Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অপ্রতুল পরিবহন চলাচল

বাস চলাচল শুরু

আবদুল্লাহ আল মামুন : | প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

এক সপ্তাহের বেশি সময় রাজধানীতে যানবাহন বন্ধ থাকার পরে গতকাল থেকে চলাচল শুরু হলেও সড়কে বাসের সংখ্যা ছিল খুবই সীমিত। এতে বেশিরভাগ যাত্রী যথাসময়ে অফিস-আদালতসহ গন্তব্যে পৌঁছতে পারেননি। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নারীরা। ঘন্টার পর ঘন্টার দাঁড়িয়ে থেকেও তাদের অনেকে বাসে উঠতে পারেননি। ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ, পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বাস চালুর ঘোষণা দিলেও ঢাকার রাজপথে গনপরিবহনের সংখ্যা ছিল খুবই নগন্য। এদিকে, পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলেন, রাজধানীসহ সারাদেশের গণপরিবহন চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।
গত ২৯ জুলাই রাজধানীতে বেপরোয়া একটি বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে ঘাতকদের বিচারদাবীসহ যানবাহনের কাগজ তল্লাশী চালায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা সারাদেশে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে অলিখিত ধর্মঘট শুরু করে।
গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর গুলিস্তান, শাহবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, মালিবাগ, মগবাজার, কারওয়ানবাজার, সায়েন্স ল্যাব, আজিমপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী ও গাবতলী এলাকা ঘুরে খুবই কম সংখ্যক গণপরিবহন চলতে দেখা গেছে। এসব সড়কে ব্যক্তি মালিকানাধীন বাসের পাশাপাশি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) কিছু সংখ্যক বাসও চোখে পড়েছে। তবে বাসের তুলনায় অপেক্ষমান যাত্রীদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। কোন কোন এলাকায় ঘন্টার ঘন্টার পর ঘন্টাও দাড়িয়ে থেকেও যাত্রীরা বাসে উঠতে পারেনি। একটি বাস থামার সঙ্গে সঙ্গে ২০ থেকে ৩০ জন তাতে হুমরি খেয়ে পড়ে। কোন বাসে পুরুষ যাত্রীরা ধাক্কা ধাক্কি করে উঠতে পারলে নারীরা হা করে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল। এতে অফিসগামী যাত্রীদের চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে। যথাসময়ে কেউ গন্তব্যে পৌছতে পারেননি। যাত্রীদের অভিযোগ, পরিবহন নেতারা বাস চালুর ঘোষণা দিলেও পর্যাপ্ত বাস রাস্তায় নামায়নি তারা। অভ্যন্তরীন পরিবহনের পাশপাশি রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দূরপাল্লার রুটেও স্বল্প পরিমানে বাস ছেড়ে যেতে দেখা গেছে।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির মধ্যে কিছু দূরপাল্লার বাস উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার উদ্যেশ্যে গাবতলী টার্মিনাল ছেড়ে যাচ্ছে। এ সময় ঢাকায়ও দূরপাল্লার অনেক বাস ঢুকছিল। তবে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসের সংখ্যা ছিল খুবই কম। টার্মিনালগুলোতে অনেক যাত্রী ব্যাগ ও লাগেজসহ অপেক্ষা বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। টিকেট কেটেওে বাস না আসায় অনেকে টার্মিনালের খোলা জায়গায় ঘুমিয়ে পড়ে। তবে ঢাকায় প্রবেশ ও ছেড়ে যাওয়ার সময় অধিকাংশ বাসের লাইসেন্স ও কাগজ তল্লাশী করতে দেখা গেছে পুলিশকে।
রায়েরবাগে আলী আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী জানান, ‘তার কোচিং ক্লাস শুরু হবে সকাল ১০টায়। অথচ তিনি নীলক্ষেতে যাওয়ার জন্য বের হয়ে ৪৫ মিনিট যাবত গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। অনেক্ষণ পর দুই একটি বাস বা লেগুনা আসলেও যাত্রীর অধিক চাপের কারণে তাতে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না।,
ঠিকানা পরিবহনের চালকের সহকারী রুহুল আমিন জানান, ‘রোববার রাতে কোম্পানি আমাদের ডেকে নিয়ে আজ (সোমবার) সকাল থেকে গাড়ি নামাতে বলেছেন। আমরাও সকালে থেকে যাত্রী বহন শুরু করি। তবে যাত্রীদের তুলনায় গাড়ির সংখ্যা অনেক কম। অনেকের লাইসেন্স ও কাগজপত্র ঠিক না থাকায় তারা বের হতে পারেনি।’
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে বাসের জন্য অপেক্ষায় করছিলেন এক নারী। তিনি ইনকিলাবকে জানান, প্রায় দেড় ঘন্টা যাবত দাড়িয়ে থেকেও কোন বাস বা সিনজিচালিত অটোরিকসা পাচ্ছি না। আজকে অফিসে যেতে ১১টার বেশি বাঁজতে পরে বলে ওই কর্মজীবী নারী আক্ষেপ করেন।
গাবতলীতে গিয়েও রাস্তার পাশে পাশে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ঘন্টার ঘন্টার দাড়িয়ে থেকে তারা কেউ গুলিস্তান, সদরঘাট ও মতিঝিলের গাড়ি পাচ্ছেন না। গুলিস্তানের এক কাপড় দোকানী জানান, এক ঘন্টা ধরে কোন গাড়ি পাচ্ছেনা না। কখন দোকান খুলবো তাও বলতে পারছি। তিনি পরিবহন মালিকদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘মালিকপক্ষ ইচ্ছে হলেই যাত্রীদের সঙ্গে খামখেয়ালিপনা করে।’
গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ীগামী ৮ নম্বর বাসের চালক জাফর আলী জানান, ‘কয়েকদিন গাড়ি বন্ধ থাকায় অনেক চালক ও হেলপার গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। এ জন্য গাড়ির সংখ্যা অনেক কম। এ ছাড়া অনেকের লাইসেন্স না থাকায় তারা সেগুলো ঠিক করার কাজে ব্যস্ত আছে। কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে এই চালক জানান।
নগরীর অভ্যন্তরে যেমন গণপরিবহনের সংকট ছিল তেমন দূরপাল্লার বাসের জন্যও দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষা করেও যেতে পারেননি অনেকে। আকলিমা বেগম নামে এক গৃহবধূ জানান, ভোর ৫টা থেকে রংপুরের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। সাড়ে ৮টা বাজলেও এখনো কোন গাড়িতে টিকেট পাইনি। জরুরী প্রয়োজনে বাড়ি যেতে হচ্ছে বলে ওই নারী জানান।
গাবতলীতে শ্যামলী পরিবহনের এক কর্মকর্তা জানান, ‘দেশের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। যার কারণে মালিকরা এখনও রাস্তায় গাড়ি নামাতে সাহস পাচ্ছে না। পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত হলে বাস চলাচল আগের মতো স্বাভাবিক হবে।’
একই টার্মিনালের হানিফ পরিবহনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন জানান, ‘সোমবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন রুটের বাসগুলো গাবতলী থেকে ছাড়া শুরু করেছে। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন পরিবহনের বাসগুলো বেশির ভাগই তাদের নিজ জেলাতে রয়েছে। সেগুলো দুপুর থেকে ঢাকার দিকে রওনা হলে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস পরিবহনের ব্যবস্থাপক মো. বোরহান জানান, ‘তাদের বেশিরভাগ বাস সাতক্ষীরাতে রয়ে গেছে। এছাড়া অনেক চালক ও হেলপার ছুটিতে আছে। বাসগুলো ঢাকায় আসলে রাত থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে। তবে দু’একদিনের মধ্যে পুরো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে’
এদিকে, গতকাল ফার্মগেট থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা যাওয়া আসার পথে ট্রাক স্ট্যন্ডে সব ধরণের গাড়ি আটকে দিতে দেখা গেছে পরিবহন শ্রমিকদের। তাদের ভাষ্য, ‘প্রস্তাবিত আইনে সড়কে যানবাহনের নিচে চাপা পড়ে কেউ মারা গেলে মৃত্যুদন্ডের শাস্তি রাখা হয়েছে। আমরা এমন আইন মানি না। ফাঁসির আইন মাথায় নিয়ে কেউ গাড়ি চালাতে পারবে না।’
গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুটি বাসের প্রতিযোগিতায় জাবালে নুর পরিবহনের একটি বাসের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলে দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। ওই ঘটনায় রাজধানীসহ সারা দেশের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ঘাতকদের শাস্তির দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। এ সময় শিক্ষার্থীরা সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন যানবাহনের লাইসেন্স ও কাগজপত্র পরীক্ষা ও যাচাই-বাচাই করলে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা সারাদেশে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে অলিখিত ধর্মঘট পালন শুরু করে। তবে শুক্রবার রাতে দূরপাল্লার কিছু যান চলাচল শুরু করলেও শনিবার থেকে নিরাপত্তার অভাব দেখিয়ে তাও বন্ধ করে দেন মালিক সমিতি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার রাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বাস মালিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে সোমবার সকাল থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে বাস নামানোর সিদ্ধান্ত নেয় মালিকরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যানবাহন

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ