Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নারীর কর্মসংস্থান বেড়েছে

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতেই সিংহভাগ, কাজের মান বাড়েনি, উচ্চপদে বৈষম্যের শিকার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

প্রতি বছর দেশে নারী কর্মসংস্থান বাড়ছে প্রায় ছয় শতাংশ হারে। সে তুলনায় পুরুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার মাত্র দেড় শতাংশ। জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুবাদে এক দশকের ব্যবধানে কর্মক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতির সংখ্যা বেড়েছে ৬৬ লাখ ৮২ হাজার। তবে নারীর এ কর্মসংস্থানের সিংহভাগই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। কর্মে নিয়োজিত নারীর মধ্যে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ রয়েছে কৃষিকাজে। দেশের শ্রমশক্তি নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে নারী কর্মসংস্থানের এ চিত্র উঠে এসেছে।
লেবার ফোর্স সার্ভে (এলএফএস) ২০১৬-১৭-এর তথ্যমতে, দেশে মোট ১ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। যদিও ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশে মোট নারী কর্মসংস্থান ছিল ১ কোটি ১৩ লাখ। এ হিসাবে ১১ বছরে নারী কর্মসংস্থানের সংখ্যা বেড়েছে ৭৩ লাখ ৫০ হাজার। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে ৬ লাখ ৬৮ হাজার ১৮২ জন নারী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছেন।
সংখ্যাগত বিচারে বিগত বছরগুলোয় নারীর কর্মসংস্থান ক্রমে বেড়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে নারী কর্মসংস্থানের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৬২ লাখ। এরপর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা ১ কোটি ৬৮ লাখ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ কোটি ৭৮ লাখে উন্নীত হয়।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, সংখ্যাগত প্রবৃদ্ধির উল্লম্ফনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারী কর্মসংস্থানের মান বাড়েনি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের ১ কোটি ১১ লাখ ৩০ হাজার নারী নিযুক্ত ছিল কৃষিতে, অর্থনীতির যে খাতটির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে সবচেয়ে কম। এছাড়া ৩১ লাখ ৪৫ হাজার নারী শিল্প খাতে ও ৪৩ লাখ ৭২ হাজার সেবা খাতে নিয়োজিত। বিবিএস নারীর কর্মসংস্থানের খাতভিত্তিক বিভাজন উপস্থাপন করছে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে। সে বছরের তুলনায় ২০১৬-১৭ সালে কৃষিতে নারী শ্রমিক কমেছে প্রায় ৮২ হাজার। একই সময়ে শিল্প ও সেবা খাতে নারী কর্মসংস্থানের সংখ্যা বেড়েছে যথাক্রমে ২ লাখ ৮৪ হাজার ও ৬ লাখ ৭৪ হাজার। যদিও নারীদের মাত্র ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত ছিল। প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত নারীরাও যথেষ্ট সংখ্যায় উঁচু পদে পৌঁছতে পারেনি।
উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডব্লিউইএবি) সভাপতি নাসরিন ফাতেমা আউয়াল বলেন, কর্মক্ষেত্র ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানা পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি দেশের আর্থসামাজিক সমতার ক্ষেত্রে বড় অর্জন। তবে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে নারীর সমান সুযোগ থাকলেও উচ্চপর্যায়ে গিয়ে তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। পারিবারিক ও সামাজিক বাধায় তারা প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে পৌঁছতে পারছেন না।
বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন দেশে নারী জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশ অথবা তারও বেশি কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে। সে তুলনায় বাংলাদেশে এখনো প্রায় ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ নারী কর্মসংস্থানের বাইরে রয়েছে। আবার কর্মে নিয়োজিত নারীর বড় একটি অংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে থাকায় তারা মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছে এবং তাদের প্রকৃত মজুরিও কমছে।
বিবিএসের শিল্প ও শ্রম উইংয়ের পরিচালক কবীর উদ্দিন আহমেদ বলেন, শ্রমিকদের মজুরি বাড়ছে। তবে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় কমছে প্রকৃত মজুরি। নারী জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ শ্রমশক্তির বাইরে থাকলেও তাদের প্রবেশটা দ্রুত হচ্ছে। তবে আশার কথা হলো, পাকিস্তান ও ভারতে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ কমলেও বাংলাদেশে এ হার দিনে দিনে বাড়ছে।
কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়তে থাকায় নারী বেকারত্বের হার কমছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে কর্মক্ষম নারী জনগোষ্ঠীর বেকারত্বের হার ছিল ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা কমে হয়েছে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। বিভিন্ন সহায়ক নীতি ও আইন নারীদের কর্মে যুক্ত হওয়ার পেছনে অবদান রাখছে। অর্থনৈতিক কাঠামোয় পরিবর্তনও এক্ষেত্রে ভ‚মিকা রাখছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নারী

১৫ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ