Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ব্যাংক খাতে তিন সঙ্কট

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

দেশের ব্যাংক খাতে এখন বিরাজ করছে তিন সংকট। ঋণের তুলনায় আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার সংকট চলছে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ডলারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আর সুশাসন না থাকায় পুরো ব্যাংক খাতে দেখা দিয়েছে আস্থার সংকট।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর সেলিম রায়হান বলেন, ব্যাংক খাতে আস্থার সংকট এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভ‚মিকা নিয়েও প্রশ্ন আছে। সব মিলিয়ে আস্থার সংকট আমানতকারীদের ধীরে ধীরে ব্যাংকবিমুখ করছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। তার মতে, বেসরকারি ব্যাংকগুলো এখন নিজেদের ইচ্ছে মতো চলছে। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনও নিয়ম-নীতি মানছে না তারা।
ব্যাংক খাত নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। এই সন্দেহ ও অবিশ্বাসকে ব্যাংকের জন্য একটি অশনি সংকেত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সম্প্রতি ‘মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ’ শীর্ষক এক সম্মেলনে ফজলে কবির এমন মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এই বছরের ফেব্রæয়ারি পর্যন্তÑ তিন মাসে ব্যাংক খাত থেকে প্রায় একহাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্যাংক খাতে জনগণের রাখা আমানতের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ২৬ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। তিন মাস পর অর্থাৎ মার্চ শেষে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ২৫ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা।
বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ফারমার্স ব্যাংকের খারাপ অবস্থার কারণে সরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছে। এর ফলে কিছু ব্যাংক নগদ টাকার সংকটে পড়েছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, একদিকে আমানত আসছে না, অন্যদিকে ঋণ ঠিকই বিতরণ করা হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংক খাতে নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য (এক্সেস লিক্যুইডিটি) ছিল ৯৭ হাজার ১২২ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের মার্চের শেষে তা কমে দাঁড়ায় ৭৬ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে অতিরিক্ত তারল্য কমেছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতে আমানতের চেয়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি বেশি হয়েছে। আমদানিনির্ভর দ্রæত ঋণ প্রবৃদ্ধির সঙ্গে রফতানি ও রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধির পার্থক্য বেশি হয়েছে। এতে স্থানীয় বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ও জোগানের মধ্যে অসামঞ্জস্য সৃষ্টি হয়েছে। এর পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংকের আর্থিক অনিয়মের জন্য ব্যাংকিং খাতে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের শুরুতেও ব্যাংক খাতে প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা অতিরিক্ত তারল্য ছিল। বিনিয়োগ করতে না পারায় ওই সময় ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার কমিয়ে দেয়। তখন অনেকে শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এতে ব্যাংকের আমানত কমতে থাকে। এরই মধ্যে ফারমার্স ব্যাংকের ঘটনায় আস্থা হারান আমানতকারীরা। এমনকি সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকে রাখা আমানত প্রত্যাহার করতে থাকে। ফলে ব্যাংকিং খাতে নগদ টাকার সংকট হতে দেখা যায়। বিনিয়োগযোগ্য তহবিলের টান পড়ায় ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহার বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি এ সংকট মেটাতে ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহে মরিয়া হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবিবেচনামূলক আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কারণে অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে কিছু তফসিলি ব্যাংকে তারল্য চাপ সৃষ্টি হয়।
এদিকে ব্যাংকগুলো তহবিলের ব্যবস্থা না করেই পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলেছে। এতে ব্যাপকভিত্তিতে বৈদেশিক মুদ্রার দায় সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, গত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) আমদানির প্রবৃদ্ধি হয় ২৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ ১০ মাসে চার হাজার ৯০১ কোটি ডলার ব্যয় হয়। বিপরীতে গত অর্থবছরে (জুলাই-জুন) রফতানি প্রবৃদ্ধি হয় ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত অর্থবছরে ২৩১ কোটি ১০ লাখ ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এর বিপরীতে বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ১৯ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলো ডলার কিংবা বিদেশি মুদ্রার তারল্য সংকটে ভুগছে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৬ এবং ২৮.১ ডিগ্রি সে.। যা মৌসুমের এ সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে থেকে বেশী। এছাড়া গতকাল চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫, কুমিল­ায় ৩৭, সিলেটে ৩৮.৩, রাজশাহীতে ৩৭.৯, রংপুরে ৩৭.২, খুলনা ও বরিশালে ৩৬.৫ এবং ময়মনসিংহে ৩৮ ডিগ্রি সে.। এ সময় দেশের কোথাও ছিঁটেফোঁটাও কোন বৃষ্টিপাত হয়নি।
আবহাওয়া বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশ উপকূলের কাছে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মধ্যপ্রদেশ ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি মৌসুমী বায়ুর বলয়ের সাথে একীভূত হয়েছে। মৌসুমী বায়ুর বলয় ভারতের রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, উড়িষ্যা, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বি¯ৃÍত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয় এবং তা উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় করছে।
আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এদিকে কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলসহ স›দ্বীপ ও সীতাকুন্ডের কোথাও কোথাও এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে তা কমে আসতে পারে।
আজ সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সে. এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘন্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এর পরের ৫ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যাংক

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ