Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শিক্ষার গুণগত মানের ওপরই গুরুত্ব দিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

গত বৃহস্পতিবার ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন অনুষ্ঠিত এইচএসসি, মাদরাসা বোর্ডের আলিম এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসএসিসহ (বিএম) মোট ১০ বোর্ডের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফলে দেখা যায়, সব বোর্ড মিলিয়ে পাসের হার ৬৬.৬৪ শতাংশ। এ পাসের হার গত বছরের চেয়ে ২.২৭ শতাংশ কম। গত ৬ বছরের মধ্যে এবারের পাসের হার সর্বনি¤œ। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে। এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ২৬২ জন। গত বছর পেয়েছিল ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ক্লাসে শিক্ষার্থীদের কম উপস্থিতি, ক্লাসে না থাকলেও নন-কলিজিয়েট না করা, কলেজের সময় বাইরে কোচিং ক্লাস করানো, ইংরেজির দুর্বলতসহ কঠিন বিষয়ে ভীতি, বেশিরভাগ কলেজে শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষক কম থাকার কারণে পাসের হার নিন্মমুখী হয়েছে। তবে পাসের এই হার কমাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন শিক্ষামন্ত্রী, বোর্ড চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করছে, শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে খাতা মূল্যায়নে পরিবর্তন আনা হয়েছে। একাধিক পরীক্ষক দিয়ে খাতা মূল্যায়ন করা হয়েছে। ফলে যে শিক্ষার্থীর যে নম্বর পাওয়ার কথা তাই পেয়েছে। এতে ফল কিছুটা খারাপ হয়েছে।
বিগত সব ধরনের পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের পাসের হার এতটাই বেশি ছিল যে, তা রীতিমতো বিস্ময়কর ঠেকেছে। কখনো কখনো দেখা গেছে, পাসের হার শতকের কাছাকাছি। এ নিয়ে তখন সরকারের মধ্যে এক ধরনের উচ্ছ¡াস লক্ষ্য করা গেছে। সরকার মনে করেছে, তার সময়ে শিক্ষার মান বেড়েছে এবং মেধার বিপুল বিকাশ ঘটায় পাসের হার শতকের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকছে। তবে শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষকরা বরাবরই এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দেখা গেছে, বিগত প্রায় দশ বছরে এমন কোনো বছর নেই যে বছর প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে শুরু করে বেশুমার নকল না হয়েছে। এ নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় হয়েছে। সরকার কিছুতেই নকল সামলাতে পারেনি বা তা দেখেও না দেখার ভান করেছিল। পাসের হার বৃদ্ধিকে বরং কৃতিত্ব বলে মনে করেছে। অথচ পত্র-পত্রিকায় তখন এমন খবরও বের হয়েছিল, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে বা কিছু না লিখেই জিপিএসহ পাস করেছে অনেকে। সরকার এসব খবরে তেমন গা করেনি। শিক্ষাবিদরা এর সমালোচনা করে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির দিকে সরকারকে নজর দেয়ার জন্য বারবার তাকিদ দিলেও তা আমলে নেয়নি। ফলে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় ভর্তি পরীক্ষায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী এমনকি জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীও যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে মেধার ভিত্তিতে কোটা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে এসএসসি হোক বা এইচএসসি হোক যে কোনো পাবলিক পরীক্ষার ফাইনাল এলেই সকলেই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে থাকত প্রশ্নপত্র ফাঁস হবেই। মেধাবী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা এ নিয়ে বরাবরই উদ্বিগ্ন থাকতেন। এটা একটা কমন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে প্রশ্ন ফাঁস হবে না বললেও দেখা যেত ফাঁস হয়ে গেছে। অন্যদিকে নকল করার বিষয়টি হয়ে পড়েছিল অবারিত। সরকার তখন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বললেও তা প্রতিরোধ করতে পারেনি। উল্টো সাফাই গাইতে এবং বলতে শোনা গেছে, কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। বিগত বছরগুলোতে পরীক্ষায় পাস বৃদ্ধি দেখানোই বড় লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। শিক্ষার মান কমছে না বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখা হয়নি। এমনকি এ অভিযোগও উঠে, সরকার থেকে অলিখিত নির্দেশ দেয়া হতো, কোনো পরীক্ষার্থীকে ফেল করানো যাবে না। খাতায় লিখল কি লিখল না, তা বিচার না করে পাস করিয়ে দিতে হবে। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়ায়, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করাই বড় কথা। শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে, কাজেই তাকে ফেল করানো যাবে না। শিক্ষাবিদদের ক্রমাগত সমালোচনার মুখে সরকারের কিছুটা বোধোদয় হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেয়া, ত্রিশ মিনিট আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পৌঁছানো, পরীক্ষার্থীদের হাজির হওয়া, পরীক্ষার খাতা একাধিক শিক্ষক দিয়ে মূল্যায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, যার প্রভাব এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় পড়েছে।
এবারের এইচএসসি পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সরকার বেশ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এতে পাসের হার কমলেও আগের বছরগুলোর তুলনায় মেধার মূল্যায়ণ হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। আমাদের কথা হচ্ছে, মেধার মূল্যায়ন করতে পাসের হার যত কমই হোক না কেন, তাতে কিছু যায় আসে না। প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং নকলের মাধ্যমে পাসের হার বৃদ্ধি করে শিক্ষার্থীদের মেধার অবমূল্যায়ণ করে কৃতত্বি নেয়ার চেয়ে সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রকৃত পাসের হার অনেক উত্তম। এতে দেশে যেমন প্রকৃতি মেধাবী শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পাবে, তেমনি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতেও তারা অধিক কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। বিগত বছরগুলোতে যেমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন একটা প্রবণতা গড়ে উঠেছিল যে পড়ালেখার দরকার নাই, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেই পাসÑএমন অপসংস্কৃতি আমাদের প্রয়োজন নেই। আমরা চাই, নিয়মিত পড়ালেখার মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত মেধা ও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখুক।



 

Show all comments
  • মাহবুব ২১ জুলাই, ২০১৮, ১১:২৯ পিএম says : 0
    এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন ফল বিপর্যয় আরো ঘটানো উচিত ।পাশের ব্যাপারে দয়া জাতির ইমেজ ক্ষুন্ন হয়।অযোগ্যকে যোগ্য করা একধরণের অপরাধ। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ভাঙ্গা-গড়া,পরীক্ষা-নিরীক্ষা স্তরে চলমান ।টেকসই ব্যবস্থা গড়তে সময় লাগবে।ফল বিপর্যয়কে নিয়ে সমালোচনা না করে, পাশের হার যত কমবে তত উপলব্ধি বাড়বে।যত উপলব্ধি বাড়বে তত কোয়ালিটি বাড়বে ।অতিরিক্ত পাশ মধ্যম ও নিম্নমানের শিক্ষার্থীদের বাসায় পড়াশুনার পরিসংখ্যন চিত্র ভয়ানক।বই পড়া বিরক্তিকর বলে মনে করছে । এটা থেকে উত্তরণ মিষ্টি কথায় হবে না বরং একমাত্র বিকল্প পদ্ধতি ক্রমাগত ৩-৫ পর্যন্ত ভয়াবহ ফল বিপর্যয় ঘটানো ।পাশের মর্মতা সবাই বুজুক। রিলিভ যেমন বন্ধ করা আত্যাবশক তেমনি বহু নির্বাচনি প্রশ্ন ,পাশ নিয়ে রাজনীতি ও দয়া কঠোরভাবে বন্ধ খুবই জরুরি ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন