Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রশ্ন ওঠা সোনার দাম কত?

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টের সোনা খোয়া গেছে কিনা নিয়ে দেশজুড়ে হচ্ছে হইচই, উঠেছে আলোচনার ঝড়। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর এ বিষয়ে যে প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছে তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের বিভিন্ন মহলে দেখা দিয়েছে নানান প্রতিক্রিয়া। বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্ট করে জানিয়েছে অভিযোগটি সঠিক নয়। ভল্টের সোনা ভল্টেই আছে, এর কোনও হেরফের হয়নি। এরপরেও এ অভিযোগ সত্যি কিনা তা যাচাইয়ে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, এত আলোচনার জন্ম দিয়েছে যে সোনার চাকতিটি তার আসলে দাম কত? শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের দাবি যদি তদন্ত শেষে সঠিক বলে প্রমাণও হয় তাহলে সরকারের ক্ষতি হবে কত টাকা?
এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি অফিসার (মহাব্যবস্থাপক) আওলাদ হোসেন চৌধুরী। চাকতির সোনার দাম কত হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুল্ক গোয়েন্দাদের প্রতিবেদনের তথ্য যদি সত্য হতো তাহলে সরকারের যে ক্ষতি হতো তা এক কোটি টাকাও হবে না। তবে ভল্ট থেকে তিন কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের ওই সোনার চাকতির কোনও ধরনের হেরফের হয়নি, চাকতির কোনও পরিবর্তন হয়নি, তাই সরকারের এক পয়সারও ক্ষতি হয়নি।
বিতর্ক ওঠা ওই পরিমাণ সোনার দাম কত হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক নিলাম ছাড়া সোনা বিক্রি করে না। তারপরেও যদি হিসাব করতে হয়, সোনার দাম ধরা হবে আন্তর্জাতিক বাজার দর অনুযায়ী। তিনি হিসেব দিয়ে বলেন, ‘বর্তমান বাজার অনুযায়ী, ৩ কেজি ৩০০ গ্রামের বিশুদ্ধ সোনার বার বা বিস্কুটের দাম আসবে এক কোটি ১৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে আওলাদ হোসেন জানান, তিন কেজি ৩০০ গ্রামের ওই চাকতি যদি ১০০ শতাংশ (২৪ ক্যারেট) সোনারও হয় তাহলে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী এই সোনার ভরি এখন কম বেশি ৪০ হাজার টাকা। আর ৮৬ ভরিতে হয় এক কেজি সোনা। সে হিসেবে এক কেজি সোনার দাম আসবে ৩৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এই হিসাবে তিন কেজি ৩০০ গ্রামের দাম হবে এক কোটি ১৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
তবে তিনি আরও জানান, চাকতিতে যেহেতু সোনা আছে মাত্র ৪০ শতাংশ (১৮ ক্যারেট), সে কারণে ওই চাকতির দাম আসবে ৪৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার কাছাকাছি।
এদিকে, বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি (বাজুস) স¤প্রতি সোনার যে দর ঘোষণা করেছে তা অনুযায়ী ১৮ ক্যারেট সোনার ভরি হচ্ছে ৪১ হাজার ২৩০ টাকা। এ হিসেবেও চাকতিতে থাকা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম সোনার দাম সর্বোচ্চ হয় ১ কোটি ৭ লাখ ১ হাজার ৭৪ টাকা। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ জুলাই থেকে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট সোনার (১১.৬৬৪ গ্রাম) দাম পড়বে ৪৯ হাজার ৮৪৮ টাকা।
সোনা নিয়ে অনর্থক (ইউজলেস) আলোচনা হচ্ছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সচিবালয়ে মঙ্গলবার শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সেশনে যোগদানের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে ৯৬৩ কেজি সোনা রয়েছে। এরমধ্যে দূষিত সোনা মাত্র তিন কেজি। যার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, বিষয়টি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ্বাসযোগ্যতাকে হেয় করে সরকারকে বিব্রত করার উদ্দেশ্যেই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা ৯৬৩ কেজির ভেতর মাত্র ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। এটি আসলে দশমিক ৩৪ ভাগ। আর ভল্টের সবটুকু সোনা বিবেচনায় নিলে হয়তো লাখ ভাগের এক ভাগও হবে না।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা সোনার ওজনে ও পরিমাণে গরমিলের অভিযোগ এনে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের দেওয়া একটি গোপন প্রতিবেদন স¤প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ ঘটনার পরদিন বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরসহ সোনার মান যাচাইকারী এক স্বর্ণকারের ওপর বিষয়টির দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয় এবং এই ভুলকে ‘ক্লারিক্যাল মিসটেক’ বলা হয়। শুল্ক গোয়েন্দারা সরাসরি এ বিষয়ে প্রত্যুত্তর না করলেও ওই স্বর্ণকার দাবি করেন, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও ভুল করেননি। এ নিয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ১৮ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, ভল্টে রক্ষিত সোনা সব ঠিকই আছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সোনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ