পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা, খুলনা : ক্রুড (কাঁচা) লবণের সঙ্কটের কারণে খুলনার ৩৬টি মিলের মধ্যে ৩০টি বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ৬টি মিল চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। আমদানি না থাকায় যশোর ও সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ভারতীয় লবণ আসছে। ভারতীয় লবণ বাজার দখল করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খুলনার ব্যবসায়ীরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলা চোরাকারবারির মূল পয়েন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাতক্ষীরার কলারোয়া, ঝাউডাঙ্গা, কাথন্ডা, কুশখালী, ভোমরা ও কুলিয়াসহ বিভিন্ন ঘাট এবং যশোর জেলার নাভারন, চূড়ামনকাঠী, সাতমাইল, চৌগাছা ও ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর, মহেশপুর ও কালিগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান এই ভারতীয় লবণে সয়লাব হয়ে গেছে।
এদিকে ভারত থেকে অবৈধ পথে যে লবণ আসছে তা আয়োডিনবিহীন ও নি¤œমানের। এই আয়োডিনবিহীন লবণ বিভিন্ন বাজারে অবাধে বিক্রি হওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের আয়োডিনযুক্ত লবণ প্রকল্প চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এসব আয়োডিনবিহীন লবণ ভোক্তা গ্রহণের মাধ্যমে দেশ ও জাতি মেধাহীন ও রোগগ্রস্ত হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র জানায়, গত চার মাসে লবণের মূল্য দু’দফা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রথম দফায় চার টাকা এবং দ্বিতীয় দফায় কেজিপ্রতি তিন টাকা করে বেড়েছে। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি লবণ সর্বনিম্ন ২১ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা দরে বিকিকিনি হচ্ছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ দাম। সঙ্কট কাটাতে মিল মালিকরা লবণ আমদানির দাবি করেছে মন্ত্রণালয়ের কাছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছরের প্রথম দিকে লবণ প্রকারভেদে সর্বনিম্ন ১৪, সর্বোচ্চ ২৬ টাকা দরে বিক্রি হয়। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে সর্বনি¤œ ১৮ টাকা দরে এবং সর্বোচ্চ ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এপ্রিলের শেষ দিকে কেজিপ্রতি মূল্য বেড়ে সর্বনিম্ন ২১ টাকা ও সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
নতুন বাজার, বড় বাজার ও বটিয়াঘাটা এলাকার কৈয়া বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, পদ্মা সল্ট কেজিপ্রতি ২১ টাকা, মধুমতি ২২ টাকা, মোল্লা ৩৩ টাকা, ফ্রেশ ও এসিআই কেজিপ্রতি ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ের বাজারগুলোতে তিতাস সল্ট কেজিপ্রতি ১৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পূরবী সল্টের স্বত্বাধিকারী অনিল পোদ্দার জানান, ৭৬ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা লবণের কাঁচামালের (ক্রুড লবণ) মূল্য ছিল সাড়ে ৪ শ’ থেকে ৫ শ’ টাকা। চলতি বছরে প্রতি বস্তা এক হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কক্সবাজার থেকে সরবরাহ না হওয়ায় স্থানীয় বাজারে মূল্য বাড়ার সুযোগ নিয়ে ভারতীয় নিম্নমানের লবণ চোরাইপথে আসছে।
খুলনা লবণ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও তিতাস সল্ট ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফি আহম্মেদ বাবলা বলেন, প্রতি বছর দেশে লবণের চাহিদা রয়েছে ২২ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু বিসিকের মাঠপর্যায়ের জরিপ অনুযায়ী গত মওসুমে তিন লাখ মেট্রিক টন ক্রুড লবণের ঘাটতি থাকে। তারা ঘাটতি পূরণের জন্য ওই পরিমাণ কাঁচা লবণ আমদানির সুপারিশ করে। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক লাখ মেট্রিক টন ক্রুড লবণ আমদানির অনুমতি দেয়। এতে দুই লাখ মেট্রিক টন লবণের ঘাটতি থেকে যায়। ফলে ভারতীয় লবণ এদেশে প্রবেশ করছে।
খুলনা লবণ মিল মালিক সমিতির উপদেষ্টা ও মধুমতি সল্ট ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক মিঠু বলেন, চলতি বছর উৎপাদন মওসুমে খারাপ আবহাওয়ার কারণে লবণের উৎপাদন অনেক কম হয়েছে। গত বছরও চাহিদার তুলনায় ঘাটতি থাকায় বাংলাদেশে লবণের দাম দ্বিগুণ বেড়ে যায়। বাংলাদেশে এক বস্তা লবণের দাম এক হাজার ১০০ টাকা (সত্তর কেজি)। পক্ষান্তরে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ওই পরিমাণ লবণের দাম মাত্র ৪৫০ টাকা। দুই দেশে দামের ব্যবধান বিশাল হওয়ায় চোরাকারবারি চক্র বর্তমানে ভারত থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা লবণ এদেশে এনে বিপুল পরিমাণে মুনাফা লাভ করছে। অপরদিকে আমাদের উৎপাদিত লবণ অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। ভারতীয় লবণ অবাধে আসা ও সরকারের সঠিক পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে খুলনাঞ্চলের ৩৬টি মিলের মধ্যে ৩০টিই বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ৬টি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। মিলগুলোর মালিক ও শ্রমিকরা বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপের জন্য তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান।
খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি কাজি আমিনুল হক বলেন, একসময় খুলনাঞ্চলে লবণ মিলের ব্যবসা ছিল জমজমাট। অবৈধ পথে ভারতীয় লবণ আসার কারণে এ ব্যবসায় ধস নেমেছে। অধিকাংশ মিল মালিক ব্যবসা গুটিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। এ শিল্পকে বাঁচাতে হলে ভারতীয় লবণ আসা বন্ধ ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঋণ দিয়ে পুনর্বাসন করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।