পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তিন সপ্তাহ পরই পবিত্র ঈদুল আযহা। অথচ এরই মধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে জাল নোট কারবারীরা। জাল নোটমুক্ত বাজারের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা। চলতি মাসেই রাজধানীতে পৃথক দু’টি অভিযানে জাল নোট কারবারী চক্রের ৬ জনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩৯ লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়।
নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা জানান, জাল নোটসহ গ্রেফতারকৃতদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া এবং আইনের ফাঁক-ফোঁকর গলে সহজে বের হওয়ার কারণে এদের স্থায়ীভাবে প্রতিহত করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিবছর বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে বাজারে অর্থের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। জাল নোটের কারবারীরা মূলত এ বিষয়টি মাথায় রেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, ঈদুল আযহা উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে বিভিন্ন মূল্যমানের নতুন টাকার নোট ছাড়বে। আর এমন একটি সুযোগের অপেক্ষায় বসে থাকা জাল নোট প্রস্তুতকারী চক্র ও ব্যবসায়ীরা মাঠে নামবে। তাদের মূল টার্গেটই হচ্ছে ঢাকাসহ বড় বড় শহর ও উপজেলা পর্যায়ে পশুরহাট। এসব অসাধু কারবারীদের প্রতিরোধে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৯ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরা হল- জসিম মোড়ল, আব্দুল জলিল, সাগর ওরফে রিপন দাশ ও জালাল উদ্দিন। তাদের কাছ থেকে ৩২ লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতার ওই চারজন প্রায় বছর ধরে জাল নোট প্রস্তুত ও বাজারজাত করে আসছে। কল্যাণপুরের অভিযানের কয়েকদিন আগে ৪ জুলাই রামপুরা থেকে গ্রেফতার করা হয় ইছহাক মিয়া ও ওয়ারেছ আলী নামে দুই জাল নোট কারবারীকে। তাদের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাল নোটের উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা গ্রেফতারের কয়েকদিনের মধ্যেই আইনের ফাঁক ফোঁকর গলিয়ে জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসে। তাছাড়া অপরাধের তুলনায় শাস্তি কঠোর না হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যে তারা আবারও একই ব্যবসা শুরু করে। এর ফলে এসব চক্রকে ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নিয়েও পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বছরজুড়ে জাল নোট চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চললেও ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার আগে অভিযান জোরদার করা হয়। এ সময় প্রতিটি চক্র সক্রিয় হয়ে পড়ে। আশঙ্কা করা হচ্ছে আসন্ন ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই অনেক জাল নোট কারবারী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের সবচেয়ে বড় টার্গেট কোরবানীর পশুরহাটগুলো।
এ যাবত জাল নোট কারবারীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান নিয়ে র্যাবের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, জাল নোট উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ১ হাজার ৮৫টি অভিযান চালিয়েছে র্যাব। অভিযানে ১ হাজার ৭৫১ জন জাল নোট উৎপাদক ও ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা করা হয় ১ হাজার ৩২টি। অভিযানে জাল নোট তৈরিতে ব্যবহৃত কম্পিউটার ও বিভিন্ন সরঞ্জামসহ মোট ৯ কোটি ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৪২৪ টাকা মূল্যমানের বাংলাদেশী জাল নোট উদ্ধার করা হয়।
দেশীয় জাল নোটের পাশাপাশি বাহিনীটি বিপুল পরিমান বিদেশী জাল নোট উদ্ধার করে। র্যাবের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৮ লাখ ৩৮ হাজার ভারতীয় রূপি, ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯২ ইউএস ডলার, ৪৭ হাজার ইউরো, ১৫ হাজার ১৮০ সউদী রিয়াল, ইরাকি দিনার ১৫ হাজার, মিয়ানমারের কোয়াট ২ লাখ, মালয়েশিয়ান রিংগিত ৩ হাজার ৪৫১ হাজার, পাকিস্তানি রুপি, ও তুরস্কের আড়াই লাখ টাকার সমপরিমাণ জাল নোট উদ্ধার করেছে বাহিনীটি। এ ছাড়া অন্যান্য দেশের আরও ৪ লাখ ১৬ হাজার ৯১৭ টাকার সমমূল্যের জাল নোট উদ্ধার করে র্যাব।
গোয়েন্দা পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুধু বাংলাদেশী নয়, ইতোপূর্বে জাল নোট কারবারে জড়িত অনেক বিদেশী নাগরিককে আটক করা হয়েছে। তাদের কেউ সরাসরি উৎপাদন কেউ বাজারজাত প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। রাজধানীর জাল নোট চক্রের প্রশিক্ষিত মূল হোতাদের রয়েছে অত্যাধুনিক মেশিন ও যন্ত্রপাতি। বিভিন্ন ধাপে জাল নোট উৎপাদন থেকে বাজারজাত প্রক্রিয়া মনিটরিং করে।
জাল নোট কারবারে যুক্ত সদস্যদের বলা হয় ‘কম্পানি’। কয়েকজন সদস্য নিয়ে একটি কম্পানি গঠিত। তারা কয়েকটি ধাপে এ কাজ করে। এর মধ্যে প্রথম কাজ হল- ঈদের আগে ব্যাংকগুলো নতুন নোট ছাড়লে সঙ্গে সঙ্গে সংগ্রহ করা। পরবর্তীতে এসব নোটের হুবহু জাল নোট তৈরি করা। এসব নোট পাইকারি ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দেয় চক্রের দ্বিতীয় সারির লোকেরা।
এ ক্ষেত্রে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি ১ লাখ টাকার জাল নোট বিক্রি হয় ৮/১০ হাজার টাকায়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করে ১২/১৫ হাজার টাকায়। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতি ১ লাখ জাল নোট মাঠ পর্যায়ের এজেন্টদের কাছে বিক্রি করে ১৮/২০ হাজার টাকা করে। সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, জাল নোটের নির্দিষ্ট কোন বাজার মূল্য নেই। এটি নির্ভর করে কাগজ ও উৎপাদনের মানের ওপরে। কাগজের মান ভালো হলে দাম বাড়ে। আর কাগজের মান তুলনামূলক মাঝারি ধরণের হলে দামও কমতে থাকে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বিভিন্ন সময়ে জাল নোট কারবারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে আটক, মেশিন ও সরঞ্জাম উদ্ধার এবং তাদের বহু আস্তানা ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন না যেতেই জামিনে বেরিয়ে এসে তারা একই ব্যবসা শুরু করে। তিনি বলেন, যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে এবং কারাগার থেকে মুক্তির পর তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা গেলে জাল নোট চক্রকে নির্মূল করা সম্ভব।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মো. মাসুদুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঈদের আগে জাল নোট কারবারীদের তৎপরতা বেশি দেখা যায়। সে জন্য অভিযানও চলে বেশি। জাল নোট কারবারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চললে ঝুঁকি অনেকটা দূর করা সম্ভব।
উল্লেখ্য, নব্বই দশকে মামুন নামে এক টিস্যু পেপার ব্যবসায়ীর মাধ্যমে দেশে জাল নোটের প্রচলন শুরু। পরবর্তীতে জাকির, আমজাদ, রহিম বাদশা, ইমন, মাহাবুব মোল্লা, প্রফেসর সেলিম ওরফে কানা সেলিম, হুমায়ুন, মোস্তফা, সালমা, সগির মাস্টার, কামাল মাস্টার, মনির, জামান, পলাশসহ আরও অনেকে জাল নোট উৎপাদন ও বিক্রির অপরাধে গ্রেফতার হয়। জামিন নিয়ে ছাড়া পেয়ে তারা আবার আগের ব্যবসা শুরু করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।