পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাল টাকা নিয়ে প্রতি মুহূর্তে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। জাল টাকা বা বৈদেশিক মুদ্রাচক্রের সাধারণ সদস্যরা ধরা পড়লেও বহাল তবিয়তে রয়েছে টাকা লগ্নিকারী ও হোতারা। শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরে থেকেও বিপুল পরিমাণ জাল নোট আসছে। শুধু রাজধানী নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি এড়ানোর জন্য সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে গড়ে তুলা হয়েছে জাল টাকার কারখানা। মূল হোতারা দেশের বাইরে থেকে জাল নোটের কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে। এই চক্রের অনেক সদস্যই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে খুচরা পণ্যের ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে বাসা বাড়ি ভাড়া নিয়ে এই অপরাধ করে যাচ্ছে। তারা শুধু নিজ দেশের টাকা নয়, পার্শ্ববর্তী দেশের নোট তৈরি করে দালালের মাধ্যমে পাশের দেশে সরবরাহ করে যাচ্ছে। দুই দেশের সীমান্তে সক্রিয় রয়েছে ২১০টি চক্র।
জাল নোট চক্রের সদস্যরা মাঝে মধ্যে ধরা পড়ার পর মামলা হলেও তদন্ত বেশি দূর এগুয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রামে নৌবন্দরে কন্টেইনার থেকে ২ কোটি ৭১ লাখ ৫০০ ভারতীয় জাল রুপি আটক করা হয়েছিল। ওই মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। সিআইডির একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, দুবাই কেন্দ্রিক একটি সিন্ডিকেট এর সাথে জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে তদন্তের সাথে জড়িতরা। এর পর তদন্ত নানা কারণে থেমে রয়েছে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, জাল টাকা বা জাল রুপী-এটা অর্থনীতির জন্য খুবই ভয়ঙ্কর। জাল টাকা ও আসল টাকার মধ্যে যদি পার্থক্য না করা যায়। এর ফলে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, অন্যদিকে এ টাকা দেশের ক্ষতি ও সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহার করার সম্ভাবনা রয়েছে। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সূপার মোল্যা নজরুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, জাল নোট কারবারীদের গ্রেফতার সক্রিয় রয়েছে সিআইডিসহ পুলিশের একাধিক টিম। এর সাথে জড়িতদের অনেকেই ভারতসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করায় এদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা যাতে দ্রæত জামিনে বেরিয়ে আসতে না পারে সে জন্য কাজ করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, গত ১৭ ডিসেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ ও ভারত জাল নোট সংক্রান্ত যৌথ টাস্ক ফোর্সের চতুর্থ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় দুই দেশ জাল টাকা চক্রের সক্রিয় গ্রুপগুলোর তালিকা বিনিময় করেন। সভা শেষে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) রৌশন আরা বেগম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, দুই দেশ নিজ নিজ দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে একত্রে কাজ করে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসাবে কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ও ভারতের জাল নোট সংক্রান্ত যৌথ টাস্ক ফোর্সের সভা অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি আরো জানান, জাল টাকার বড় ধরনের একটি চক্র আছে। এই চক্রের সদস্যরা এখন সীমান্ত এলাকায় টাকা নকল করে পাচার করছে। উভয় দেশ তাদের দমাতে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের মধ্যে অপরাধ দমনসহ বিভিন্ন বিষয়ে যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। এর অংশ হিসাবে বাংলাদেশ ও ভারতের জাল নোট সংক্রান্ত যৌথ টাস্ক ফোর্সের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় মূল আলোচনায় তার বিষয় ছিল জাল নোটের উৎস চিহ্নিত করা। এ সময় ভারতের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় গড়ে উঠা তাদের ২১০টি চক্রের নামের তালিকা বিনিময় করেন। এই চক্রের সদস্যরা শুধু ভারতীয় রুপি নয়, বাংলাদেশের টাকাও নকল করে ছাঁপিয়ে সীমান্তের ওপাড়ে তাদের দালালদের মাধ্যমে পাচার করে। এসময় বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় ৪৬টি চক্রের সদস্যরা সক্রিয় আছে বলে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যদের অবহিত করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের শপিংমল, খুচরা বাজার এমনকি ব্যাংকে জাল টাকার ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হওয়ার অভিজ্ঞতা অনেকের। কিন্তু জাল টাকা বানানোর কারিগরদের কাছে এটা খুবই সহজ কাজ। অল্প পুঁজি আর লাভও বেশি। শুধু গ্রেফতার নয়, আইনের মাধ্যমে এদের বিচার করা সম্ভব না হলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে।
সিআইডির একজন কর্মকর্তা জানান, জাল নোট তৈরির চক্রের গ্রেফতারকৃত সদস্যদের দেয়া জবানবন্দী অনুযায়ী বাংলাদেশে তিন ধাপে তৈরি হয় জাল টাকা। যে কাগজে জাল টাকা ছাপানো হয় তাকে জাল নোট চক্রের ভাষায় কাপড় বলা হয়। বাজার থেকে নরমাল কাগজ, ট্রেসিং পেপার ও আঠা দিয়ে প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে এই কাপড়’ তৈরি করা হয়। কাপড় তৈরির জন্য রয়েছে পৃথক গ্রুপ যারা জাল টাকা তৈরি চক্রে’র কাছে তা বিক্রি করে। এক বান্ডিল কাপড় সাত থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এক কাগজে চারটি টাকা প্রিন্ট হয়, আর এক বান্ডিলে ৪০০টি টাকা প্রিন্ট হয়। এছাড়া টাকার নিরাপত্তা সুতা আলাদাভাবে কিনে তাতে গ্রাফিক ডিজাইনার দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো বসানো হয়। এভাবে তৈরি হয় সিকিউরিটি রোল। একটি সিকিউরিটি রোল ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহার করে প্রিন্টারের মাধ্যমে জাল টাকা ছাপিয়ে তা নির্দিষ্ট সাইজে কাটা হয়। এগুলো মার্কেটে বাজারজাত করার জন্য রয়েছে পৃথক গ্রুপ। এখন ঢাকায় এ রকম ৪৫ থেকে ৫০টি গ্রুপ রয়েছে। সারাদেশেই জাল নোট সরবরাহ হয় ঢাকা থেকে। স্থানীয় পর্যায়ে জাল টাকা বাজারে ছাড়ার জন্য রয়েছে পৃথক লোক। কাপড়ের মাধ্যমে জাল টাকা তৈরির কাজে এখানকার ৮ থেকে ১০টি চক্র জড়িত থাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান। সূত্র জানায়, এই চক্রের সদস্যরা সীমান্ত এলাকায় কেউ লবণ ব্যবসায়ী কেউ বিভিন্ন খুচরা পণ্যের ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে এই কর্মকান্ড করছে। কেউ যাতে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে না পারে এজন্য তারা পরিবার নিয়ে ওইসব বাসায় ভাড়া থাকছেন। তাদের বাসা ভাড়া করে দেয়া এবং জাল টাকা তৈরির রসদ সরবরাহে ঢাকা ও জেলা পর্যায়ের জাল টাকার চক্রের সদস্যরা সহযোগিতা করছে। বাংলাদেশের লালমনিরহাটের বুড়িমারী সীমান্তের মন্ডলপুর, সফিপুর এবং যশোর জেলার সীমান্ত এলাকায় জাল টাকার সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গার দর্শনার সীমান্তের ওপারের ভারতের সীমান্ত এলাকার মেদিনীপুর, রামকৃষ্টপুর, বহরমপুর ও উড়িষাবাড়ি এলাকায় এ চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। এই অপরাধ বন্ধ করা গেলে অনেক অপরাধ দমন করা যেমন সহজ হবে এবং অপরাধ মোকাবিলা ও বিভিন্ন বিষয়ে আগাম পদক্ষেপ নেয়া সহজতর হবে বলে সূত্র জানায়। সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে দেশে পাঁচ শতাধিক জাল নোট তৈরির মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু জাল নোট প্রস্তুতকারী চক্রের সদস্যরা গ্রেফতার হলেও আইনের ফাঁকফোকরে জামিনে বের হয়ে এসে আবারও একই কাজে সক্রিয় হচ্ছে। গত ২৭ ডিসেম্বর বুধবার রাতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে ভারতীয় মুদ্রা জালিয়াতির একটি কারখানার সন্ধান পায় র্যাব। র্যাব কারখানা থেকে ১০ লাখ ভারতীয় রুপীর জাল নোট ও জালিয়াতির সরঞ্জামসহ লিয়াকত আলী (৩৫) ও তার সহযোগী জাহাঙ্গীর আলম (৪০) নামের দুইজনকে গ্রেফতার করে। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, জাল টাকা ব্যবসায়ী একজন যখন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে কারাগারে যায়, তখন ওই পরিবারের অন্য সদস্যরা এ ব্যবসায় যুক্ত হয়ে পড়ে। যদি কারো স্বামী পুলিশের হাতে ধরা পড়ে তাহলে তার স্ত্রী বা ভাই অথবা বোন যুক্ত হয়ে যাচ্ছে জাল টাকা ব্যবসায়। আবার পিতা ধরা পড়লে তার সন্তানরা ক্রমান্বয়ে জড়িয়ে পড়ছে এ কাজে। এতে জাল টাকার ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না। গত ১৯ জুন রাতে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার পৌর এলাকার রায়পাড়া সদরদী এলাকার একটি বাসা থেকে জাল টাকা তৈরির সময় হাতনাতে গ্রেফতার করা হয় এক দম্পতিসহ চারজনকে। তারা হলেন- সালাউদ্দিন রাসেল (৩০), তার স্ত্রী ফাতেমা (২৫), সাইদুল সরদার আকাশ (১৯) ও জুয়েল হাওলাদার (২৯)। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৩ লাখ ৫৫ হাজার জাল টাকাসহ জাল টাকা তৈরির বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করে। নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনা থেকে গত ১৪ মে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ৪২ হাজার জাল টাকার নোটসহ চার ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে। গত বছরের ২৮ জুন রাজধানীর রামপুরা বনশ্রী এলাকার কে বøকের ১৬ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে র্যাব অভিযান চালিয়ে ১ কোটি চার লাখ টাকার জাল নোট ও দুই নারীসহ পাঁচজনকে আটক করে। সূত্র জানায়, রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, চকবাজার, মিরপুর, নিউমার্কেট, বাড্ডা, সবুজবাগ, যাত্রাবাড়ীসহ জনবহুল এলাকায় খুচরা জাল টাকার নোটের ব্যবসা চলছে। নয়া বাজারের টিসু পেপার ব্যবসায়ী আবদুর রহিম ও কামরাঙ্গীরচরের আবদুল মালেক ওরফে মালেক মাস্টারকে দেশের বড় জাল টাকার কারিগর বলে মনে করা হয়। কিন্তু বরাবরই এরা থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।