পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বছরে দুইবার সূর্যগ্রহণ হয় এবং দুইবার চন্দ্রগ্রহণ হয়। এই গ্রহণ কখনো পূর্ণ গ্রাস রূপে দেখা দেয়। আবার কখনো আংশিক গ্রাস হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণ মূলত আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের কুদরতে কামেলার বহিঃপ্রকাশ, যা এ দু’টি গ্রহের অবলুপ্তি বা ভুমন্ডেলের বিলয় প্রাপ্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
আরবী ভাষায় সূর্যগ্রহণকে ‘কুসুফ’ বলা হয়। ব্যবহারিক অর্থে সূর্যের আলোকরশ্মি বিপিরণের পথে অন্ধকারের ছায়া নিপতিত হওয়াকে কুসুফ বলা হয়। আরবীতে বলা হয় ‘ইনকেসাফুস শামস’ অর্থাৎ সূর্য অন্ধকারের ছায়ায় আপতিত হয়েছে বা ঢাকা পড়েছে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘তারা আকাশের কোনো খন্ড ভেঙে পড়তে দেখলে বলবে এটা তো এক পুঞ্জিভ‚ত মেঘ।’ -সূরা তুর : আয়াত ৪৪। পুঞ্জিভ‚ত মেঘ যেমন কালো ও অন্ধকারাচ্ছন্নরূপে পরিদৃষ্ট হয়, তেমনি গ্রহণ চলাকালে সূর্যকেও কালো ও অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখা যায়। অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : (কাফেররা বলে) ‘অথবা তুমি যেমন বলে থাক তদনুযায়ী আকাশকে খন্ড-বিখন্ড করে আমাদের ওপর ফেলবে, অথবা আল্লাহ ও ফিরিশতাগণকে আমাদের সম্মুখে উপস্থিত করবে। অন্যথায় আমরা তোমার ওপর ঈমান আনয়ন করব না।’ এই আয়াতে কারিমায় ‘কিসাফান’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। একই অর্থজ্ঞাপক আয়াত সূরা শোয়ারাতেও এসেছে। ইরশাদ হয়েছে : ‘তুমি যদি সত্যবাদী হও, তাহলে আকাশের একখন্ড আমাদের ওপর ফেলে দাও।’ -সূরা শোয়ারা : আয়াত ১৮০। শুধু তা-ই নয়, সূরা রূমেও কিসাফান শব্দের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহ তিনি, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, ফলে ইহা মেঘমালাকে সঞ্চারিত করে। তারপর তিনি একে যেমন ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন। পরে একে খন্ড-বিখন্ড করেন এবং তুমি দেখতে পাও তা হতে বারিধারা নির্গত হয়, তারপর যখন তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাদের নিকট ইচ্ছা ইহা পৌঁছে দেন, তখন তারা হর্সোৎফুল্ল হয়। -সূরা রূম : আয়াত ৪৮। তাছাড়া সূরা সাবা এর মধ্যেও কিসাফান শব্দটির ব্যবহার লক্ষ করা যায়। ইরশাদ হয়েছে : ‘তারা কি তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে, আসমান ও জমিনে যা আছে তার প্রতি লক্ষ করে না? আমি ইচ্ছা করলে তাদেরসহ ভূমি ধসিয়ে দিতে পারি অথবা তাদের ওপর আকাঙ্ক্ষা পতন ঘটাতে পারি, আল্লাহর অভিমুখী প্রতিটি বান্দার জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। -সূরা সাবা : আয়াত ৯। উপরোল্লিখিত আয়াতসমূহে ‘কিসফান’ ও ‘কিসাফান’ শব্দদ্বয় আসলে ‘ইনকিসাফুস শামস’ অর্থাৎ সূর্যের অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়ার প্রতিই ইঙ্গিত প্রদান করে। যাকে আমরা সূর্যগ্রহণ বলে জানি।
আর চন্দ্রগ্রহণকে আরবীতে ‘খুসুফ’ বলা হয়। সূর্য যেমন অন্ধকার ছায়ার আবর্তে পতিত হয়ে অন্ধকার হয়ে যায়, তেমনি চন্দ্রও বছরে দুইবার স্বীয় কক্ষপথে পরিভ্রমণরত অবস্থায় অন্ধকারের ছায়ায় আচ্ছাদিত হয়ে থাকে। ইহার আংশিক রূপ কখনো দৃশ্যমান হয়। আবার কখনো সার্বিক রূপ পরিদৃষ্ট হয়। কালো রঙ বা অন্ধকারের এই হাতছানিকেই চন্দ্রগ্রহণরূপে আখ্যায়িত করা হয়। বস্তুত চন্দ্রগ্রহণের বিষয়টি আল কোরআনে মহান আল্লাহ পাক নিজেও উল্লেখ করেছেন, ইরশাদ হয়েছে : যখন চক্ষু স্থির হয়ে যাবে এবং চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে পড়বে এবং যখন সূর্য ও চন্দ্রকে একত্র করা হবে। সেদিন মানুষ বলবে, আজ পালাবার পথ কোথায়? -সূরা কিয়ামাহ : ৭, ৮, ৯ ও ১০। এখানে চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে পড়ার বাস্তব রূপই হচ্ছে চন্দ্রগ্রহণ, যা বছরে দুইবার হয়ে থাকে। এতদ প্রসঙ্গে আরও ইরশাদ হয়েছে : ‘তারপর আমি কারূনকে এবং তার প্রাসাদকে ভ‚গর্ভে প্রোথিত করলাম।’ -সূরা কাসাস : আয়াত ৮১। পরবর্তী আয়াতে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন : যদি আল্লাহ পাক আমাদের প্রতি সদয় না হতেন, তবে আমাদেরও তিনি ভ‚গর্ভে প্রোথিত করতেন।’ -সূরা কাসাস : আয়াত ৮২। বস্তুত ভ‚গর্ভে প্রোথিত হলে বা প্রোথিত করলে প্রতিটি বস্তুই যেমন অন্ধকারের অতল তলে তলিয়ে যায়, তেমনি গ্রহণের সময়ও চাঁদ ও সূর্য অন্ধকারে ঢাকা পড়তে থাকে। আলোহীন ও বিবর্ণ রূপ ধারণ করে। মূলত চাঁদ ও সূর্যের গ্রহণ বিশ্ব মানবতাকে একথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সমগ্র সৃষ্ট জগত অবশ্যই একদিন অন্ধকার ও বিলয়প্রাপ্ত হবে। এর কোনো অন্যথা হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।