Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুতায়িত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৭ এএম

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি হলেও গড়িমসি, অজুহাত ও জটিলতা সৃষ্টি করে চলেছে মিয়ানমার সরকার। বর্বরোচিত গণহত্যা ও পৈশাচিক নির্যাতনের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন স্টেট থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব ও অধিকারের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগগুলোর সাথে মিয়ানমার অসহযোগিতামূলক আচরণ করলেও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনানের নেতৃত্বে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নে তারা শুরু থেকেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল, যদিও পরবর্তী কার্যক্রমে সে প্রতিশ্রুতির প্রতি সদিচ্ছার প্রতিফলন দেখা যায়নি। অবশেষে মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানের আশ্বাস দেয়। সে অনুসারে গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশের সাথে একটি দ্বিপাক্ষিক প্রত্যাবাসন চুক্তিতে সই করে। জানুয়ারীর ২৩ তারিখ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। প্রত্যাবাসনের জন্য প্রথম দফায় বাংলাদেশ ৮ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করলেও অদ্যাবধি একজনকেও ফেরত নেয়নি তারা। এ ক্ষেত্রে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এমতাবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে আছে। গত সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল মিয়ানমার সফর করে এসেছেন। তারা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠকও করেছেন। সেই বৈঠকে বাংলাদেশে থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় কিছু শব্দগত আপত্তি জানিয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের পরিচয় লিপিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে তাদেরকে ফোর্সিবলি ডিসপ্লেসড মিয়ানমার ন্যাশনালস বা ‘জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এই বাক্যবন্ধের প্রতি আপত্তি জানিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তদস্থলে ‘ডিসপ্লেসড পারসনস ফ্রম রাখাইন স্টেট’ লেখার অনুরোধ জানিয়েছেন। কাগজে- কলমে আপত্তি থাকলেও সারাবিশ্ব জানে রোহিঙ্গারা কিভাবে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। দু’একটি শব্দের পরিবর্তনের দাবীকে বাংলাদেশ মেনে নিয়েছে বলে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের স্বার্থে এ ক্ষেত্রে কিছু ছাড় ও আপসের দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায়না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হলেও তাদের উপর যে গণহত্যা, অন্যায় অবিচার করা হয়েছে স্বীকার করতে রাজি নয়। মিয়ানমারের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠি হিসেবে রোহিঙ্গাদের তারা কোন স্তরের স্বীকৃতি দিতেও কুণ্ঠিত। চুক্তি ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতায় শব্দগত পরিবর্তনকে আমরা গৌণ বিষয় মনে করে মেনে নিতে পারি, তবে রোহিঙ্গাদের দ্রæত স্বদেশে প্রত্যাবর্তন জরুরী। সেখানে তাদের নাগরিকত্ব, আইনগত অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া আবশ্যক। এসব বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়িত্ব নিয়ে নিশ্চিত করতে হবে।
শত শত বছর ধরে রাখাইনে বসবাস করার পরও রোহিঙ্গা মুসলমানদের মিয়ানমারের ১৩৫টি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠির তালিকার বাইরে রেখে রোহিঙ্গা সংকটের সৃষ্টি করা হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ হিসেবে কোফি আনান কমিশন অনেক বাঁধাবিপত্তি ডিঙ্গিয়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সহ¯্রাধিক ব্যক্তির মতামত ও ১৫৫টির বেশী বৈঠক করে যে সুপারিশমালা প্রনয়ন করেছে তাতে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি এবং তাদের সামাজিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তার কথা বেশ জোরালোভাবে বলা হয়েছে। মিয়ানমার প্রতিনিধিদের আপত্তির কারণে কোফি আনানের প্রতিবেদনে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি, একইভাবে তাদেরকে বাঙ্গালী বলেও স্বীকার করা হয়নি। সেখানে তাদেরকে‘ রাখাইনের মুসলমান সম্প্রদায়’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। যে নামেই অভিহিত করা হোক, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে সফল করতে হলে আনান কমিশনের সুপারিশ অনুসারে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মানবিক সহায়তা ও সামগ্রিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকতে হবে। আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব মূলত মিয়ানমারের হলেও ১০লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরনার্থির চাপে ভারাক্রান্ত বাংলাদেশকে নিজস্ব বাস্তবতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে জোরালো ভ‚মিকা রাখতে হবে। কৌশলগত কারণে যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, রাখাইনের মুসলমানদের নাগরিকত্ব ও সামাজিক-অর্থনৈতিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্বসম্প্রদায়ের নজরদারি থাকতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন


আরও
আরও পড়ুন