বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
হাউমাউ করে কাঁদছেন দিলরুবা আক্তার দিলু (৩২)। পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়েছে স্বামী মহানগর যুবলীগের সদস্য আজাদ শেখকে (৩৫)। একমাত্র শিশু সন্তান অর্ণবও (৫) বাবাকে হারিয়ে শোকাতুর। মা-সন্তান দু’জনেরই শান্তিই যেন চিরদিনের জন্য উধাও হয়ে গেছে। দাদী সুফিয়া খাতুনের (৫০) মুখেও কোন কথা নেই। এই বয়োবৃদ্ধার জীবনেরও চিরস্থায়ী সঙ্গী হয়েছে শুধুই কান্না। মাত্র ৫ বছর বয়সী শিশুর মুখোমুখি হতে হয়েছে ভয়ঙ্কর এক নিয়তির। আর এই কারণে স্বামীর খুনিদের বিচার দাবিতে আপনমনে মা যখন হাউমাউ করে কাঁদছেন তখন শিশু অর্ণবের হৃদয়টাও ধুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। অবুঝ এই শিশুকে কোলে নিয়েই গতকাল বৃহস্পতিবার (০২ আগষ্ট) দুপুরে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মা দিলরুবা আক্তার দিলু (৩২) ও দাদী সুফিয়া খাতুন (৫০)সহ স্বজনেরা। এই সময় আবারো তাদের কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে ওই কমিউনিটি সেন্টারের বাতাস। অনেক সংবাদকর্মীদের চোখেও জল দেখা যায় সেই সময়।
প্রতিপক্ষের পৈশাচিক বর্বরতার মধ্যে দিয়ে হত্যাকান্ডের শিকার মহানগর যুবলীগের সদস্য আজাদ শেখের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার দিলু সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, তার স্বামীকে গুলি, কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যার পর তার কলিজাও ছিড়ে নেয় খুনিরা। পরে এই কলিজা ধর্মমন্ত্রীর ছেলে ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত’র হাতে তুলে দেওয়া হয়। হতভাগ্য দিলরুবা আক্তার দিলু অভিযোগ করে বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে মোহিত উর রহমান শান্ত (ধর্মমন্ত্রীর ছেলে) আমার স্বামী আজাদকে ফোন দেয়। ফোন দিয়া বলে, তোর কলিজা কত বড় হইয়া গেছে, আমার সাথে টক্কর দেস। তোর কলিজা ছিড়ে আমি দেখবো। আমার স্বামীকে হত্যার পর শান্ত ভাইকে তারা (খুনিরা) কলিজা দিয়া আসছে। শান্ত এবং মন্তু বাবু’র মোবাইল ট্র্যাক করলেই জানা যাবে, তাদের মাঝে কী কথোপকথন হয়েছে? আমি মোহিত উর রহমান শান্ত’র বিচার চাই, সন্ত্রাসীদের ফাঁসি চাই।’
এ সময় নিহত আজাদ শেখের ছেলে অর্ণব শেখ (৫), মা সুফিয়া খাতুন (৫০), বড় বোন আনোয়ার খাতুন, শেখ তুলি, আফরোজা শেখ ইতিসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। গত মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে সদর উপজেলার স্থানীয় নাজির বাড়ি এলাকায় ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য আজাদ শেখকে (৩৫) গুলি ও গলাকেটে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। পরে বিকেল ৩ টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে। হত্যাকান্ডের সময় পুলিশের নীরব ভূমিকার অভিযোগ করে নিহত আজাদ শেখের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার দিলু বলেন, ‘আমি ডিবি পুলিশকে গিয়ে বলি, আমার স্বামীকে ওরা তুলে নিয়ে গেছে। এরপরও পুলিশ কোন কথা শুনে নাই। ওরা আমার স্বামীকে গুলি ও জবাই করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।’ নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, ধর্মমন্ত্রীর ছেলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত’র হাত ধরেই যুবলীগের রাজনীতিতে উত্থান ঘটে আজাদ শেখের। এরপর বিভিন্ন কারণে বনিবনা না হওয়ায় আজাদ শেখ তার গ্রæপ ছেড়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ও ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো: ইকরামুল হক টিটু’র নেতৃত্বাধীন গ্রুপে যোগ দেন। মূলত এই নিয়ে বিরোধের জের ধরে স্থানীয় আকুয়া মোড়লপাড়া এলাকার শেখ ফরিদের সঙ্গে গত দেড় মাস যাবত থেমে থেমে সংঘর্ষ ও গুলাগুলি হয়। এ বিষয়ে ধর্মমন্ত্রীর ছেলে ও ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, রাজনৈতিক কারণে তাকে এই হত্যাকান্ডে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। পুলিশ প্রকৃত ঘটনা জানে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।