Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ঐতিহাসিক টেস্ট ইংল্যান্ডেরই

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

এজবাস্টনে এশিয়ার কোন দেশ টেস্টে জিততে পারেনি। বিরাট কোহলির ব্যাটে সেই আশাই দেখছিলো ভারত। কিন্তু বেন স্টোকস তা হতে দিলেন না। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনে ম্যাচটা নিজেদের করে নিলো ইংলিশরা। ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে হাজারতম টেস্ট খেলতে নামা ইংল্যান্ড ৩১ রানে জিতে স্মৃতিটা রঙিন করে রাখলো।
৫ সেশন হাতে রেখেই শেষ বার্মিংহাম টেস্ট। এটুকু পড়েই মনে জাগতে পারে ম্যাড়মেড়ে একটা ম্যাচ হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। ম্যাচের পুরোটা সময়ই কেটেছে রোমাঞ্চে। ছিল বৃষ্টির উপদ্রবও। ম্যাচের অধিকাংশ সময় জুড়েই ব্যাকফুটে ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু শেষ হাসিটা হেসেছে তারাই। তবে যারা চর্মচোখে ম্যাচের সাক্ষি হয়েছেন তাদের মনে গেঁথে থাকবে বিরাট কোহলির লড়াকু ব্যাটিংয়ের স্মৃতি। দুই ইনিংস মিলে কোহলির যেখানে ২০০ রান, সেখানে বাকিদের মিলিত সংগ্রহ ২১৪!
চতুর্থ দিনে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৫ উইকেট, ভারতের ৮৪ রান। সমীকরণটা ভারতের দিকেই ছিল। এবং সেটা বিরাট কোহলি ব্যাটে ছিলেন বলেই। ইংলিশরাও জানত কোহলিকে ফেরাতে পারলেই লাগাম নিজেদের হাতে চলে আসবে। ব্যাক আপ হিসেবে ছিলেন দিনেশ কার্তিও ও হার্দিক পান্ডিয়া।
দিনের প্রথম ওভারেই কার্তিককে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ বানান জেমস অ্যান্ডারসন। এগারো ওভারের মাথায় শেষ হয় কোহলির ১৮৫ বলে ৫১ রানের লড়াই। স্টোকসের মিডিল স্টামের বল ফ্লিক করতে গিয়ে লাইন মিস করেন কোহলি। সমস্বরে নেয়া ইংলিশদের আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার আলিম দার। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ভারত সেনাপতি। একই ওভারে মোহাম্মাদ সামিকেও উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন স্টোকস। জয়ের কিনারা তখনও ৫৩ রান দুরে। আশার প্রতীক হিসেবে ছিলেন পান্ডিয়া। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারের মাথায় তার লড়াইও শেষ হয় স্টোকসের বলে দ্বিতীয় স্লিপে কুকের কাছে ক্যাচ দিয়ে। এর আগে ইশান্ত শর্মাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন আদিল রশিদ।
একপেশে হতে থাকা ম্যাচকে রোমাঞ্চের দিকে নিয়ে যান কোহলি। প্রথম ইনিংসে আশ্বিন-সামিদের বোলিং প্রতিরোধ ভেঙে রুট ও বেয়ারস্টোর ব্যাটে ২৮৭ রানের চ্যালেঞ্চিং সংগ্রহ গড়ে ইংল্যান্ড। জবাবে ১০০ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসে ভারত। সেই স্কোরবোর্ড ২৭৪-এ রূপ নেয় শুধুমাত্র বিরাট কোহলির অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের কল্যাণে। এক প্রান্ত আগলে ইংল্যান্ডে প্রথম ও ক্যারিয়ারের ২২ তম সেঞ্চুরির পথে ১৪৯ রান করে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন কোহলি। শেষ উইকেটেও উমেশ যাদবকে নিয়ে গড়েন ৫৭ রানের জুটি। যেখানে উমেশের অবদান মাত্র ১! ইনিংসে আর ত্রিশোর্ধো ইনিংস নেই একটিও। দারুণ বোলিংয়ে ৪ উইকেট নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা স্যাম কারান।
অবিশ্বাস্য হলেও বোলার কারানের ব্যাটিংয়ের কারণেই ঐতিহাসিক ম্যাচে জয়ের সাক্ষি হতে পেরেছে ইংলিশরা। আশ্বিন-ইশান্তের বোলিং তান্ডবে ৮৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বসে জো রুট বাহিনী। সেই স্কোরকে ১৮০ তে নিয়ে যান কারান, ৬৫ বলে ৬৩ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে। দলও পেয়ে যায় ১৯৩ রানের লিড। বাকি সময়ে এই রানও অনতিক্রম্য করে তোলেন অ্যান্ডারসন-ব্রড-স্টোকস পেস ত্রয়ী। চার উইকেট নেন স্টোকস, দুটি করে অ্যান্ডারসন ও ব্রড।
৭৮ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে আগের দিনই লড়াইয়ের আভাস দিয়ে রাখে ইংল্যান্ড। প্রতিরোধের একমাত্র শক্ত দেয়াল হিসেবে ছিলেন কোহলি। আদম্য সেই প্রতিরোধ গুড়িয়ে যায় স্টোকসের সেই পাতা ফাঁদে। দুই ইনিংসেই দারুণ ব্যাটিং করেও তাই ম্যাচসেরা হওয়া হয়ে উঠেনি কোহলির। খাঁদের কিনার থেকে দলকে ফিরিয়ে এনে সেই পুরষ্কার হাতিয়ে নেন স্যাম কারান। ৫ উইকেট ও ৮৭ রান নিয়ে সর্বকনিষ্ঠ ইংলিশ হিসেবে টেস্টে ম্যাচসেরা হলেন ২০ বছর বয়সী।
পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে বিজয়ী অধিনায়ক জো রুটের প্রথম বাক্যই ছিল, ‘আমি রোমাঞ্চিত।’ পরাজিত অধিনায়ক কোহলি বললেন , ‘অসাধারণ ম্যাচ’। আর স্বপ্নের মাঝে থাকা ম্যাচসেরা কারান বলেন, ‘গত রাতে আমি চিন্তায় ঘুমোতে পারিনি। আজ ভালো একটা ঘুম হবে।’ ৯ আগস্ট লর্ডসে ৫ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের আগে বাড়তি একদিন সময়ও মিলল বিশ্রামের।

স ং ক্ষি প্ত স্কো র
ইংল্যান্ড : ২৮৭ (রুট ৮০, বেয়ারস্টো ৭০; আশ্বিন ৪/৬২, সামি ৩/৬৪) ও ১৮০ (কারান ৬৩, ইশান্ত ৫/৫১, আশ্বিন ৩/৫৯)।
ভারত : ২৭৪ (কোহলি ১৪৯, কারান ৪/৭৪) ও (লক্ষ্য ১৯৪) ৫৪.২ ওভারে ১৬২ (আগের দিন ১১০/৫)(কোহলি ৫১, কার্তিক ২০, পান্ডিয়া ৩১, সামি ০, ইশান্ত ১১, উমেশ ০*; অ্যান্ডারসন ২/৫০, ব্রড ২/৪৩, স্টোকস ৪/৪০, কারান ১/১৮, রশিদ ১/৯)।
ফল : ইংল্যান্ড ৩১ রানে জয়ী
সিরিজ : ৫ ম্যাচ সিরিজে ইংল্যান্ড ১-০তে এগিয়ে
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : স্যাম কারান (ইংল্যান্ড)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টেস্ট


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ