চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
দুই
মরু হাওয়ায় দুগ্ধপোষ্য শিশু ইসমাঈলের শুকিয়ে যাওয়া কন্ঠ সিক্ত করতে কিভাবে সংগ্রহ করবেন একটু পানি। নিম্নভূমিতে কচি শিশুকে রেখে আরোহণ করলেন সাফা পাহাড়ের চূড়ায়। চতুর্দিকে দৃষ্টি ফেরালেন, কোথাও নেই পানির কোন চিহ্ন। ছুটলেন আবার সামনের পাহাড়টিতে। মারওয়ার চূড়ায় উঠে চতুর্দিকে দৃষ্টি ফেরালেন। না, কোথাও নেই পানি। আবার সাফাতে গিয়ে আরেকটু ভাল করে দেখার চেষ্টা। আবার মারওয়াতে, একে একে সাতবার দু’পাহাড়ের মধ্যে ছুটাছুটি করেও পানির সন্ধান না পেয়ে বিফল মনোরথে ছুটে এলেন কলিজার টুকরা সন্তানটির পাশে। এসেই দেখলেন কচি শিশুর সামনেই প্রবাহিত হচ্ছে যমযমের ফোয়ারা। সে যমজম থেকেই আজকে আমরা পানি পান করছি। মহিয়ষী সে মহিলার পুণ্যময় স্মৃতি সাফা- মারওয়ার মহান রাব্বুল আলামীন।
স্মরণ করুণ, বহুদিন পর নবী ইবরাহীম (আঃ) এসেছেন পরিবারকে দেখতে। উদীয়মান কিশোর ইসমাঈল কত সুন্দর হয়ে বড় হয়ে উঠছেন। পিতার মনে কত আশা। এ সন্তান তাঁর উত্তরসূরি হয়ে কত বিরাট দায়িত্ব পালন করবে। প্রভূর কাছ থেকে স্বপ্নে ইঙ্গিত এলো, কলিজার টুকরো সন্তানকে কুরবানী করে দিতে হবে। ঐশী নির্দেশ লংঘনের কোন উপায় নেই। অগত্যা ইসমাঈলকে ডেকে বললেন, ঐশী নির্দেশের কথা। সুযোগ্য সন্তান নির্ভীকচিত্তে বললেন, ‘‘হে পিতা! আপনার প্রতি প্রদত্ত নির্দেশ কার্যকরী করুন, আল্লাহ চান তো আমাকে ধৈর্য্যশীল হিসেবেই পাবেন’’-(ছাফ্ফাত ঃ ১০২)। সে নির্দেশ কার্যকরী করতে পিতা-পুত্র মিনা প্রান্তরে গেলেন। শয়তান তাদেরকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা’য়ালা ইবরাহীম (আ:) কে বললেন, তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গেছেন। সন্তানের পরিবর্তে দুম্বা কুরবানী করার নির্দেশ দিলেন। সে কুরবানীই আজ আমরা ঈদুল আযহার দিনে আমল করে যাচ্ছি। হাজী সাহেবানরা মিনার সে প্রান্তরেই সে প্রক্রিয়ায় কুরবানী করে যাচ্ছেন। অতঃপর আসে বাইতুল্লাহ নির্মাণের ইতিহাস। পিতা-পুত্র প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম করে নির্মাণ করছেন আল্লাহর ঘর। আর প্রভূর কাছে ফরিয়াদ করছেন, হে প্রভূ! আমাদের এ প্রচেষ্টা কবুল করুন। আল্লাহ কবুল করলেন এবং নির্দেশ দিলেন ইবরাহীম (আ:)কে এ পবিত্র ঘরের হজ্ব আদায়ের জন্য আহ্বান জানাতে। সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে আজও আমরা ছুটে যাই পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকে সে ঘরের দিকে। তারপর এ ঘরকে এবং পবিত্র ভূমিকে ঘিরে রয়েছে আমাদের প্রিয় নবীর ইতিহাস। জন্ম সূত্রেই তিনি পিতৃহারা। তারপর মা হারিয়ে পূর্ণাঙ্গ ইয়াতিম। দাদা এবং চাচার তত্ত¡বধানে এ মক্কার অলিগলিতেই তিনি বড় হলেন। চল্লিশ বৎসর বয়সে আল্লাহ তাঁর প্রকৃত দ্বীনের সন্ধান পেতে মক্কারই এক পাহাড়ে ধ্যানে মগ্ন থাকছেন দিনের পর দিন। সে হেরা গুহাতেই নাযিল হল (ইক্বরা ....পড়–ন আপনার প্রভূর নামে ....)।সে থেকেই শুরু হয়ে গেল ঐশী বিধান নাযিলের ধারা। মূর্তিপূজা থেকে উদ্ধার করে তাওহীদের দিকে আনতে শুরু করে দিলেন দাওয়াতী কাজ। প্রথমে সংগোপনে, তারপর প্রকাশ্যে। জাবাল আবু কুবাইছ যা সাফা পাহাড়ের সন্নিকটে দাঁড়িয়ে ডাকলেন সবাইকে। আবেগ এবং যুক্তি সহকারে দাওয়াত দিলেন। আবু জাহ্ল গং শুধু প্রত্যাখ্যানই করলো না বরং এ দাওয়াতকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ব্যাপারে তাদের সংকল্প ঘোষণা করলো। দীর্ঘ ১৩ বৎসর মক্কা নগরীতে দাওয়াতের ফলে বেশ কিছু নর-নারী ইসলাম কবুল কররেও অধিকাংশ মক্কাবাসী শেষ পর্যন্ত ইসলামের বিরুদ্ধেই চলে গেল এবং মুসলমানদের উপর অত্যাচার, নির্যাতনের স্টীম রোলার চালাতে লাগল। শেষ পর্যন্ত নবী করীম (সা:) এবং সাহাবায়ে কেরাম মক্কাভূমি ত্যাগ করে হিজরত করলেন মদীনা মনোয়ারার দিকে। রাসূল (সা:) কে চূড়ান্তভাবে কতল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো মক্কার কাফেরগণ যে দারুণ নাদওয়াতে বসে, পবিত্র কাবা থেকে খুব দূরে ছিল না সে মিটিং হলটি। কাফেরদের চোখে ধুলা দিয়ে নবী করীম (সা:) যে পাহাড়ের গুহায় লুকিয়েছিলেন, সে গারে ছাওর মক্কা শহরের অনতিদূরে আজও সাক্ষ্য বহন করছে, হিযরতের ইতিহাসের। মদীনা থেকে ৮ বৎসর পর পুনরায় বিজয়ীর বেশে প্রবেশ করলেন তিনি তার জন্মভূমিতে। নির্মূল করে দিলেন শিরক আর মূর্তিপূজার আখড়া বাইতুল্লাহ থেকে। তারপর হজ্ব ফরয করা হলো। তিনি হজ্ব করলেন, আমাদেরকেও হজ্বের নির্দেশ দিলেন। সে থেকে শুরু হলো এ উম্মতের হজ্ব প্রক্রিয়া, যার ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে। আমি যখন মক্কা-মদীনার অলিগলিতে পদচারণ করি, তাওয়াফ করি, এমনও তো হতে পারে যে, আমার পা কোন সময় এমন জায়গায় গিয়ে পড়ছে, যেখানে নবী করমী (সা:) পা দিয়েছিলেন। এমন অনুভূতি আর ইতিহাস মনে রেখেই হজ্ব করা উচিৎ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।