Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরার আহবান

বাবারা ঘরে ফিরে যাও : মিমের বাবা ও রাজীবের মা : পুলিশের গাড়িতে লাইসেন্স রাখার নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদেরকে ঘরে ফেরার আহবান জানিয়েছেন বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর বাবা-মা। দিয়া খানম মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম এবং আবদুল করীম রাজীবের মা মনোয়ারা বেগম বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ আহবান জানিয়েছেন। অন্যদিকে পুলিশের গাড়িতে লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে চালকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীরা গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় গাড়িচালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করে দেখছে। লাইসেন্সবিহীন চালকের গাড়ি আটকে দিচ্ছে তারা। এ পরিস্থিতিতে ডিএমপি পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় থেকে এমন নির্দেশ দেয়া হয়। অন্যদিকে সব দাবি পূরণে সরকার ও পুলিশ কাজ করছে জানিয়ে শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিতে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, তোমাদের যা যা দাবি রয়েছে তা বাস্তবায়নে সরকার ও পুলিশ কাজ করছে। আপাতত তোমাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করছি। শিক্ষার্থীদের ঘরে রাখতে শিক্ষক ও অভিভাবকদেরও অনুরোধ জানান তিনি।
তিনি বলেন, শিশুদের কাছ থেকে অনেক সময় অনেক কিছু শেখার আছে। শিক্ষার্থীরা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কী কী করতে হবে। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি। শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেয়ার বিষয়ে সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনার পর পুলিশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হয়েছে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করছে। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে লাইসেন্স পরীক্ষার কারণে গাড়ির দীর্ঘ জটলা সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে মুমূর্ষু রোগী, হজ্বযাত্রী ও বিদেশগামীদের ভোগান্তি হচ্ছে। তাই তাদের ঘরে ফিরে যেতে অনুরোধ করবো।
কোনো ধরনের উস্কানিতে কান না দিতে শিক্ষার্থীদের আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়েছে, যেখানে এক পুলিশ সদস্য এক ছাত্রের গলা চেপে ধরতে দেখা গেছে। কিন্তু ছবিটি ২০১৩ সালের, আর এ ঘটনায় সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) পলাশ চন্দ্র শাস্তির মুখোমুখি হয়েছিলেন। আরেকটি ছবিতে এক ছাত্রীকে পুলিশ লাঠিচার্জ করতে দেখা গেছে, সেই ছবিটিও ২০১২ সালের। এ থেকে প্রমাণিত হয় কেউ আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে ছাত্রদের উস্কানি দিচ্ছে। স্বার্থান্বেষীরা এ পর্যন্ত ৩শ’ গাড়ি ভাংচুর করেছে, এর মধ্যে পুলিশের পাঁচটি পিকআপ ভ্যানও রয়েছে। এ পযন্ত আটটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। যারা উস্কানি দিয়ে এ ধরনের কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে বলেও জানান তিনি। আন্দোলনরত শিশুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ডিএমপি ও পুলিশ কথা দিচ্ছে, আপনাদের দাবি বাস্তবায়ন হবে। আপনারা কোনো কথায় বিভ্রান্ত হবেন না। যারা এ সুযোগে ছাত্রদের বিভ্রান্ত করছে, তাদেরও শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
গত ৩১ জুলাই শিশুদের উপর লাঠিচার্জ করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পুলিশের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে যদি দেখা যায়, কোনো পুলিশ সদস্য দায়িত্বের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করেছে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ আন্দোলনে শিশুদের কথা মাথায় রেখে পুলিশ অনেক ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করেনি। ছাত্রদের বিষয়টি পুলিশ মানবিকভাবেই দেখেছে।
লাইসেন্স পরীক্ষার সময় অনেক পুলিশের ড্রাইভারেদের লাইসেন্স পাওয়া যায়নি, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশের সব ড্রাইভারেরই লাইসেন্স রয়েছে। অনেক সময় সঙ্গে নিয়ে যান না কিংবা অনেক সময় এমটি বিভাগে তাদের লাইসেন্স জমা রাখে। তাই হয়তো অনেক ক্ষেত্রে তাৎক্ষনিকভাবে তারা লাইসেন্স দেখাতে পারেননি।
দিয়া খানম মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম এবং আবদুল করীম রাজীবের মা মনোয়ারা বেগম জানান, প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে সান্তনার পাশাপাশি দোষীদের শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন। এতে তারা সন্তুষ্ট।
দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, আমার মেয়ে হত্যার বিচার পাব। তিনি আমাকে সান্ত¡না দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলছেন, কঠোর শাস্তি হবে হত্যাকারীর। আন্দোলনরত ছাত্রদের আমি বলবে, বাবারা তোমরা যারা রাস্তায় কষ্ট করছো, তোমরা ঘরে ফিরে যাও। রাজীবের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, সবাই আমার সন্তানের জন্য রাস্তায় নেমেছে। সবই হয়ে গেছে। এখন তোমরা যে যার ঘরে উঠে যাও। তোমাদের সবার কাছে অনুরোধ, তোমরা ঘরে ফিরে যাও।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ