Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুটি মোটর কারখানা বন্ধ, দিল্লিতে পানি সঙ্কট

হরিয়ানায় চরম সহিংসতা অব্যাহত : নিহতের সংখ্যা ১০

প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় হরিয়ানা রাজ্যে ব্যাপক সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি টালমাটাল হয়ে উঠেছে। সেখানে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে। হরিয়ানায় এই ভয়াবহ সহিংসতায় উন্মত্ত জনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ পানি সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করায় রাজধানী নতুন দিল্লি পানি সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। শিক্ষা ও চাকরিতে কোটা সংরক্ষণের দাবিতে জাঠ সম্প্রদায়ের সপ্তাহ ধরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়ায় এবং বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন সরকারি অফিস, ব্যক্তিগত ঘরবাড়ি ও বেশ কয়েকটি রেল স্টেশনে অগ্নিসংযোগ, অস্ত্রাগার লুট ও মহাসড়ক অবরোধ করায় শনিবার গোটা হরিয়ানা রাজ্যজুড়ে সেনা মোতায়েন করা হয়। ৮টি জেলায় কারফিউ জারি করা হয় এবং দেখামাত্র বিক্ষোভকারীদের গুলি করার নির্দেশ দেয়া সত্ত্বেও সহিংসতার মাত্রা করছে না বরং বাড়ছেই।
হরিয়ানার পুলিশ প্রধান যশপাল সিং গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পুলিশ দাঙ্গাকারীদের ওপর গুলি চালালে শুক্রবার থেকে ১০ জন নিহত ও ১৫০ জনের মতো আহত হয়েছে। এর আগে দিনের শুরুতে নিহতের সংখ্যা ৫ বলে জানানো হয়েছিল।
সরকারী চাকরি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংরক্ষণের দাবিতে বিক্ষোভে নেতৃত্বদানকারী জাঠ সম্প্রদায় বলছে ভারতের উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও তারা পিছিয়ে পড়ছে। সে জন্য তারা চাকরি ও শিক্ষার সুযোগের জন্য আন্দোলন করছে। ভারতে জাঠ সম্প্রদায়কে উচ্চ বর্ণের বলে গণ্য করা হয়। গত এক বছরে শিক্ষা ও চাকুরিতে কোটার দাবিতে জাঠরা আরও কয়েক দফা বিক্ষোভ করেছে। ভারত দেশের চরম বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠীকে উন্নয়ণের মূল¯্রােতে আনার জন্য নি¤œবর্ণের লোকদের জন্য কোটা সংরক্ষণ করছে। তবে এই নীতি জাঠ এবং আরো কয়েকটি সম্প্রদায়কে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। জাঠ সম্প্রদায় মূলত কৃষিজীবী। ভারতের কৃষি অর্থনীতিতে তাদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তারা সরকারের এই নীতিকে তাদের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক বলে বর্ণনা করে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
রাজ্যজুড়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা সত্তেও বিক্ষোভকারীরা শনিবার দিন শেষে ফের রাস্তায় নেমে আসে এবং রোহতাক জেলার বিভিন্ন স্থানে দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ শুরু করে। রাজ্যের এক মন্ত্রীর বাড়িতেও হামলা চালানো হয়। চলমান সহিংসতার মূল কেন্দ্র হচ্ছে রোহতাক। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, বিক্ষোভকারীরা সমগ্র জেলায় রাতভর সহিংসতায় লিপ্ত হয়। এক ডজনের বেশি ভবনে আগুন দেয়া হয়। দোকানপাটে লুটপাট করা হয়, অন্তত দুটি স্থানে এটিএম বুথেও তারা ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
রোহতাকের পাশের জেলা ঝাজরে একজন পুলিশ অফিসার এরআগে বার্তা সংস্থাকে জানান, সেনা সদস্যরা উন্মত্ত জনতার উপর গুলি চালালে শনিবার ৫ জন নিহত হয়।
হরিয়ানায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতের কেন্দ্রীয় রাজধানী নয়াদিল্লি পানি সংকটের মধ্যে পড়েছে। হরিয়ানায় একটি খালের স্লুইস গেট বিক্ষোভকারীরা বন্ধ করে দেয়ার পর রাজধানীর পানি ট্রিটমেন্ট প্লান্টে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় এক জরুরি বৈঠকের পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল গোটা রাজধানীজুড়ে পানি রেশনিংয়ের কথা ঘোষণা করেন এবং পানি জমিয়ে রাখার জন্য সোমবার দিল্লির সকল স্কুল বন্ধ রাখা হবে।
সহিংসতা অবসানের লক্ষ্যে গতকাল রাতে বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিসহ জাঠ নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের বৈঠক হওয়ার কথা। জাতীয় জাঠ নেতা যশপাল মালিক বলেন, সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বিক্ষোভকারীরা বলছে, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আলোচনার কথা ঘোষণা করা হলেও বিক্ষোভকারীরা হরিয়ানামুখী ও হরিয়ানা থেকে বাইরে যাওয়ার সকল মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে। লাঠিসোটা নিয়ে উন্মত্ত লোকজন সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। রোহতাক শহর থেকে তিন মাইল দূরে সামপ্লা শহরে একটি বিদ্যালয়সহ অন্তত এক ডজন ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
সহিংসতার কারণে ভারতের সর্ববৃহৎ গাড়ি নির্মাতা মারুতি সুজুকি মহাসড়ক অবরোধে কাঁচামাল সরবরাহে বিঘœ ঘটায় হরিয়ানায় তাদের দুটি কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। একজন সরকারী কর্মকর্তা বলেন, শুক্রবার থেকে হরিয়ানায় কয়েকশ ট্রেন বাতিল করা হয়েছে এবং অনেক ট্রেন অন্যত্র ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে। অন্তত ১০টি রেলস্টেশন আগুনে ভস্মীভূত করা হয়েছে। উন্মত্ত লোকজন ট্রেনের অনেক বগি ও ইঞ্জিনেও আগুন ধরিয়ে দেয়। অনেক স্থানে রেললাইন উপড়ে ফেলে। ঝাজর পুলিশ প্রধান রাজীব কুমার বলেন, ঝাজর জেলায়ও পরিস্থিতি খুবই উত্তেজনাকর। তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিনা। শহরের প্রধান প্রশাসনিক এলাকায় হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সড়কে অবস্থান নেয়ায় সেখানে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। শনিবার ঝাজরেই চারজন নিহত হয়েছে এবং কৈথালে একজন নিহত হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে।
বার্তা সংস্থা জানায়, রোহতাক, ভিওয়ানি, সোনিপাত, পানিপথ, ঝাজর, জিন্দ ও হিসারে সেনা মোতায়েন ও কারফিউ জারি এবং দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেয়া সত্তেও সেখানে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো সেখানে উন্মত্ত জনতা তা-ব চালায়। হাজার হাজার লোক লাঠিসোটা ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাস্তায় অবস্থান নেয়। এছাড়া কৈথালেও লোকজন দোকানপাট, হোটেল ও বাসে অগ্নিসংযোগ করে। পাতিয়ালায় লোকজন ব্যাংকে হামলা চালায়। সূত্র : এএফপি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
সব দাবি মঞ্জুর, রক্তাক্ত আন্দোলনে ইতি
এদিকে টানা ৭ দিনের তীব্র আন্দোলন, ১০ জনের প্রাণহানি, দেড়শোর বেশি আহত, দোকান, শপিং মল, বাস, গাড়ি থেকে শুরু করে থানা- উন্মত্ত আন্দোলনকারীদের অগ্নিসংযোগে ভস্মীভূত হবার পর অবশেষে ইতি। হিংসাত্মক আন্দোলন তুলে নিয়েছে হরিয়ানার জাঠ সম্প্রদায়। সম্প্রদায়ের নেতারা জানিয়েছেন, তাদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। তাই আর আন্দোলনের প্রয়োজন নেই।
পরিস্থিতি সামাল দিতে গতকাল জাঠ সংঘর্ষ সমিতির নেতা জয়পাল সিং-এর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের পরই আন্দোলন তুলে নেওয়ার আহ্বান জানান জয়পাল সিং। বিজেপি নেতা অনিল জৈন জানিয়েছেন, বিধানসভার আগামী অধিবেশনেই জাঠ সংরক্ষণ বিল পেশ করা হবে। জাঠ সম্প্রদায়ের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনার জন্য একটি কমিটিও গঠন করেছে হরিয়ানা সরকার। জাঠ নেতার আহ্বানের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া শুরু হয়েছে হরিয়ানায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুটি মোটর কারখানা বন্ধ
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ