পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
এখনো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেননি। এখনো সরকার গঠন করেননি। আছেন নানা চাপের মধ্যে। বলা যায়, এখনও ঠিক মতো ইনিংসই শুরু করে উঠতে পারেননি ইমরান খান। কিন্তু তাতে কি! প্রতিবেশী ভারত তার ইনিংস খেলতে শুরু করেছে, বদলাতে শুরু করেছে ভারত-পাকিস্তান ক‚টনৈতিক ম্যাচের চেহারা। সে খেলায় ইমরানকে চাপে রাখতে কাবুল নদীতে আফগানিস্তানের সাথে যৌথ উদ্যোগে বাঁধ তৈরি করতে যাচ্ছে ভারত। বিষয়টিকে ইমরানের প্রতি নয়াদিল্লীর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়া হিসেবে দেখছেন অনেকে।
জানা গেছে, গত সপ্তাহে আফগানিস্তানের সঙ্গে ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ডেভেলপমেন্ট কো অপারেশন’-এর বৈঠকে বসেছিল ভারত। উপস্থিত ছিলেন ভারতের পররাষ¦ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক সচিব টি এস তিরুম‚র্তি ও আফগান অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ইসমাইল রহিমি। স‚ত্রের খবর, স্থির হয়েছে, আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে বয়ে যাওয়া কাবুল নদীর উপরে যৌথ উদ্যোগে একটি বাঁধ তৈরির প্রকল্পে কাবুলের সঙ্গে হাত মেলাবে নয়াদিল্লি। অবশ্যই প্রস্তাবিত বাঁধটি (শাহতুত বাঁধ) তৈরি হবে আফগানিস্তানের নদী অববাহিকায়। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তার ঘোরতর বিরোধিতায় নামবে ইসলামাবাদ তা জানা কথা। ভারত ও আফগানিস্তানের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কে টানাপড়েন আরো বাড়বে।
হিন্দকুশ পর্বতের সাংলাখ থেকে উৎপন্ন হয়ে কাবুল নদী বয়ে গিয়েছে জালালাবাদ হয়ে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলে। এই নদীটিতে বাঁধ তৈরি নিয়ে বেশ কিছু দিন মতান্তর চলছে ইসলামাবাদ ও কাবুলের মধ্যে। পাকিস্তান সরকারের বক্তব্য, কাবুল নদীতে বাঁধ দেওয়া হলে তাদের দেশে পানির প্রবাহ কমে যাবে। পাশাপাশি, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দু’দেশের মধ্যে বয়ে যাওয়া নদীগুলির পানিবণ্টন নিয়ে একটি স্থায়ী চুক্তি করার জন্য আফগানিস্তানের উপর চাপ দেওয়া হচ্ছে। তবে এখনও নতি স্বীকার করেনি কাবুল। কাবুলের আশঙ্কা, পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে কাবুল নদী অববাহিকায় ভবিষ্যতে পানিবিদ্যুৎ এবং সেচ প্রকল্প গড়তে সমস্যা হতে পারে।
এই অবস্থায় আফগানিস্তান দ্বারস্থ হয়েছে ভারতের। নয়াদিল্লিও লুফে নিয়েছে কাবুলের প্রস্তাব। তবে প্রশ্ন উঠছে, ইতিমধ্যেই এই ‘ঘোলা’ নদীতে মাথা গলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ভ‚কৌশলগত রাজনীতিতে আরও জটিলতা কেন তৈরি করতে চাইছে সাউথ বøক? এমনিতেই আফগানিস্তানে পুনর্গঠনে ভারতের ভ‚মিকা নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে সমালোচনা করে আসছে ইসলামাবাদ।
ক‚টনৈতিক শিবিরের মতে, নয়াদিল্লি জেনেশুনেই এটা করেছে। প্রস্তাবিত শাহতুত বাঁধটি গড়তে প্রায় ৩০ কোটি ডলারের মতো খরচ হওয়ার কথা। প্রকল্পটি রূপায়িত হলে কাবুলের ২০ লক্ষ মানুষের পানির সমস্যা মিটবে। পাশাপাশি, চাহার, আশিয়াব ও খাইরাবাদ এলাকার প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে পানিসেচ সম্ভব হবে। এই বিরাট উন্নয়ন কাজে শরিক হয়ে আন্তর্জাতিক শিবিরের কাছে ইতিবাচক বার্তা দিতে চাইছে দিল্লি।
ক‚টনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ইসলামাবাদের উপর একটি স্থায়ী চাপ তৈরি করে রাখাটাও ভারতের কৌশলগত উদ্দেশ্য। বিশ্বব্যাঙ্কের তত্ত¡াবধানে পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানিচুক্তি নিয়ে দু’দেশের মধ্যে বারবার সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী সিন্ধু, বিতস্তা ও চন্দ্রভাগা থেকে প্রতি বছর পাকিস্তানে ন্য‚নতম যে পানি পৌঁছনোর কথা, তার থেকে অনেকটা বেশিই যায়। ভারত সেই বাড়তি পানি কাজে লাগিয়ে সেচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্পোৎপাদনের রাস্তায় হাঁটতে চায়। তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে পাকিস্তানের। এই নিয়েই দু’দেশের মধ্যে ছায়াযুদ্ধ চলছে।
এই পরিস্থিতিতে অনেকেই মনে করছেন, কাবুলকে পাশে নিয়ে নদী-রাজনীতিতে ইমরান সরকারকে নতুন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল ভারত। সূত্র আনন্দবাজার পত্রিকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।