঘরসংসার করতে পারেনি। এরা রাজনৈতিক সংসার থেকে পরিত্যক্ত। তারা আবার সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। কিছু কুশীলব তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে ঠিক, কিন্তু জাতির কোনো প্রত্যাশা নেই।
তবে গণফোরামকে নিয়ে যুক্তফ্রন্টের জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। আজকে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত এই জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়া অনেকদ‚র অগ্রসর হয়েছে। আমরা আশাবাদী। যারা ২০ দলের বাইরেও একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ, অংশ গ্রহণম‚লক নির্বাচনের স্বার্থে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার জন্য, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশনকে সংস্কার করে নির্বাচনের জন্য আজকে জাতীয় ঐক্যের সৃষ্টিতে কাজ করছেন তাদের আমরা অভিনন্দন জানাই, ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, বিএনপি আগামীতে সবার অংশগ্রহনম‚লক একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। সেজন্য জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়ায় যেসব ইসুকে সামনে নিয়ে আনা হয়েছে আমরা মনে করি আমরা যেসব ইস্যুতে আন্দোলন করছি তার সাথে মিল রয়েছে। আমরা আশা করি এই জাতীয় ঐক্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জনগণের ভোটের অধিকার, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের সুশাসন, আইনের শাসন, বিচার বিভাগকে স্বাধীন করার ব্যাপারে সচেষ্ট হবে। এই ঐক্য স্বৈরাচারের হাত থেকে জনগণকে মুক্ত করার জন্য অবশ্য যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে পথ সৃষ্টি করে এককাতারে এক মঞ্চে এসে এই স্বৈরাচারি সরকারের হাত থেকে দেশের জনগনকে রক্ষা করবে।
এদিকে নির্বাচনের আগে আগে ড. কামাল ও ডা. বি. চৌধুরীর জোটের সাথে জামায়াত ছাড়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন বাকী ১৯ দল, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ আরও বেশকিছু রাজনৈতিক দল যুক্ত হয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠিত হবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। এ বিষয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে আগামী নির্বাচন এবং সুন্দর নির্বাচনী কাঠামোর দাবিতে আমরা জাতীয় স্বার্থে একটি ঐক্য করেছি। জামায়াত বাদে সকল দলকেই এই ঐক্যে অংশগ্রহণের জন্য আমরা আহবান জানাচ্ছি। তবে জামায়াত যদি আলাদা আন্দোলন করতে চায় বা সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করে তা হবে তাদের ব্যাপার। আমরা এতে না করবো না। তিনি বলেন, কিছু অভ্যন্তরীণ কাজ শেষে প্রত্যেকটি দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন ঐক্যে অংশগ্রহণের জন্য। গণতান্ত্রিক বাম জোটের দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে ইতোমধ্যে কথা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের কথা, লক্ষ্য, প্রত্যাশা জনগণের সামনে তুলে ধরবো। ন্যায় বিচারের পক্ষে, প্রতিহিংসা-জিঘাংসার বিপক্ষে কাজ করবো। আমরা সরকার গঠন করলে বিরোধী রাজনৈতিককর্মীদের জেলে পাঠাবো না, পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবো না। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার কায়েম করবো।
কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ইনকিলাবকে বলেছেন, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনী কাঠামোর জন্য আমরা কাজ করছি। আমাদের দাবি সম্পূর্ণ আলাদা, আলাদাভাবেই আমরা কাজ করবো। জামায়াত ছাড়া অন্য সকল দল তাদের ঐক্য প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে ড. কামালের এমন বক্তব্যের বিষয়ে সেলিম বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের এখন পর্যন্ত কোন আলাপ হয়নি এবং হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই। আমরা ভিন্ন ভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।
তবে ইতোমধ্যেই সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের নেতারা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসজুড়ে সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ৩০ আগস্ট বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, ৮ সেপ্টেম্বর বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের সঙ্গে সভা, জোটের চার দফা দাবি আদায়ে ১০ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন অফিস অভিমুখে বিক্ষোভ, ১১ অক্টোবর দুর্নীতি ও দুঃশাসন প্রতিরোধে সচিবালয় অভিমুখে বিক্ষোভসহ সারা দেশে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে জেলা পর্যায়ে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষে বলা হয় এ সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচনও সম্ভব নয়। একইসাথে তফসিল ঘোষণার আগে সরকারকে পদত্যাগ করে সব দল ও মতের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন, তফসিল ঘোষণার আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন ও সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থাসহ টাকা ও পেশিশক্তিনির্ভর নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের দাবি জানানো হয়।
ড. কামাল ও ডা. বি. চৌধুরীর এই উদ্যোগকে অনেকেই ১৯৭৭ সালে ভারতের সর্বভারতীয় আন্দোলনের সাথেও তুলনা করছেন। তারা বলছেন কংগ্রেসকে ৩০ বছরের ক্ষমতা থেকে সরাতে জয় প্রকাশ নারায়ণ যে ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন এই দুই নেতা এখন সেই ভূমিকায় অবর্তীন হতে পারেন। ড. নূরুল আমিন বেপারী ভারতে কংগ্রেসের পতনের বিষয়ে বলেন, ১৯৪৭ সাল থেকে ৭৭ সাল পর্যন্ত ভারতে কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু ৩০ বছরের মাথায় কংগ্রেসের পতন হয়েছিল একটি ভুল সিদ্ধান্তের ফলে। ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধির নেতৃত্বে কংগ্রেস ভারতে একদলীয় শাসনের প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। এটি কেউ মেনে নেয়নি। জয় প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে সর্বভারতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা হয়। ফলশ্রুতিতে ৩০ বছরের কংগ্রেসের শাসনের সমাপ্তি হয়। কিন্তু আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া জয় প্রকাশ নারায়ন কিন্তু ক্ষমতা নেননি।
ড. কামালও সেই একই ধরণের কথা বলেছেন। তিনি যে ক্ষমতার জন্য নয়, দেশের মানুষের জন্য, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য এবং গণতন্ত্রের জন্য এগিয়ে এসেছেন তা জানিয়ে দিয়েছেন। বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আমি প্রধানমন্ত্রী হতে চাই না। এ নিয়ে ন্য‚নতম আগ্রহও প্রকাশ করিনি। আমি এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধার করতে চাই। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। গণতন্ত্রকে বিদায় দিয়ে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আবারও প্রহসনের নির্বাচন করতে চাইলে জনগণ তা প্রতিহত করতে রুখে দাঁড়াবে। কখন কীভাবে রুখে দাঁড়াবে তা এখনই বলা সম্ভব না। কখন জনগণের ঐক্য হবে, তা-ও আগাম বা অনুমাননির্ভর কিছু বলা সম্ভব নয়। সময়ই সব নির্ধারণ করে দেবে। ইতিহাস বলে বাঙালি যখনই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তখনই বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। কামাল হোসেন আরও বলেন, আইয়ুব খান এবং ইয়াহিয়া গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। স্বৈরতন্ত্র কায়েম করতে গিয়ে তারা বলেছিল- ‘আগে উন্নয়ন, আগে অর্থনৈতিক মুক্তি, পরে গণতন্ত্র।’ এ তত্ত্ব দিয়ে বাঙালিকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিল। বিষয়টি বুঝতে পেরে এর বিপরীতে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- আগে স্বাধীনতা, আগে ভোটের অধিকার, আগে গণতন্ত্র। সেই স্বাধীন বাংলাদেশে এখন আমরা কার ফর্মুলা অনুসরণ করব? আইয়ুব খান এবং ইয়াহিয়ার ফর্মুলা? নাকি বঙ্গবন্ধুর ফর্মুলা? বাস্তবতা হচ্ছে- আইয়ুব-ইয়াহিয়ার ফর্মুলা দিয়ে সরকারের অনেকে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করছেন। এ ফর্মুলা দিয়ে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের মালিকদের দাবিয়ে রাখা হবে, তাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হবে, তাদের বাকস্বাধীনতা হরণ করা হবে- এটা বেশিদিন চলতে পারে না। আইয়ুব-ইয়াহিয়া পারেনি, এ সরকারও পারবে না।
জানতে চাইলে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে যা দিয়েছে আমরা তা দেব না। আমরা ভোট চুরি, গণতন্ত্র চুরি করবো না। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত, সুশাসন ফিরিয়ে আনা, ধন বৈষম্য দূর করা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, শিক্ষা ও চিকিৎসায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবো। ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, জাতির ক্রান্তিলগ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।###



 

Show all comments
  • Emrul koes ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ১:১৭ এএম says : 0
    A desh akon awamiliger .sob tader ordarer gulam.sob nagorik poradin.nam shadin bangla.deshe shadinotar gomdo o nae.allah taratari bisar koro.amin.এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন
    Total Reply(0) Reply
  • Emrul koes ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ১:২৫ এএম says : 0
    Je hakim norena jar hukum norena take she hok desher kandary ae kamona kori.এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন
    Total Reply(0) Reply
  • nNeloy ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ৪:০২ এএম says : 1
    aie shokol sharthobadi , boshonter kokil, udbasto neta gon kototuku gonogon grohon korbay ?. Dr.B. Chowdhury BNP r bohishkrito president, power payacilen ,but kajay lagatay paren nai , dekha shesh. Only figure Bangbeer Kader Siddque . But party namer shatay kajer meel nai. Krishoker sharthay a porjono kono joralo boktobbo rakhtay paren nai. We are simple, '74 rer slogun r chaina , " Bhat day Gonotontro " so, we are request Gonotontrer dohai dea desh kay r pechonay tanben na.
    Total Reply(0) Reply
  • AFZAL ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ৪:১৫ এএম says : 0
    B Chowdhury need to remember Mr Tareq bound him to run thorough Rail line. The Eikko Jote is good for nothing . I believe they have no vote bank. better if they join with Earshad and make jote and become opposition party after election. We have seen what did BNP and Hawoa Bhabhon.
    Total Reply(0) Reply
  • রাকিব ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ১০:৪৪ এএম says : 1
    জাতীয় ঐক্য ছাড়া কোন কিছু হাছিল করা সম্ভব না।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdulla Rayhan Ahmed Khan Emon ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ১১:১৭ এএম says : 1
    সৌখিন রাজনীতিবিদ।
    Total Reply(0) Reply
  • Osman Gani Chowdhury ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ১১:১৭ এএম says : 0
    লাভ কিছুই হবে বলে মনে হয়না।
    Total Reply(0) Reply
  • Kazi ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ৩:৪৮ পিএম says : 0
    Hope is life.
    Total Reply(0) Reply
  • ৩১ আগস্ট, ২০১৮, ৭:৩৫ এএম says : 0
    বিশিষ্ট এই পাঁচ নেতার রাজনীতির মাঠে তেমন কোন জনসমথন নেই ঊনারা যদি নিজেদের জোট নিয়ে নিবাচন করেন তাহলে জনাব কাদের সিদিদকি ছাড়া অন্য কেউ কোন আসন পাবেন না. জনাব কাদের সিদিদকি একটি আসন পাবেন ঊনার টাংগাইল থেকে.
    Total Reply(0) Reply
  • ইরফান চৌধুরী ৩১ আগস্ট, ২০১৮, ২:১০ পিএম says : 0
    জনাব ডঃ কামাল বছরে আট মাস থাকেন দেশের বাহিরে কাজেই ঊনাকে দিয়ে রাজনীতি হবে না.
    Total Reply(0) Reply
  • নয়ন ৩১ আগস্ট, ২০১৮, ২:১১ পিএম says : 0
    ঊনাদের ঐক্যজোট দিয়ে কোন কাজ হবে বলে মনে হয় না.
    Total Reply(0) Reply
  • ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৫:৩৫ এএম says : 0
    এক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় বুলগেরিয়ার তিনজন প্রভাবশালী মন্ত্রীকে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বয়কো বরিসভ। দেশটির পরিবহনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র এবং আঞ্চলিক উন্নয়নবিষয়ক তিন মন্ত্রীকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বয়কো বরিসভ বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের জন্য রাজনীতিবিদদের দায় নিতে হবে। এ দায় নিয়ে পরিবহনমন্ত্রী ইভালো মস্কোস্কি, আঞ্চলিক উন্নয়নমন্ত্রী নিকোলায় নানকভ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্যালেন্টিন রাডভের পদত্যাগের দাবি জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী। এরপর প্রধানমন্ত্রীর এই দাবিতে সাড়া দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিন মন্ত্রী তাদের পদত্যাগের কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্যালেন্টিন রাডভের বলেন, এ ধরনের একটি দুর্ঘটনা এড়াতে আমরা অবশ্যই উদ্যোগ নিতে পারিনি। গত শনিবার দেশটির উত্তরপশ্চিমে একটি শহরে বাস দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হন। এতে আহত হন আরও ২০ জন। দেশটির রাজধানী সোফিয়া থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার উত্তরে সভজে শহরে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এই নিহতের ঘটনার পর থেকে শহরটিতে শতশত মানুষ আন্দোলন করে আসছিলেন। তারা দাবি করেন, দেশের সড়ক বিভাগকে ঢেলে সাজাতে হবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবারের দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি নিয়ে প‚র্ব ইউরোপের দেশটিতে নিন্দার ঝড় বইছে। নড়েচড়ে বসেছে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ। প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রীসভার তিনজন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছেন। বরখাস্তকৃত মন্ত্রীরাও দুর্ঘটনার দায় স্বীকার করে দু:খ প্রকাশ করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্যালেনটিন রাদেভ বলেন, আমরা দুর্ঘটনার রাজনৈতিক দায় স্বীকার করে নিয়েছি। এজন্য আমরা পদ ছেড়ে দিচ্ছি। অবশ্যই আমরা এ ধরণের দুর্ঘটনা প্রতিরোধের মতো ব্যবস্থা করতে পারি নি। রাদেভ যখন সাংবাদিকদের এসব কথা বলছিলেন, বরখাস্তকৃত আরেক মন্ত্রী নিকোলে নানকভও তার সঙ্গে ছিলেন। তিনি রাদেভের uporokto ghotonar prekkhite amra ki bujhlam vai nnloy ? ami soto manus bujhi kom tai aponar nikot etar ekta explain except korsi just "don't take negative plz tader lojja sorom sob khomota prolovone bilupto hoye gese monehoy noile "why students are violence against the BD government ? the students were wanted real Justice from BD government but our gov: not excepted their demand. here is my question to u that logically whose are attended to right point students/ government and what's should you do as government? I expect government of the people by the people for the people but it's totally wrong activities by government with whole people in our Golden Bangladesh . am I right or wrong bro plz explain it
    Total Reply(0) Reply
  • তারেক আজিজ ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৭:১৪ এএম says : 0
    ঊনাদের ঐক্যজোট মাঠে মারা যাবে যখন ঊনারা দেখবেন জনগণ ঊনাদের সমথন করছে না তখন ঊনারা বিভিন্ন দিকে ছুটোছুটি করবেন.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ