Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

‘অষ্টধাতু’র নষ্ট বাণিজ্য চরফ্যাশন শিক্ষা অফিস

চরফ্যাশন (ভোলা) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১২ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

চরফ্যাশন (ভোলা) উপজেলা সংবাদদাতা : চরফ্যাশন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ঘুষ বানিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। অভিযোগ উঠেছে ৮ শিক্ষক নেত (অষ্টধাতু) নামক পরিচিতদেরকে শিক্ষা অফিসার হাতে নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বরাদ্দ থেকে অফিস প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, চরফ্যাশন উপজেলায় মোট ২১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়ে শেখ হাসিনার নাম সম্বলিত (গল্পের) বই বিক্রি, সরকারি ভাবে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রাক প্রাথমিকের ক্লাসের সৌন্দর্য বর্ধন, রুটিন মেইন্টেনেজ, ক্ষুদ্র মেরামত ও ¯িøপের জন্যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে দুটি বই বিক্রিতে ৫ শ’ প্রাক প্রাথমিকে ৫ হাজার থেকে ৩ শ’, রুটিন মেন্টেনিজ ১০হাজার থেকে ১হাজার, ক্ষুদ্র মেরামতের ১লাখ টাকা থেকে ১২ হাজার ও ¯িøপের ৪০হাজার থেকে ১ হাজার টাকাসহ মোট ১৪হাজার ৮শ’ টাকা স্কুল প্রতি উত্তোলন করা হচ্ছে। যে সকল প্রতিষ্ঠানে ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্দ নেই সেখান থেকে নেয়া হচ্ছে ২৮শ’ টাকা।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মোট ২১২টি প্রতিষ্ঠানে বই বিক্রি থেকে ১লাখ ৭৫হাজার ৫শ’ টাকা, প্রাক প্রাথমিক ২১২টি প্রতিষ্ঠানের ৫হাজার টাকা বরাদ্দ থেকে ৬৩ হাজার ৫শ’, রুটিন মেইন্টেনেন্স ৭০ প্রতিষ্ঠান থেকে ৭০হাজার টাকা, ¯িøপের বরাদ্দের ১৯২ প্রতিষ্ঠান থেকে ১লাখ ৯২হাজার টাকা ও ক্ষুদ্র মেরামতের ১৭ প্রতিষ্ঠান থেকে ১২হাজার করে ২লাখ ৪হাজার টাকাসহ মোট ৬ লাখ ৩৫হাজার ৬০০শত টাকা ঘুষ-বানিজ্য করার অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারি আ. ছাত্তার ক্ষুদ্র মেরামত ছাড়া বাকী টাকাগুলো গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। অফিস সহকারি ছিদ্দিক উত্তোলন করেছেন ক্ষুদ্র মেরামতের ২লাখ ৪হাজার টাকা।
শনিবার সরেজমিন কলেজ পাড়া আনছারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে গেলে প্রধান শিক্ষক এ কে এম মজির উদ্দিন বলেন, ছাদে পানি পড়ে তার কাজ করা হয়েছে। ১লাখ ৪৫হাজার টাকা বরাদ্দের বিষয় জানতে চাইলে তেমন উল্লেখযোগ্য কাজ দেখাতে পারেননি। মধ্য আবুব্বরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাজ কিছুটা হয়েছে। তিনি জানান, আমার কাছ থেকে ক্ষুদ্র মেরামতের বাবদ ১২হাজার টাকা অফিস নিয়েছে। ¯øীপ ও প্রাক প্রাথমিকের বরাদ্দ থেকে টাকা নেয়নি। মধ্য উত্তর মাদ্রাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ক্ষুদ্র মেরামতসহ কাজে ঘাপলা আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জনৈক প্রধান শিক্ষক ইনকিলাবকে বলেন, আমি ৪টি বিষয়ের বরাদ্দ থেকে ২৮‘শ টাকা অফিস সহকারি আ. ছাত্তারকে দিয়েছি। আমার বিদ্যালয় উপজেলার মধ্যে স্বচ্ছভাবে চলে এবং শতভাগ কাজ হয় বিধায় আমার কাছ থেকে বরাদ্দ থেকে কোন টাকা-পয়সা গ্রহণ করেনি। অফিসে টাকা দেয়ায় বিদ্যালয়ের কাজে অনিহা প্রকাশ পায়। প্রতিষ্ঠান প্রধানগন অনিয়ম ও দূর্নীতি করতে উৎসাহিত হয়। শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে। আমাদের এ বিষয়গুলো থেকে পরিত্রাণ প্রয়োজন ।
এ বিষয়ে পূর্ব উত্তর আসলামপুর খাস পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোদাচ্ছের হোসেন বিদ্যালয়ের নামে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ¯িøপের ৪০হাজার টাকা, প্রাক প্রাথমিকের জন্যে ৫হাজার টাকা, রুটিন মেইন্টেন্যান্সের জন্যে ১০হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বিদ্যালয়ে কোন কাজ না করে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি(এস.এমসি) এর যোগাযোগ ছাড়াই সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে স্থানীয় জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ওই বিদ্যালয়ে ¯িøপের ৪০হাজার টাকার কোন কাজ হয়নি অভিযোগ তোলা হলে সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের দায়িত্বে সহকারি শিক্ষা অফিসার খালিদ আহম্মেদ নামে তদন্ত করে গোজামিল দিয়ে রাখা হয়েছে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। ক্ষুদ্র মেরামতের টাকার মধ্যে সবচেয়ে ঘাপলা রয়েছে অভিযোগ ভুক্তভোগিদের।
উপজেলায় সরকারি, সদ্য জাতীয়করণকৃত ও গ্রাজুয়েট শিক্ষক সমিতি নামক ৩টি শিক্ষক সংগঠন রয়েছে। বদলি হওয়া শিক্ষা অফিসার আ. ছালাম সংগঠনগুলোকে সমন্বয় করে ৮ শিক্ষক নেতাকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়। শিক্ষা অফিসের সকল বিষয় অন্য কাউকে গুরুত্ব না দিয়ে ৮ শিক্ষক নেতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠে শিক্ষা অফিস। ওই শিক্ষক নেতাদেরকে সহকারি শিক্ষকগন ‘অষ্টদাতু’ অবহিত করা হচ্ছে। শিক্ষা অফিসার তৃষিত কুমার চৌধুরী, অফিসের ষ্টাফ ও ৮ শিক্ষক নেতার যোগসাজশে এই সকল ঘুষ বানিজ্য হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিদ্যালয় সংক্রান্ত বদলী বানিজ্য, সরকারী বে-সরকারি বরাদ্দ সকল বিষয় শিক্ষা অফিস সমন্বয় করে ৮ শিক্ষকের সাথে। চলতি বছরের শুরুতে বিদ্যালয় বদলি বানিজ্য ও সরকারি নতুন ১১ প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের বেতন-ভাতা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের ৪ শিক্ষকের কাছ থেকে ২৫হাজার টাকা করে স্কুল প্রতি ১লাখ টাকাসহ মোট ১১লাখ টাকা বানিজ্য করেছেন। এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন আকনের টেবিল পর্যন্ত বিষয়টি গড়িয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তৃষিত কুমার চৌধুরীর সাথে আলাপকালে বলেন, আমি বাসে বরিশাল যাচ্ছি প্রতিষ্ঠান থেকে কোন টাকা উত্তোলন করা হয়না। বরিশাল থেকে এসে বিষয়টি দেখব। উপজেলা বিল প্রদানকারী কর্মকর্তা ও নির্বাহী কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন বলেন, আমি তদারকি করতে পারিনি। উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার কাজের তদারকি করেন। উপজেলা প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, রাদ্দের টাকা প্রধান শিক্ষকের হিসাব নং-এ ছাড় করা হয়। তারা স্বাধীনমত খরচ করতে পারে। সব প্রতিষ্ঠান দেখা সম্ভব হয়না। কিছু প্রতিষ্ঠানে কাজ মোটামুটি হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিক্ষা অফিস


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ