Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যা যা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

সোনায় গরমিল...

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টের সোনা বদল হয়েছে দাবি করা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ভল্টের সোনা বদলানোর কোনও সুযোগ নেই।’ গত ১১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরকে পাঠানো ব্যাখ্যায় এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তবে এর পরও কয়েক পর্যায়ে চিঠি চালাচালি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ভল্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের এবং কারেন্সি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায় থেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি অফিসার (মহাব্যবস্থাপক) আওলাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, শুল্ক গোয়েন্দারা যেভাবে ব্যাখ্যা চেয়েছে, ঠিক সেভাবে জবাব দেওয়া হয়েছে। আমরা বলেছি, ‘ভল্টের সোনা বদলানোর কোনও সুযোগ নেই।
যদিও শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ভল্টে জমা করা তিন দশমিক তিন কেজি ওজনের গোলাকার কালো প্রলেপযুক্ত সোনার চাকতি এবং একটি কালো প্রলেপযুক্ত সোনার রিংয়ের বদলে যথাক্রমে অন্য ধাতুর চাকতি ও রিং পাওয়া গেছে।’ ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সোনা হিসেবে জমা হলেও প্রকৃত যাচাই-বাছাইয়ে সোনা পাওয়া যায়নি।’
এর আগে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে পরিদর্শন করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। এরপর এ বছরের ফেব্রæয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয় এনবিআর। শুল্ক গোয়েন্দাদের চিঠি পাওয়ার পরই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায়।
জানা গেছে, সোনার বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করেন যে কারিগর, তালিকাভুক্ত সেই স্বর্ণকার গিয়াস উদ্দিনকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সময়ে এয়ারপোর্টের কাস্টমস অফিসার ও গুদাম সংরক্ষক হারুন রশিদকেও চিঠি দেওয়া হয়। এছাড়া, ওই মাসেই কারেন্সি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দাদের চিঠি পাওয়ার পর ভল্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের এবং কারেন্সি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায় থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
আওলাদ হোসেন চৌধুরী জানান, শুল্ক গোয়েন্দারা যেসব বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, প্রত্যেকটি বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে। স্বর্ণকার গিয়াস উদ্দিন ও এয়ারপোর্টের কাস্টমস অফিসার ও গুদাম সংরক্ষক লিখিতভাবে জবাব দিয়েছেন।
গিয়াস উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি পাওয়ার পরই আমি লিখিতভাবে জবাব দিয়েছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে যখন শুল্ক গোয়েন্দারা সোনা রাখতে আসেন, তখন আমাকে বলা হয়েছিলÑ কী পরিমাণ সোনা আছে,তা পরিমাপ করে বের করতে হবে। আমি কষ্টি পাথরে সোনার মান যাচাই করে ৪০ শতাংশই বলেছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের রেকর্ডবুকে যিনি তখন লিখছিলেন, তিনি ভুলে ইংরেজিতে ৪০-এর জায়গায় ৮০ লিখেছিলেন।
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টের সোনা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির পেছনে ভ‚মিকা থাকায় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্তীকে মুখপাত্রের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এএনএম আবুল কাসেমকে প্রধান করে ছয় সদস্যের ‘উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন’ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এর আগে ১৭ জুলাই জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে ব্যাংকের ভল্টে রাখা সোনা কোনও প্রকার হেরফের হয়নি। আর ভল্টের নিরাপত্তায়ও কোনও ব্যত্যয় ঘটেনি। এখানে ছয় স্তরের যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, তা খুবই সুরক্ষিত আছে। তবে লেখার (রেকর্ড বুকে) কিছু ভুল ও মেশিনের কারণে শুল্ক গোয়েন্দা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের মধ্যে পার্থক্য হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই দিন গভর্নর ফজলে কবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে ব্যাখ্যা চান। কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি দফায় দফায় বৈঠক করেন। প্রত্যেক কর্মকর্তাকে তার রুমে ডেকে নিয়ে ব্যাখ্যা তলব করেন। কার কী ভ‚মিকা ছিল তাও জানতে চান। পরদিন ১৮ জুলাই অর্থ প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে গভর্নর ফজলে কবির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরেন। শুধু তাই নয়, গত ১৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই পক্ষকে (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক) গণভবনে ডেকে পাঠালে, ফজলে কবির সেখানেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেন।
জানা গেছে, শুল্ক গোয়েন্দারা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট পরিদর্শনের জন্য ২০১৬ সাল থেকে চেষ্টা করে আসছিল। ওই সময় থেকে অন্তত তিন থেকে চার বার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ভল্ট পরিদর্শনের জন্য অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সেমময় তাদের অনুমতি দেয়নি। প্রতিবারই ভল্ট পরিদর্শনের সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয় বলে চিঠির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও শুল্ক গোয়েন্দাদের মধ্যে টানা একবছর ধরে চিঠি চালাচালি হয়। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘আইনে কাভার করে না’ বলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরকে ভল্ট পরিদর্শনের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ২০১৭ সালে সংস্থাটি অনুমতি পায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন মহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, ২০১৭ সালে শুল্ক গোয়েন্দারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট পরিদর্শন করলেও যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সংস্থাটি অনুমতি নেয়নি। তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাসুরক্ষিত ভল্ট পরিদর্শনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোনও অনুমতি ছিল না তাদের।######

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যাংক

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ