Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাড়তি করের বোঝায় ৩০ শতাংশ কারখানা বন্ধের আশঙ্কা

প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : গার্মেন্ট এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্পের ওপর উৎসে কর দেড় শতাংশ থেকে কমিয়ে আগের মতোই শূন্য দশমিক ছয় রাখার দাবি করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ)। একইসঙ্গে এ শিল্পের জন্য কপোরেট কর ১০ শতাংশ করার অনুরোধ করা হয়েছে। আর তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের পশ্চাদসংযোগ এ শিল্পের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা এবং একটি ইনস্টিটিউট করার জন্য সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছে সংগঠনটি। এছাড়া বাড়তি করের বোঝা চাপালে এ খাতের ৩০ শতাংশ কারখানা বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না বলে আশঙ্কা করা হয়। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবির কথা তুলে ধরেন সংগঠনের নেতারা।
সংগঠনের সভাপতি মো. আবদুল কাদের খান বলেন, বিজিএপিএমইএ’র আওতাভুক্ত দেড় হাজার শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ৩০ থেকে ৩৫টি পণ্য উৎপাদিত হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাতে রফতানির পরিমাণ ছিল পাঁচ দশমিক ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৮ সালে এ পরিমাণ হবে ১২ বিলিয়ন ডলার। তবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ শিল্পের উৎসে কর শূন্য দশমিক ছয় থেকে বাড়িয়ে দেড় শতাংশের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে রপ্তানিমুখী শিল্পে স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে এবং শিল্পের সক্ষমতা কমে যাবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে, বিনিয়োগ তথা কর্মসংস্থান সৃষ্টি নিশ্চিতভাবে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বে। তাই উৎসে কর আগের মতই শূন্য দশমিক ছয় শতাংশ রাখার প্রস্তাব করেন তিনি।
সংগঠনের উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি রাফেজ আলম চৌধুরী বলেন, ইউটিলাইজেশন পারমিশন (ইউপি) ইস্যুর ক্ষমতা এককভাবে অ্যাসোসিয়েশনকে দিতে হবে। সেটা না দিলে এ খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে এবং উদ্যোক্তরা অযথা হয়রানির শিকার হবেন। তিনি বলেন, এ খাতের উদ্যোক্তারা বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করেন, তাই একেক পণ্যের জন্য একেক সংগঠন থেকে ইউপি নিতে হলে তা যৌক্তিক হবে না। একই সঙ্গে গার্মেন্ট এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং খাতের উদ্যোক্তরা লোকসান দিয়ে কারখানা পরিচালনা করছে এ সময় বাড়তি করের বোঝা চাপালে ৩০ শতাংশ কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য নতুন বাজেটে প্রস্তাবিত উৎসে কর কমানোর পাশাপাশি কর্পোরেট করও কমানোর কথা বলেন তিনি। পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সহযোগিতা করতে এ খাতের রপ্তানিকারকদের আর্থিক প্রণোদনা দিতে সরকারকে অনুরোধ করেন তিনি।
রাফেজ আলম চৌধুরী বলেন, কারও নজর নেই তৈরি পোশাকের পশ্চাৎসংযোগ শিল্প হিসেবে গড়ে ওঠা গার্মেন্ট এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং খাতে। গার্মেন্টস সেক্টরের অন্য সংগঠনগুলো সরকারের প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেলেও পশ্চাৎসংযোগ শিল্প কখনোই কোনো সুযোগ পায়নি। তিনি বলেন, কিছু উদ্যোক্তার অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে সম্ভাবনাময় এই খাতটি। তাই অন্যান্য রপ্তানিমুখী শিল্পের মতো এই খাতেও সরকারের সমান মনোযোগ দেয়া উচিত। একই সঙ্গে এই খাতের বিকাশে নগদ প্রণোদনা, স্বল্পসুদে ঋণ, আইনি জটিলতা দূর করার দাবি জানান তিনি।
বিজিএপিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, কাঁচামাল আমদানিতে ইউটিলাইজেশন পারমিশন (ইউপি) নিতে হয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে। অথচ গার্মেন্ট ও নিটওয়্যার কারখানাগুলো এই সুবিধা বিজিএমইএ থেকে পায়। ২০১২ সাল থেকে অর্থমন্ত্রী ইউপি দেয়ার ক্ষমতা বিজিএপিএমইএ’র হাতে ছেড়ে দেয়ার আশ্বাস দেন। গত এপ্রিলেও অর্থমন্ত্রী এনবিআর চেয়ারম্যানকে ইউপি ইস্যুর ক্ষমতা বিজিএপিএমইএ’কে প্রদানের জন্য সুপারিশ করেছেন। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এখনও অজানা কারণে এই ক্ষমতা সংগঠনটিকে দিচ্ছে না।
এ শিল্পে ৬০ ভাগ কাঁচামাল আমদানির অনুমোদন আছে। তবে এ সুযোগ কারখানাগুলো কাজে লাগাতে পারছে না। এক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করছে তিনটি অডিট। তাদের দাবি, যেকোনো একটি অডিটের মাধ্যমে তাদের পণ্য আমদানির সুযোগ দেয়া হোক। গত বাজেটে অর্থমন্ত্রী এই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
প্রতিবেশি দেশ ভারতে চারটি প্যাকেজিং ইনস্টিটিউট আছে। অথচ দেশে একটিও নেই। এতে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষিত জনবল আনতে হচ্ছে। দেশে প্রশিক্ষিত জনশক্তির অভাবে আধুনিক প্রযুক্তিও এই খাতে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দক্ষ জনবল তৈরিতে দেশে একটি ইনস্টিটিউট তৈরির জোর দাবি জানিয়ে আসছে সংগঠনটি। তবে এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি ইনস্টিটিউট করার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। ইনস্টিটিউট করার জন্য সরকারের কাছে জমি বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। জানা গেছে, দেশে কোনো টেস্টিং ল্যাব নেই। সংগঠনের অফিসে যে ছোট পরিসরের ল্যাব আছে তাও ঝুঁকিপূর্ণ। টেস্টিং ল্যাবের জন্য জমি চেয়েও পাচ্ছে না বিজিএপিএমইএ।
বিজিএপিএমইএ নেতারা বলেন, বহির্বিশ্ব জানে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানির দেশ। এই খাত সম্পর্কে জানে না। বাণিজ্যিক মিশন বা ইপিবি’র পক্ষ থেকেও এই খাতের প্রচারে কোন উদ্যোগ নেই। ইপিবি’র কাছে এই খাত সম্পর্কে কোন তথ্যই নেই। খাতটি উৎসহিত করতে আজ পর্যন্ত কোনো সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করেনি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।
অনুষ্ঠানে এছাড়াও বিজিএপিএমইএ’র উপদেষ্টা শফিউল্লাহ চৌধুরী, সহ-সভাপতি নাজিমুদ্দিন চৌধুরী, দ্বিতীয় সহ-সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসাইন, সহ-সভাপতি (অর্থ) হাসানুল করিম তমিজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, এই খাতের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ)। সংগঠনটির সদস্যসংখ্যা ১ হাজার ৪৬৫টি। এই খাতের মোট বিনিয়োগ ৩০ হাজার কোটি টাকা। প্রত্যক্ষভাবে এই শিল্পে ৪ লাখ শ্রমিক কর্মরত। পরোক্ষভাবে যুক্ত আরও প্রায় ১০ লাখ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাড়তি করের বোঝায় ৩০ শতাংশ কারখানা বন্ধের আশঙ্কা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ