Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দুই বছরে বস্ত্র খাতে ৮৩৯ কারখানা বন্ধ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

নারায়ণগঞ্জ শহরে অবস্থিত এসবি নিটওয়্যার লিমিটেডে শ্রমিক ছিলেন সাড়ে তিনশ। বস্ত্র ও পোশাক খাতের কারখানাটি ২০১৬ সালের মধ্যভাগে বন্ধ হয়ে গেছে। একই জেলার আমিন ফ্যাব্রিকস লিমিটেডে কর্মরত ছিলেন প্রায় ৪০০ শ্রমিক। সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুরে কারখানাটির কার্যক্রম বন্ধ হয় প্রায় দুই বছর আগে। কারখানা বন্ধের সব আনুষ্ঠানিকতা স¤প্রতি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক এহসানুল বারী।
আমিন ফ্যাব্রিকস ও এসবি নিটওয়্যারের মতো সারা দেশে ৮৩৯টি কারখানা বন্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছে বস্ত্র অধিদপ্তর। বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থাটির হালনাগাদ পর্যালোচনায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
জানা গেছে, চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা বস্ত্র আইনের মাধ্যমে দেশের বস্ত্র ও পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্ট কারখানাগুলোর পোশাক কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে বস্ত্র অধিদপ্তর। আইনের আওতায় নিয়ে আসতেই সংস্থাটি ২০১৫ সালে বস্ত্র ও পোশাক শিল্প সম্পর্কিত কারখানার তথ্য হালনাগাদ করে। সে হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সাল শেষে সংস্থাটির আওতাভুক্ত কারখানা ছিল ৯ হাজার ৪০টি।
সূত্রমতে, স¤প্রতি আবারো বস্ত্র শিল্পসংশ্লিষ্ট কারখানার তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে। এ তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৭ সাল শেষে সক্রিয় কারখানার সংখ্যা ৮ হাজার ২০১। এ হিসাবে ২০১৫ সালের তুলনায় ৮৩৯টি কারখানা কমেছে। এ কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বস্ত্র অধিদপ্তর। আর কমপ্লায়েন্স ইস্যুই এসব কারখানা বন্ধের মূল কারণ বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বস্ত্র অধিদপ্তরের হিসাবমতে, ২০১৭ সাল শেষে বস্ত্র ও পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্ট কারখানার ৯৭ ভাগের অবস্থান দেশের পাঁচটি জেলায়। এর মধ্যে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ৩ হাজার ৪১৬টি কারখানা। ঢাকার পর সবচেয়ে বেশি কারখানা রয়েছে গাজীপুরে। রাজধানীর পার্শ্ববর্তী জেলাটিতে বস্ত্র ও পোশাক খাতের কারখানা ১ হাজার ৯২৩টি। এরপর নারায়ণগঞ্জে আছে ১ হাজার ২৯৯টি কারখানা। এছাড়া চট্টগ্রামে ৯১০টি ও নরসিংদীতে ৪০২টি কারখানা সক্রিয় আছে।
অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বন্ধ হওয়া বস্ত্র ও পোশাক কারখানা সবচেয়ে বেশি নারায়ণগঞ্জে। ২০১৫ সালে জেলাটিতে কারখানার সংখ্যা ছিল দুই হাজার। এ থেকে ৭০১টি কমে এখন সচল কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ২৯৯। নারায়ণগঞ্জের পর সবচেয়ে বেশি কারখানা বন্ধ হয়েছে চট্টগ্রামে। ২০১৫ সাল শেষে চট্টগ্রামে ১ হাজার ১৭৫টি কারখানা থাকলেও গত বছর শেষে হয়েছে ৯১০টি। চট্টগ্রামে আগের চেয়ে কারখানা কমেছে ২৬৫টি। এছাড়া গাজীপুরে ৭৩ ও নরসিংদীতে দুটি কারখানা বন্ধ হয়েছে।
দেখা গেছে, অন্যান্য জেলায় গত দুই বছরে বস্ত্র ও পোশাক খাতের কারখানার সংখ্যা কমলেও ঢাকা জেলায় বেড়েছে। ২০১৫ সাল শেষে ঢাকায় ৩ হাজার ২৩৬টি কারখানা ছিল। ২০১৭ সাল শেষে কারখানার সংখ্যা ১৮০টি বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৪১৬।
বস্ত্র অধিদপ্তরের অধিভুক্ত সংগঠনভিত্তিক হিসাবেও একই তথ্য পাওয়া গেছে। আইন অনুযায়ী বস্ত্র অধিদপ্তরের খাতসংশ্লিষ্ট সংগঠন মোট ১৩টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাতটি সংগঠন হলো- বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, বিটিটিএলএমইএ, বিএলএমইএ, বিজিএপিএমইএ ও বিএসটিএমপিআইএ। এর মধ্যে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য কারখানাই সবচেয়ে বেশি বন্ধ হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কমপ্লায়েন্স মানদন্ডে উত্তীর্ণ হতে না পারা অনেক কারখানা বিদ্যমান স্থান ছেড়ে অন্যত্র সরে গেছে। অনেক কারখানার মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। কার্যাদেশ না থাকায় ও আর্থিক লোকসানের কারণেও কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কারখানা বন্ধের আনুষঙ্গিক কারণের মধ্যে আরো রয়েছে আর্থিক অসচ্ছলতা, ব্যাংকিং দায়, কর্মপরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত না হওয়া, গ্যাস সংকট, অগ্নিকান্ড, মালিকপক্ষের মতপার্থক্য ও কোন্দল, পর্যাপ্ত মূলধনের অভাব, কারখানার জমির মালিকের ভাড়া না দেয়া, পুরনো যন্ত্রপাতি ও শ্রমিক অসন্তোষ।
দুই বছরে ৮৩৯টি কারখানা বন্ধের কারণ জানতে চাইলে নিট খাতের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গত কয়েক বছরে পোশাক কারখানা বন্ধের নেপথ্যে মূলত একটিই কারণ, সেটি হলো কমপ্লায়েন্স অব্যবস্থাপনা। অন্যান্য কারণ থাকলেও মূল প্রভাবক হিসেবে কমপ্লায়েন্স ইস্যুই মুখ্য। অনেক কারখানা উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে বন্ধ হয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গত কয়েক বছরে বিপুলসংখ্যক কারখানা বন্ধ হয়েছে কর্মপরিবেশের মানদন্ড বজায় রাখতে না পেরে। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এখন কমপ্লায়েন্স মেনেই ব্যবসা করতে হবে। তবে বন্ধ কারখানা কর্মসংস্থানে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। কারণ যেসব কারখানার উদ্যোক্তা সক্ষম, তারা নতুন স্থানে কারখানা সরিয়ে নিয়েছেন। আর অনিরাপদ কারখানা সচল রেখে এখন আর ব্যবসা করা যাচ্ছে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কারখানা বন্ধ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ