পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় টানা চতুর্থ দিনের মতো গতকাল বুধবারও রাজধানী ছিল উত্তাল। অধিকাংশ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে করে পুরো ঢাকা অচল হয়ে পরে। দিনের শুরু থেকেই নগরীর রাজপথগুলো ছিল অনেকটাই ফাঁকা। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ময়মনসিংহসহ বেশ কিছু শহরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে সরাসরি মাঠে থাকতে না পারলেও তাদের সমর্থন দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন অনেক তারকা। গতকাল বিকেলে জাবালে নূর নামে সেই বাসটির মালিক মো. শাহাদাৎ হোসেনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১।
গতকাল বিকেলে শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার মধ্যে ৯দফা দাবি মেনে নিতে হবে। অন্যথায় শাহবাগে অবস্থান নিয়ে ঢাকা শহর অচল করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পর শিক্ষার্থীদের দাবি নেমে নেয়ার কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। রাজধানীর বেশ কয়েকটি জায়গায় শিক্ষার্থীদের মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাত্রাবাড়িতে চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করার সময় শিক্ষার্থীর উপর দিয়ে পিকআপ চালিয়ে পালিয়ে গেল এক চালক। ওই শিক্ষার্থীকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শাহবাগ এলাকা দিয়ে উল্টোপথে যাওয়ার সময় বাণিজ্যমন্ত্রীর গাড়ি আটকে দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকের লাইসেন্স রয়েছে কিনা তাও পরীক্ষা করে দেখেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের লাইসেন্স না থাকায় চালককে নামিয়ে দিতে দেখা গেছে। তবে রাজপথে নেমে আসা শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশকে কোনো ধরনের শক্তি প্রয়োগ না করার নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। গতকাল সারাদিন স্থবির হয়ে থাকার পর বিকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচির ইতি টেনেছে। এরপরই রাজধানীতে রিকশা ও মোটরযানের চলাচল ফিরে পায় চেনা চিত্র।
এদিকে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপের দাবিতে আগামী শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি দলমত নির্বিশেষে সবাইকে দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মানববন্ধনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিরোধের বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বাধ্য করতে সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানান। সংগঠনটির প্রচার সম্পাদক এ কে এম ওবায়দুর রহমানের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে হাতে হাতে ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে আন্দোলন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সহপাঠীদের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত চালক ও হেলপারের যথোপযুক্ত শাস্তিসহ রাজধানীর সব চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও দক্ষতা নিয়ে গুরুত্ব দেয়ার দাবি জানানো হয় আন্দোলন থেকে। নৌমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোকে যৌক্তিক মনে করছেন সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও অবরোধে অচল হয়ে পরায় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যানচলাচল ছিল খুবই কম। রাস্তায় গাড়ি একদম কম থাকায় সাধারণ মানুষ পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। তবে এ নিয়ে বিরক্তি দেখাননি কেউ।
বিক্ষোভ শেষে লাইসেন্স তল্লাশি : গতকাল বিকেল ৪টার পর অবরোধ তুলে নিলেও এবার প্রতিবাদের ভিন্নপন্থা খুঁজে নিয়েছে তারা। ছাত্রছাত্রীরা ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যানবাহন আটকে কাগজ ও চালকের লাইসেন্স তল্লাশি করেছে। সরেজমিন দেখা যায়, চালকের লাইসেন্স না থাকলে তারা গাড়িসহ জব্দ করে ট্রাফিক পুলিশের কাছে সোপর্দ করছেন। আর সবকিছু ঠিক থাকলেই গাড়িগুলো যেতে দিচ্ছেন। বিষয়টি বেশ ভালোভাবে উপভোগ করছেন উৎসুক জনতা। গাড়ি আটক হলে ফুটপাথে থাকা জনতা হাততালি দিয়েও সমর্থন দিচ্ছিলেন।
সেই ছেলেটি হাসপাতালে/যাত্রাবাড়ি : গতকাল বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর অন্যান্য জায়গার মতো শনির আখড়ায়ও আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। তারা বিভিন্ন বাস আটকে চালকদের লাইসেন্স দেখছিল। যেসব চালকের লাইসেন্স নেই তাদের গাড়ি সাইড করে রাখতে বলছিল। এ সময় রাস্তা ফাঁকা পেয়ে উল্টোপথ দিয়ে একটি পিকআপ দ্রুতগতিতে চলে আসে। শিক্ষার্থীরা সেটিকে আটকানোর চেষ্টা করে। তখন পিকআপ চালক গাড়ি না থামিয়ে গতি আরো বাড়িয়ে দেয় এবং এক শিক্ষার্থীকে চাপা দিয়ে চলে যায়। তার নাম ফয়সাল। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সাইনবোর্ড এলাকায় প্রোঅ্যাকটিভ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে সে। হাসপাতালের ম্যানেজার ডাক্তার সালাউদ্দিন ভূইয়া জানান, ফয়সালের অবস্থা শঙ্কামুক্ত। তার বাবা শামসুল হক জানান, ফয়সালের বাম পা, হিপ জয়েন্ট ও ঠোঁটে আঘাত লেগেছে। তাকে ১২টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তার এ টি এম বাহার উদ্দিন ও এহতাশামুল হকের তত্ত্ববাধানে চিকিৎসাধীন সে। প্রাথমিকভাবে আর কোনো তথ্য জানাতে পারেননি তিনি। ফয়সাল সরকারি তোলারাম কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। সকালে কলেজে যাওয়ার কথা বলে সে বাসা থেকে বের হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জানতে পারি সে পিকআপের নিচে পড়েছে। গতকাল সকালে ঢাকার প্রবেশপথ শনির আখড়ায় সড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে শনির আখড়া থেকে যাত্রাবাড়ি-সায়েদাবাদের রাস্তা ও ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের রাস্তা অচল হয়ে পড়ে। ঢাকায় প্রবেশের পথে ব্যস্ততম এই সড়ক বন্ধ করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তারা পায়ে হেঁটে যে যার গন্তব্যের দিকে রওনা হন। সকাল সোয়া ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত রায়েরবাগ স্ট্যান্ডে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। শনির আখড়ার দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া দেয় সাদা পোশাকের কয়েকজন। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, তারা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। পুলিশ তাদের কিছুই বলেনি।
পুলিশের ডেমরা জোনের সহকারী কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, সকাল ৯টা থেকে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। ছাত্ররা ৯ দফা দাবির কথা বলছেন। তবে দাবিগুলোর অনেকগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া তো চলছে। আমরা আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে কথা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করি।
উত্তরা : গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে উত্তরার হাউস বিল্ডিং এবং জসীমউদ্দীন মোড়ে অবস্থান নিয়েছে উত্তরা ইউনিভার্সিটি, মাইলস্টোন কলেজ, স্কলাস্টিকা, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিমানবন্দর উত্তরা রোডে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে বিকেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
শান্তিনগর ও বেইলি রোড : রাজধানীর শান্তিনগর ও বেইলি রোডের সড়কে অবস্থান নিয়েছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের ছাত্রীরা। বুধবার দুপুর থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কাকরাইল থেকে মালিবাগের সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এ সময় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে সেøাগান দেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সাইন্সল্যাবরেটরি : বেলা ১১টা থেকে সাইন্সল্যাবরেটরি এলাকায় আসতে শুরু করে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা কলেজ, উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মুন্সী আব্দুর রউফ কলেজ ও বিজ্ঞান কলেজ, শেখ বোরহান উদ্দিন কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। তারা বেশ কয়েকবার মিছিল নিয়ে আশপাশের বিভিন্ন সড়ক প্রদিক্ষণ করে। এ সময় সাইন্সল্যাবসহ আশপাশের সব সড়কে যানচলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় তারা। তবে রোগী ও অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবার গাড়িগুলোকে নিজেরা পার করে দেয়। বেলা ১১টা থেকে বিকেল পর্যন্ত তাদেরকে অনেকগুলো রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স পার করে দিতে দেখা গেছে। বিক্ষোভকালে একটি বাস, পুলিশকে বহনকারী একটি লেগুনায় ভাঙচুর চালায় শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া একটি ওষুধ কোম্পানির গাড়ি শিক্ষার্থীদের তোয়াক্কা না করে সামনে এগুতে চাইলে শিক্ষার্থীরা সেটির জানালার কাঁচ ভেঙে দেয়।
ঢাকা কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মুর্শিদ মাহবুব বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবি কেবলমাত্র স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নয়, এ দাবি দেশের সকল মানুষের। তিনি নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ঘাতক বাসচালকদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন।
সিটি কলেজের ছাত্রী উম্মে ফারিহা বলেন, দুর্ঘটনার পর লোক দেখানো আটক করে দেশের মানুষের চোখে দেয়া হয়। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। পরিবহন সংশ্লিষ্টদের কাছে সাধারণ মানুষের কাছে মূল্য নেই। সরকার তাদেরকে বারবার সমর্থন দেয়ায় তারা এতটা বেপরোয়া হয়ে গেছে বলে ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ করে। শিক্ষার্থীদের হাতে বিভিন্ন ব্যানার ও প্লেকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করে। এসব প্লোকর্ডে ‘নির্বিচারে হত্যার পর পরিহাসের হাসি কেন?, ঘুরে বেড়ায় অপরাধী মার খায় প্রতিবাদী, উই ওয়ান্ট জাস্টিস, ক্ষমা চেয়ে কী হবে ভাঙা গাড়ি সরাবা কবে, ফাইভ জি চাই না নিরাপদে ঘরে ফিরতে চাই, ৯ দফা মেনে নাও রাজপথ ছেড়ে দেবোসহ বিভিন্ন দাবি দাওয়া লিখিত ছিল।
শাহবাগ : সকাল ১০টার পর থেকে শাহবাগে আসতে শুরু করে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার পর তারা শাহবাগসহ আশপাশের সড়ক পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। তবে অসুস্থ রোগী, রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি প্রয়োজনের গাড়িগুলোকে নিজেরা সহযোগিতা করে রাস্তা পার করে দেয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী হাসিব হাসান সবার উদ্দেশে বক্তৃতাকালে নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি মেনে নিতে আল্টিমেটাম দেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার মধ্যে নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি মেনে নিতে হবে। অন্যথায় ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশ অচল করে দেয়া হবে। ক্ষুব্ধ এই শিক্ষার্থী দেশের সব জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নেমে এসে আন্দোলনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান। এ সময় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খাঁনের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একত্মতা প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন মেডিক্যালের অনেক শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখা গেছে। এদিকে, সচিবালয় থেকে বেরিয়ে উল্টো বাংলামোটরে যাওয়ার সময় তোপের মুখে পড়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের গাড়ি। পরে তিনি গাড়ি থেকে নেমে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের দাবির সঙ্গে একত্বতা জানান। তিনি অভিযুক্ত চালক ও হেলপারদের গ্রেফতারের বিষয়টি জানিয়ে কঠোর শাস্তির আশ্বাস দেন।
মিরপুর : সকাল ১০টার পর থেকে মিরপুরের বিভিন্ন সড়কে জড়ো হতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। মনিপুর স্কুল, শহীদ পুলিশ স্মৃতি, আদর্শ স্কুল, মিরপুর আইডিয়ালসহ আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নেয়। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। বেলা ৩টার দিকে মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে ইটপাটকেল মেরে ভাঙচুর চালিয়ে পরে সেটি উল্টে দেয়। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মিরপুর-১৩ নম্বরে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বিআরটিএ কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকতে গেলে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা তাদের বাধা দিয়ে গেট বন্ধ করে দেয়। পরে শিক্ষার্থীরা বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান দিয়ে ঘাতক বাস কোম্পানির রুট বাতিলসহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। তারা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, দুই শিক্ষার্থীর হত্যাকারীদের ফাঁস চাই, ফিটনেসবিহীন গাড়ির নিবন্ধন বাতিলসহ বিভিন্ন স্লোগান দেয়। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মিরপুরের বিভিন্ন জায়গায় ৯-১০টির মতো গাড়িতে ভাঙচুর চালায়।
ফার্মগেট : সকাল সাড়ে ৯টার পর ফার্মগেটে এসে রাস্তা দখল করে বিক্ষোভ শুরু করে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ ও তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা আশপাশের সব সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পরে অফিসগামী মানুষ। শিক্ষার্থীরা যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সে জন্য বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। বিজ্ঞান কলেজের ছাত্র ফারুক হোসেন জানান, আমাদের ৯ দফা দাবি মেনে নিলেই আমরা ঘরে ফিরে যাবো। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানায়, আমাদের ক্লাসে থাকার কথা অথচ আমরা জীবনের নিরপত্তার দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছি। এটা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাকর। রাষ্ট্র নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের পক্ষে সমর্থন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তেজগাঁও থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা ফার্মগেটে অবস্থান নিয়েছে। এতে চারপাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সব ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। উল্লেখ্য গত ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে (র্যাডিসন হোটেলের উল্টো দিকে) বাসচাপায় রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় বিমানবন্দর সড়কের বাঁ-পাশে বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো- দিয়া খানম মিম ও আব্দুল করিম। এ সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা জাবালে নূর পরিবহনের ওই বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় ও শতাধিক বাস ভাঙচুর করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে গতকাল বুধবার চট্টগ্রামেও রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। ‘যদি আন্দোলন করে আমার ভুল করে থাকি তাহলে ভুল করেছেন বঙ্গবন্ধু আমাদের আন্দোলন শিখিয়ে’ এমন প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ করেছে হাজারো শিক্ষার্থী। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা নগরীর কাজির দেউড়ি, জামালখান, চকবাজারসহ বিভিন্ন সড়কে অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন। এ সময় নগরীর একাংশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সমবেত শিক্ষার্থীদের মধ্যে চট্টগ্রাম কলেজ, বিএএফ শাহীন কলেজ, দেওয়ানহাট সিটি কর্পোরেশন কলেজ, বেপজা কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ ও সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ছিলেন। সকালে নগরীর কাজীর দেউড়ি মোড়ে সমবেত হয়ে মিছিল নিয়ে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এসে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশের অনুরোধে তারা সড়কের এক পাশ ছেড়ে দিয়ে বিক্ষোভ করেন। মিছিল থেকে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘পড়তে এসেছি, মরতে নয়’, ‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ’, ‘আর কত ছাত্রছাত্রীর জীবন নিয়ে বেপরোয়া চালকরা ক্ষান্ত হবে’। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিক্ষোভের পর পুলিশের অনুরোধে তারা বিক্ষোভ শেষ করে।
ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, দুই শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় ময়মনসিংহ নগরীর ৫/৬টি পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে নগরীর টাউন হল মোড় এলাকা থেকে এ বিক্ষোভ-মিছিল শুরু করে শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, স্থানীয় রয়েল মিডিয়া কলেজসহ বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে তিন থেকে চার শতাধিক শিক্ষার্থী নগরীর নতুন বাজার, গাঙ্গিনারপাড়, বাইপাস মোড়, পাটগুদাম ব্রিজ মোড় ও টাউন হল মোড়ে অবস্থান নেয়। প্রথম দিকে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করলেও হঠাৎ করেই সহিংস হয়ে পড়ে। এ সময় তারা এসব পয়েন্টে একাধিক ট্রাক, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেটকার ভাঙচুর করে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গাঙ্গিনারপাড় এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষার্থীরা মিছিল থেকে হঠাৎ কয়েকটি অটোরিকশা ভাঙচুর শেষে বেশ কয়েকটি দোকানও ভাঙচুর করে। এই সময় ভয়ে অনেকেই দোকান বন্ধ করে দেন। নগরীর ২ নম্বর টাউন ফাঁড়ি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (টিএসআই) ফারুক আহমেদ জানান, নগরীর টাউন হল এলাকায় একটি ট্রাক, ৫ থেকে ৭টি অটোরিকশা ও দু’টি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করেছে শিক্ষার্থীরা।
স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে সাধারণ শিক্ষার্থীরা গতকাল সকাল ১০টা থেকে নারায়ণগঞ্জ শহর অবরোধ করে রাখে। বিভিন্ন কলেজ এর শিক্ষার্থী ছাড়া অন্যান্য কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অবরোধে অংশ নিয়েছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা একটি বাসের গ্লাস ভাঙচুর করে। শিক্ষার্থীরা সিদ্ধিরগঞ্জের রাস্তা, সাইনবোর্ড লিংক রোডের রাস্তা, পাগলা ফতুল্লার রাস্তা, শহরের নিতাইগঞ্জের দিকের রাস্তাসহ পুরো চাষাড়া চত্বর অবরোধ করে রেখেছে। একপর্যায়ে সকাল ১১টা ৩০ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থীরা ট্রেন আটকে দেয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
বরিশালে বিক্ষোভ
বরিশাল ব্যুরো জানায় : বরিশালেও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষোভ চলাকালে নগরীর নবগ্রাম রোড-চৌমহনীতে অবরোধ সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীরা। এ অবরোধের ফলে মহাসড়ক ছাড়াও নগরীর সংযুক্ত আরো দুটি রাস্তায় যানবাহন আটকা পরে। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহার করে বিএমপি’র কোতোয়ালী থানার এসআই হাবিবুর রহমান। এ ঘটনায় গতকাল বিকেলে তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করে অবরোধ তুলে নেয়।
শাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
শাবি সংবাদদাতা জানান : রাজধানীতে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ আন্দোলনরত স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি একমত হয়ে জানিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। এতে বিভিন্ন বিভাগের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘আমাদের ছোট ভাই রক্তাক্ত কেন? জবাব চাই দিতে হবে’, ‘নিরাপদ সড়ক চাই, নিরাপদ জীবন চাই’ ‘হত্যাকারী চালক ও দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত কর’, ‘গাড়ি চাপায় মৃত্যু দুর্ঘটনা নয়, রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ড’, ‘লাশ হয়ে নয়, নিরাপদে বাড়ি ফিরতে চাই’, ‘খুনি চালকদের শাস্তি চাই, করতে হবে’ প্রভৃতি স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেন।
স্টাফ রিপোর্টার, সাভার জানান,
গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাসস্ট্যান্ডের নিউ মার্কেটের সামনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানের শিক্ষার্থীরা মহাড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। তখন ঢাকামুখী কয়েকটি যানবাহনে ইটপাটকেল ছুড়ে ও লাঠি দিয়ে আঘাত করে কাচ ভাংচুর করে। তখন ধামরাই-গুলিস্থানে চলাচলরত একটি বাসের চালকসহ অন্তত ৫জন আহত হয়েছে।
পরে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সড়িয়ে দিলে তারা মিছিল নিয়ে সিএন্ডবি’র দিকে চলে যায়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ জানান, ভাংচুরের চেষ্টা করেছিল কিন্তু পুলিশের উপস্থিতির কারনে পারেনি। তরে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।
এরআগে রাজধানীর প্রবেশদ্বার সাভারের আমিনবাজারে মীরপুর মফিদ-ই-আম স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আারিচা মহা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
এসময় ‘আমার ভাই কবরে কেন, উই ওয়ান্ট জাস্টিস, আমার বোন কবরে কেন, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ এই শ্লোগানে চারদিক উত্তপ্ত করে তুলে।
এদিকে এ বিক্ষোভ, প্রতিবাদ ও অবরোধের কারনে ঢাকা আরিচা মহাসড়কে তীব্র যানজটে সাময়িক বিপাকে পড়ে রোগীসহ সাধারন যাত্রীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।