Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সামনে ঈদ : গরু চুরির হিড়িক

সাভার থেকে সেলিম আহমেদ | প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ঢাকার সাভারে কৃষকের পালিত গরু চুরির হিড়িক পড়েছে। ঈদকে সামনে রেখে কৃষকের গোয়াল ঘর থেকে চোরেরা গরু চুরি করে নিচ্ছে প্রতি রাতে। কৃষকরা তাদের গরু গোয়াল ঘরে রেখে তন্দ্রায় গেলে বা কোথাও দৃষ্টি এড়ালেই গভীর রাতে চুরি হয়ে যাচ্ছে গরু। এলাকাবাসী বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেও ধরতে পারছে না চোরদের। পুলিশে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না এলাকাবাসী।
গত দুই মাসে সাভার উপজেলার ভাকুর্তা ইউনিয়নের খাগুড়া মধ্যপাড়া, ডোমরাকান্দা, হিন্দু ভাকুর্তা, চাইরা ও ভাকুর্তা পশ্চিম পাড়া থেকে ৬০/৭০টি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। ফলে গরু চুরি যাওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। রাতে কৃষকরা গরু চোরদের হাত থেকে রক্ষা করতে পাহাড়া দিয়েও গরু চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। সামনে কোরবানী ঈদ অনেক কৃষক গরু মোটা তাজাকরন করতে যাচ্ছে। কৃষকগন জীবন বাজী রেখে এবং খেয়ে না খেয়ে গরু পিছনে শ্রম দিচ্ছেন। গ্রামে গ্রামে গরু চুরি ঠেকানোর জন্য পালাক্রমে পাহাড়া দিচ্ছেন। তার পরও গরু চুরি রোধ করা যাচ্ছে না।
তবে প্রতিরাতে গরু চুরি হলেও মাথা ব্যাথা নেই পুলিশের। গরু চুরির ঘটনা ভাকুর্তা পুলিশ ফাঁড়ি ও সাভার মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও গরু উদ্ধারে পুলিশের কোন তৎপরতা নেই।
ভাকুর্তা ইউনিয়নের খাগুড়া মধ্যপাড়া মহল্লার শামসুল ইসলাম ১টি গরু, আহসান উল্লাহর ১টি, করম আলীর ১টি, ডোমরাকান্দা মহল্লার আবু বক্কারের ১টি গাভী, হিন্দু ভাকুর্তা মহল্লার মাইনুদ্দিনের এক রাতে ৬টি গাভী, চাইরা এলাকায় হনু মিয়ার ৩টি গাভীসহ ৬০/৭০টি গরু চুরি হয়েছে।
এছাড়া ভাকুর্তা পশ্চিম পাড়ার নুরু মিয়া ও একলাছ মিয়ার বাড়িতেও হানা দিয়েছিল চোরেরা। কিন্তু এলাকাবাসীর পালাক্রমে পাহাড়ার কারনে ওই রাতে নিতে পারেনি।
সরেজমিনে এলাকায় গেলে কৃষক সামসুল ইসলাম, আহসান উল্লাহ ও করম আলীসহ একাধিক এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, গত ২মাসে ৬০/৭০টি গরু চুরি হয়েছে। এছাড়া এর আগেও এধরনের চুরির ঘটনা ঘটলেও এবার ঈদকে সামনে রেখে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরেরা।
তারা বলেন, চোরেরা পিকআপ ভ্যান নিয়ে আসে। ভ্যানটি সড়কের পাশে রেখে ক্রুটি মেরামতের নাটক করে। পরে সুযোগ বুঝে গরু ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। একাধিক ব্যক্তি এঘটনা দেখেছে। তবে তাদের সন্দেহ হয়নি যে ওই ভ্যানে চোরেরা এসেছে।
তারা বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও থানা পুলিশকে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার মিলছে না। পালাক্রমে কৃষকরা পাহারা দিয়েও চুরি ঠেকানো যাচ্ছেনা।
কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, গরু চুরির ঘটনা ভাকুর্তা ফাঁড়ির পুলিশকে অবহিত করা হলে তারা এক রাতে এলাকায় টহলে আসে। তখন আমার মুখে দাড়ি দেখে তারা ‘জঙ্গী’ বলে আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরাতে থাকে। পরে এলাকাবাসী ও স্বজনরা বেরিয়ে আসলে তোপের মুখে পুলিশ আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।
ভাকুর্তা পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তা সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মিথ্যা অভিযোগ কিংবা পকেটে ইয়াবা দিয়ে আমরা কাউকে কখনও আটক করিনি। তিনি বলেন, এ ফাঁড়িতে মাত্র ১৫জন সদস্য রয়েছে। এতো কম জনবল দিয়ে ভাকুর্তা এলাকা টহল কষ্ট হয়ে যায়। তবুও প্রতি রাতেই আমরা টহল দেয়ার চেষ্টা করি। তিনি বলেন, গরু চুরির অভিযোগ পাওয়া পর আমরা তদন্ত করছি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ভাকুর্তা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল আজিজ বলেন, গরু চুরি ঠেকাতে আমরা পুলিশের সাথে আলোচনা করেছি। চোর ধরতে এলাকায় পাহাড়া দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এপ্রসঙ্গে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহসিনুল কাদির বলেন, ভাকুর্তায় গরু চুরির ঘটনাটি সর্ম্পকে আমি অবগত আছি। পুলিশ চোরদের ধরতে চেষ্টা করছে। বুধবার ভোররাতে গরু চুরির সাথে জড়িত ৪জনকে আটক করা হয়েছে। তবে তিনি তদন্তের সাথে তাদের পরিচয় জানাননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ