Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সাতক্ষীরায় লবণসহিষ্ণু আখচাষে সাফল্য

সাতক্ষীরা থেকে আবদুল ওয়াজেদ কচি | প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

উপক‚লীয় সাতক্ষীরা জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে লবণসহিষ্ণু নতুন জাতের আখ চাষ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ আখ গবেষণা ইনস্টিটিউট ঈশ্বরদীর ব্যবস্থাপনায় সাতক্ষীরার লবণাক্ত এলাকাতে উচ্চমাত্রার লবণসহিষ্ণু নতুন ৩৯ ও ৪৬ জাত চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা সফল হয়েছেন বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বালিথা গ্রামের আখচাষি মো. রুহুল আমিন জানান, তার এলাকার অধিকাংশ জমিতে লবণাক্ততা বেড়ে গেছে। দানাদার ফসল আগের মতো আর ফলে না। তাই আখ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরামর্শে দুই বিঘা জমিতে পরিক্ষামূলকভাবে লবণসহিষ্ণু নতুন ৩৯ জাতের আখ রোপণ করে সাফল্য অর্জন করেছেন। তিনি বলেন, গত ডিসেম্বরে আখের ডোগা রোপণ করার পর বর্তমানে ক্ষেতে বড় বড় ঝাড়ে পরিণত হয়েছে। তা ছাড়া তেমন কোনো রোগবালাইও এখনো দেখা দেয়নি। তিনি আরো বলেন, আগামীতে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে এই লবণসহিষ্ণু ৩৯ জাতের আখ চাষ করবেন। বিঘা প্রতি ২২ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে তার আখ চাষ করতে। একই গ্রামের আখচাষি জোসনা বেগমও পাবনা ঈশ্বরদীর আখ গবেষণা ইনস্টিটিউটের লোকজনের পরামর্শে তার তিন বিঘা পরিমাণ জমিতে লবণসহিষ্ণু নতুন ৩৯ জাতের আখ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এমন ভালো ফলন হবে জানলে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে আখ রোপণ করতেন। বিএসআরআইয়ের সমন্বিত গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণ প্রকল্পের অধীনে সাতক্ষীরার লবণাক্তপ্রবণ সাতক্ষীরা সদর, তালা, কালিগঞ্জ, আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলাতে লবণসহিষ্ণুু জাতের আখ চাষ করা হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষিতত্ত¡¡ ও ফার্মিং সিস্টেম বিভাগ বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট ইশ্বরদী, পাবনা। প্রকল্প পরিচালক ঊর্র্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সমজিত কুমার পাল জানান, উপক‚লীয় সাতক্ষীরা জেলার সাতটি উপজেলার সবচেয়ে বেশি লবণাক্ততা এমন পাঁচটি উপজেলাতে পরিক্ষামূলকভাবে লবণসহিষ্ণুু নতুন ৩৯ ও ৪৬ জাতের আখ চাষ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই নতুন ৩৯ ও ৪৬ জাতের আখ যেমন উচ্চমাত্রার লবণ সহ্য করতে পারে, তেমনি অধিক পরিমাণ ফলন দেয়। এটি বিঘা প্রতি সর্বোচ্চ ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক বিঘা জমির আখ বিক্রি হবে কমপক্ষে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা। ফলে কৃষক লাভবান হবে এই লবণসহিষ্ণুু জাতের আখ চাষ করে। তিনি বলেন, ৩৯ ও ৪৬ জাতের আখ ১৫ থেকে ১৬ মাত্রার লবণ সহ্য করতে পারবে অনায়াসে। তা ছাড়া রোগবালাইয়ের প্রাদুর্ভাব খুবই কম।
তিনি আরো বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক এ জাতের আখ চাষ করে লাভবান হতে পারবে। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী আব্দুল মান্নান জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় উপক‚লীয় সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে আখ উৎপাদন কমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে। তবে লবণসহিষ্ণুু নতুন ৩৯-৪৬ জাতের আখ চাষে সাফল্য এসেছে সাতক্ষীরায়। আগামীতে জেলার সব অঞ্চলেই এ জাতের আখ চাষ করতে পারলে কৃষক লাভবান হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় পাঁচ হেক্টর, কলারোয়ায় দুই হেক্টর, তালায় ৭৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৫ হেক্টর, কালিগঞ্জে ২৫ হেক্টর, আশাশুনিতে পাঁচ হেক্টর এবং শ্যামনগর উপজেলাতে চার হেক্টর পরিমাণ জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ