Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

অধ্যাপক আকমল হোসেনের খন্ডিত বক্তব্য প্রচারের প্রতিবাদ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৮, ১২:৩৮ এএম

অধ্যাপক আকমল হোসেনের একটি বক্তৃতাকে খন্ডিতভাবে উপস্থাপন করায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ৬৭ জন বরেণ্য ব্যক্তি। তাদের মধ্যে আছে গবেষক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, নির্মাতা, রাজনৈতিক কর্মী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। গতকাল সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতির মাধ্যমে তারা এ প্রতিবাদ করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৯ জুলাই ২০১৮ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের সংহতি সমাবেশে অধ্যাপক আকমল হোসেনের প্রদত্ত একটি বক্তৃতাকে খন্ডিতভাবে উপস্থাপন করে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সম্মানিত সদস্যগণ যে ভ্রান্ত প্রচারণা চালাচ্ছেন তাতে আমরা হতভম্ব ও ব্যথিত হয়েছি। তাই সেই ভ্রান্ত প্রচারণার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উপর হামলা ও শিক্ষকদের লাঞ্ছনা করার প্রতিবাদে গত ১৯ জুলাই, ২০১৮ নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের উদ্যোগে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অধ্যাপক আকমল হোসেন প্রকৃতপক্ষে যা বলেছিলেন তা হল “সেদিন আমার সহকর্মী তানজীমকে (ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজীমউদ্দীন খান) বলা হয়েছে যে সে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল কিনা। (ছাত্রলীগের কর্মীরা গত ১৫ জুলাই শহীদ মিনারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনের সময় যে পাল্টা মানববন্ধন করে সেখানে তারা এমন বক্তব্য দেয়)। এখন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করাটা যদি আপনার এধরনের আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কোনো যোগ্যতা হয়, তাহলে আমার মনে হয়, আমাদের অনেকেই সেই যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হবেন না। এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তানজীম বা ফাহমিদের (ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হক) বয়স মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে যাবার বয়সের সমান। আর মুক্তিযুদ্ধের মতো মহান একটি ঘটনা আমাদের জাতির জীবনে, সেটা নিয়ে যেভাবে অবস্থান নেয়া হয়, বক্তব্য রাখা হয়, তাতে আমার মনে হয়, যে মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করা হয়। আমার প্রশ্ন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী - তিনি কি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন? তার পিতা - তার পিতা, যিনি এই আন্দোলনের যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, যার মাধ্যমে তৈরী হয়েছিল, তিনি কি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন? তাহলে মুক্তিযুদ্ধের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই যে বিচার করা, কে প্রতিবাদ করতে পারবে, কে অন্যায় (অন্যায়ের প্রতিবাদ) করতে পারবে, সেটা আমার মনে হয় অত্যন্ত নেতিবাচক চিন্তা।”
অধ্যাপক আকমল হোসেনের তাঁর উপরিল্লিখিত বক্তব্যে এটা পরিস্কার যে তিনি এখানে প্রধানমন্ত্রী বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কাউকেই কোন কটুক্তি করেননি। বরং যৌক্তিকভাবে এটাই দেখাতে চেয়েছেন যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে না পারলেই যে কেউ প্রতিবাদ করতে পারবে না এটি একটি নেতিবাচক চিন্তা।
কিন্তু এত পরিস্কার বক্তব্য দেয়ার পরও অধ্যাপক আকমল হোসেনের এই বক্তব্যকে পরবর্তীতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সম্মানিত শিক্ষকগণ গত ২৪ জুলাই প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে খন্ডিতভাবে প্রচার করে এইভাবে: “গত ১৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে অত্যন্ত অপ্রাসঙ্গিকভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অধ্যাপক আকমল হোসেন (অবসরপ্রাপ্ত) বলেছেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী, তিনি কি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন? তাঁর পিতা...তিনি কি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন?’ আমরা বিস্মিত হই এই ভেবে যে, এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য সত্তে¡ও উক্ত সমাবেশের আয়োজকরা তার এ বক্তব্যের কোনো প্রতিবাদ তো করেনইনি বরং বাহবা দিয়েছেন।”
এভাবে অধ্যাপক আকমল হোসেনের বক্তব্যকে খন্ডিত ও বিকৃতভাবে অধ্যাপক আকমল হোসেনের বক্তব্যকে প্রচার করা হয়েছে। এই ভ্রান্ত প্রচারণা দ্বারা শিক্ষক সমিতির সদস্যগণ অধ্যাপক আকমল হোসেনকে যেভাবে হয়রানি ও বিপদগ্রস্ত করছেন সেটি যে কতটা নীতি-নৈতিকতাবর্জিত ও ন্যাক্কারজনক। আমরা মনে করি তারা নিজেদের ভুল স্বীকার করে অধ্যাপক আকমল হোসেনকে নিয়ে মিথ্যাচারের সমতুল্য ভ্রান্ত প্রচারণা চালানোর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বরং উচিত অধ্যাপক আকমল হোসেন ও জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা। সেই সাথে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যায়ের নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যেভাবে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের দ্বারা হেনস্তা করা হচ্ছে আমরা অনতিবিলম্বে তারও অবসান ঘটানোর দাবি জানাচ্ছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রতিবাদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ