Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লক্ষীপুরে মেঘনায় চলছে ভাঙনের খেলা

বছরে তীর রক্ষা বাঁধে ছয়বার ধস : ব্যবহার নিম্নমানের বালু ও জিওব্যাগ

মো.কাউছার ও এস এম বাবুল (বাবর), লক্ষীপুর থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

 ল²ীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের দক্ষিণ অংশের প্রায় ২০০ মিটার ভেঙে গেছে, হুমকির মুখে রয়েছে বাঁধের বাকি অংশ। এতে কমলনগর উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এনিয়ে গত এক বছরে বাঁধে ছয়বার ধসের ঘটনা ঘটেছে। ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা বাঁধে বর্ষার শুরুতেই ধস দেখা দেওয়া এবং ভাঙন রোধে দ্রæত কার্যকরী উদ্যোগ না নেয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গত দুইদিনের তীব্র ¯্রােতে এক কিলোমিটার নির্মাণাধীন বাঁধের দু’পাশে বøক সরে ধসে পড়ছে। এতে করে জোয়ারের পানি ডুকে পড়েছে কিছু এলাকায়। এছাড়া বøক থেকে বøকের দূরত্ব বাড়ায় বাঁধের বেশ কিছু অংশ ফাঁকা হয়ে গেছে। ধস ঠেকাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জিও ব্যাগ (বালু ভর্তি বিশেষ ব্যাগ) ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করলে কোনভাবেই রক্ষা করা যাচ্ছেনা বাঁধ। এখন পুরো বাধঁ রয়েছে হুমকির মুখে। এছাড়া গত এক মাস ধরে কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরনগর,লুধূয়া,সাহেবেরহাট, কাদিরপন্ডিতের হাট,পাটওয়ারীহাট,চরকালকিনি ও চরফলকনসহ ১০টি গ্রামের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় জুড়ে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙ্গন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে ডাম্পিং না করেই বাঁধ নির্মাণ করেছে। বাঁধ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্মমানের বালু ও জিও ব্যাগ। এ কারণে গত এক বছর বাঁধে পাঁচবার ধস নামে। এছাড়া অন্যত্র থেকে মাটি সংগ্রহ করে বাঁধ নির্মাণ করার কথা থাকলেও নদীর তীর থেকে মাটি উত্তোলন করে বাঁধ নির্মাণ করায় বারবার বাঁধে ধস নামছে। তাই এবার বর্ষার শুরুতেই ফের ধস দেখা দেওয়া আতঙ্কে রয়েছে দু-লক্ষাধিক মানুষ। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হওয়ায় বাঁধের দু’পাশের এলাকায় অব্যাহতভাবে ভাঙছে। অনিয়মের মধ্যদিয়ে নিন্মমানের কাজ করায় বারবার বাঁধে ধস নামছে বলে অভিযোগ স্থানীয় এলাকাবাসীর।
সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের জন্য ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দকৃত টাকায় কমলনগর উপজেলায় এক কিলোমিটার, রামগতির আলেকজান্ডারে সাড়ে তিন কিলোমিটার ও রামগতিরহাট মাছঘাট এলাকায় এক কিলোমিটার বাধ নির্মাণ হওয়ার কথা। ২০১৫ সালের ১ ফেব্রæয়ারিতে সেনাবাহিনীর তত্ত¡াবধানে আলেকজান্ডার এলাকায় বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে সাড়ে তিন কিলোমিটারের কাজ শেষ করে।
এদিকে ওই বরাদ্দের ৪৮ কোটি টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার কাজ পায় নারায়নগঞ্জ ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। তার দুই বছর পর ২০১৬ সালের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংকে দিয়ে কাজ শুরু করে। ওই বছর নিম্নমানের বালু ও জিওব্যাগ দিয়ে কাজ শুরু করায় স্থানীয়রা কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অনিয়মের প্রতিবাদে ওই সময় মানববন্ধন করা হয়। পরে একই বছরের ২৩ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হওয়ায় বাঁধের দুই পাশে ভাঙনের খেলা চলছে। এর আগে গত বর্ষা মৌসুমেও ওই বাঁধে পাঁচবার ধস নামে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এজিএম মাসুদ রানা বলেন, কমলনগরের ভাঙন প্রতিরোধে এক কিলোমিটার বাঁধ যথেষ্ট নয়। তীর রক্ষা বাঁধের দুই পাশেই ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এতে নির্মাণাধীন বাঁধের ওপর প্রভাব পড়েছে। এছাড়া নদীতে জোয়ার ও পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসবের কারণে বাঁধের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমরা তাৎক্ষণিক সংস্কার শুরু করেছি।
ল²ীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা বলেন, বাঁধ ধসের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ের বাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু তা অনুমোদন না হওয়ায় কাজ হচ্ছে না।
ল²ীপুর-৪ রামগতি-কমলনরের সংসদ সদস্য-মাহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলছেন, শীঘ্র দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করা হবে। ১৪৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষা রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ