পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগে আগামী ৩০ জুলাই প্রতিদ্বন্ধ্বিতাপূর্ণ সর্বশেষ নির্বাচন হতে যাচ্ছে তিন সিটি (রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট) করপোরেশনে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে হওয়ায় এই নির্বাচনটি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই দলই নির্বাচনে জয়লাভের জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে। দিন নেই রাত নেই প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত মেয়র, কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ছুঁটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। তবে ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই যেন উত্তেজনা বাড়ছে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে। খুলনা ও গাজীপুরে সহিংসতার কোন ঘটনা না ঘটলেও রাজশাহীতে এরই মধ্যে বিএনপির পথসভায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে কয়েকজন মুখোশধারী। বরিশালে পুলিশ কমিশনারের মাথায় পিস্তল ঠেকানোসহ তিন পুলিশকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। বরিশাল ও রাজশাহীতে আরও সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
আর এসব ঘটনায় নির্বাচনী এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে নিরাপত্তাহীনতা। ভোটারদের মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক। বিশেষ করে রাজশাহী ও বরিশালের ঘটনাটি ভোটারদের মধ্যে ভীতিকর পরিবেশ ছড়িয়েছে। এই ভীতিকর পরিবেশে ভোটাররা কতটা নিরাপত্তা বোধ করবেন সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছে নির্বাচন নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি সংস্থা।
ভোটের নগরিতে যেন কোন ধরনের সহিংসতা না ঘটে সে বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল। এরই অংশ হিসেবে গতকাল বরিশালে ডর ভয় দেখাইবেন আমার ভোট পাবেন না এই স্লোগানে গণস্বাক্ষর, আলোচনা সভা ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের বক্তারা বলেন, নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবে। তবে একে কেন্দ্র করে নগরীতে যাতে কোন ধরনের সহিংস ঘটনা না ঘটে। তাছাড়া ভোটাররা যাতে নিরাপদে ভোট প্রদান করতে পারেন সে বিষয়টির ওপর প্রার্থীদের লক্ষ রাখার দাবি জানানো হয়।
আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকেই রাজশাহীতে বিএনপির প্রার্থী ও সমর্থকদের বাধা দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে। ওই প্রার্থীর পথ সভায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। বরিশালে পুলিশ কমিশনারসহ তিন পুলিশ সদস্যের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সিলেটে বিএনপির প্রার্থীর এজেন্টদের তালিকা চেয়েছে পুলিশ। এছাড়া তিন সিটিতেই বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, প্রচার-প্রচারণা বাধা, রাতের বেলায় বিএনপির প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশের তল্লাশিরও অভিযোগ করেছেন মেয়র প্রার্থীরা। স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগ, তারা সরকারদলীয় প্রার্থীদের কাজকর্মে পৃষ্ঠপোষকতা করছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে বিএনপি নানা ধরণের ষড়যন্ত্র করছে। তাদের ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী অবগত আছে। সুন্দর সুষ্ঠু পরিবেশেই ভোট গ্রহণ শেষ হবে।
যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি আছে এবং তা থাকবে। তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনা করতে গেলে অভিযোগ আসতেই পারে। তবে অভিযোগ সঠিক কি না, তা দেখতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণ করতে হবে। অবশ্য এর আগে খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের আগেও সিইসিসহ নির্বাচন কমিশন সব দলকে সমান সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু দুই শহরেই নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতা-কর্মী ও এজেন্টদের ধরপাকড় করা হয়েছিল। জাল ভোট, ব্যালট ছিনতাইসহ ব্যাপক অনিয়মের বিষয়টি দেশে-বিদেশে আলোচিত হয়েছে।
রাজশাহী: নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই রাজশাহীতে বিরোধী দলীয় প্রার্থীকে পোস্টার টানানো ও প্রচারে বাধা দেয়ার অভিযোগ করা হচ্ছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির পথসভায় ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। ওইদিন নগরীর সাগরপাড়া বটতলা মোড়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নির্বাচনী পথসভা চলাকালে মুখোশ পরা ছয়জন দুর্বৃত্ত তিনটি মোটরসাইকেলে এসে সভাস্থলে পরপর তিনটি ককটেল ছুঁড়ে চলে যান। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমানসহ ১০-১২জন নেতাকর্মী আহত হয়। এই হামলার জন্য বিএনপি ক্ষমতাসীন দলকেই দায়ী করছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেখানে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসী তান্ডব চরম আকার ধারণ করেছে। সেখানে তারা বিএনপির সভাস্থলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে এর জন্য বিএনপিকেই দায়ী করেছে আওয়ামী লীগ।
বরিশাল: বরিশালে বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এছাড়া প্রশাসনের বিরুদ্ধে বৈষম্যম‚লক আচরণসহ ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে হুমকি-ধামকি দেয়ার অভিযোগ করেন বিরোধী মেয়র প্রার্থীরা। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিএনপির ঘাঁটিতে নৌকার জোয়ার আসায় বিরোধী প্রার্থীরা উল্টো-পাল্টা কথা বলছেন বলে দাবি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর। মজিবর রহমান সরোয়ার প্রশাসনের বিরুদ্ধে বৈষম্যম‚লক আচরণের অভিযোগ করে বলেন, বিগত দিনের ভোটের পরিসংখ্যান বলছে বরিশাল বিএনপি ঘাঁটি। অথচ বিএনপিকে মিছিল করতে দেয়া হচ্ছে না এবং কর্মী সমর্থকদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। বলে তার অভিযোগ।
এদিকে ১৪ জুলাই আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদসহ তার সমর্থকদের হাতে লাঞ্ছিত হন বরিশালের পুলিশ কমিশনার। তারা একটি যাত্রীবাহী লঞ্চের কেবিনে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে সিনিয়র সহকারী কমিশনার মর্যাদার এক কর্মকর্তাসহ তিন পুলিশ সদস্যকে লঞ্ছিত করেন। একপর্যায়ে শাহে আলম কমিশনারের মাথায় পিস্তল ধরেন। এই ঘটনার পর বরিশালে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ভোটাররা। যেখানে পুলিশ নিজেরাই নিরাপদ না সেখানে সাধারণ মানুষকে তারা কিভাবে নিরাপত্তা দেবে সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে অনেকের মধ্যে।
বরিশাল ও রাজশাহীতে সহিংসতার আশঙ্কা: বরিশালে পুলিশের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার আগেই নির্বাচন কমিশনের সাথে আইনশৃঙ্খলা-বিষয়ক বৈঠকে সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বরিশালে নির্বাচনের সময় সহিংসতা হতে পারে মর্মে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। রাজশাহীর কাজলা ও মতিহার এলাকাতেও আলাদা দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মত দিয়েছে। এছাড়া বিদেশি ক‚টনীতিকেরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে যেতে পারেন কি না, সে প্রশ্নও তোলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন কর্মকর্তা। নিরাপত্তার খাতিরে ক‚টনীতিকেরা গেলে আগে থেকেই তাঁদের বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দেন তিনি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আশঙ্কা এবং কয়েকটি ঘটনার পর থেকে আতঙ্ক আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়েছে ভোটারদের মধ্যে।
সিলেট: সিলেটে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, পুলিশ আর বেশি বাড়াবাড়ি করলে হয় নির্বাচন করবো, নতুবা অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো। আরিফ অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ ফোন করে আমার এজেন্টদের তালিকা চাইছে। এটা তাদের দায়িত্ব নয়। আমি পুলিশকে বাড়াবাড়ি না করতে বলবো। আধ্যাত্মিক নগরী এই সিলেটে কোনো অন্যায় সহ্য করা হবে না। প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো। তিনি বলেন, সিলেট গাজীপুরের মতো হবে না। সিলেটে গাজীপুর মার্কা নির্বাচন করার চেষ্টা করবেন না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকার নির্বাচনের নামে খেলা ও তামাশা করছে। তিন সিটিতেই বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিনা কারণে গ্রেফতার করছে। রাতের অন্ধকারে তাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হানা দিচ্ছে, তল্লাশি করছে। প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে। সরকার দলীয় প্রার্থী নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করলেও নির্বাচন কমিশন কোন ভ্রুক্ষেপই করছে না। যেন নির্বাচন কমিশন সরকার দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতেই নির্বাচনের আয়োজন করেছে।
রাজশাহীতে ককটেল হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপির পথসভায় ককটেল হামলা করা হলো। আর অমনি আওয়ামী লীগ বললো আমরা করিনি, বিএনপি করেছে। যেন ঠাকুর ঘরে কে রে? আমি কলা খায় না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক ইনকিলাবকে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হবার কোন কারণ নেই। দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও তা আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিএনপির গ্রেফতার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের এই অভিযোগ পুরনো। এ নিয়ে কথা বলার কিছু নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা এবং ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। বিএনপি ও ২০ দলের নেতাকর্মীদের মামলায় ও গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার করছে পুলিশ। রাতের অন্ধকারে বাড়িতে গিয়ে হামলা ও পরিবারের সদস্যদের হেনস্তা করছে। তবে ব্যালটের মাধ্যমে সরকারে এই ফ্যাসিবাদী কর্মকান্ডের জবাব দেবে জনগণ।####
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।