মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
পৃথিবীর দুই পরাশক্তি আমেরিকা ও রাশিয়ার দুই ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের দীর্ঘ কাক্সিক্ষত বৈঠকটি অবশেষে অনুষ্ঠিত হেলসিংকীতে। এর মাধ্যমে দুই নেতার মধ্যে আদৌ কি বৈঠক হবে-এমন আশঙ্কার পরিসমাপ্তি ঘটলো। ‘যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াকে বিশ্ব একসঙ্গে দেখতে চায়’ এমন মন্তব্য করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুই দেশের কাছে বিশ্বের ৯০ শতাংশ পরমাণু অস্ত্র থাকার কথা জানিয়ে ট্রাম্প এই বাস্তবতাকে নেতিবাচক আখ্যা দিয়েছেন। সোমবার ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের আগে দুই দেশের মধ্যে ‘দুর্দান্ত সম্পর্ক’র সম্ভাবনার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন ট্রাম্প। নানা জল্পনা-কল্পনা, সমালোচনা আর বিরোধিতার মুখেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্দি
ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকে বসেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পুতিন হেলসিংকিতে পৌঁছান নির্ধারিত সময়ের বেশ খানিকটা পরে। তবে বৈঠকস্থলে ট্রাম্পের আগেই পৌঁছে যান তিনি। স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় বৈঠকটি শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে তা শুর হয় নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পরে।
বৈঠক শুরু আগে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সামরিক বাণিজ্য থেকে শুরু করে ক্ষেপণাস্ত্র, পরমাণু, চীন নিয়ে আলোচনা করতে পারি। আমাদের দু’জনেরই বন্ধু চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে নিয়েও কথা বলবো আমরা।
ইউক্রেনের ক্রিমিয়ায় রুশ আধিপত্য আর সবশেষ মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয় ওবামা প্রশাসনের সময়েই। ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গুঞ্জন থাকলেও ওবামার রুশ কূটনীতিক বহিষ্কারের পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ী হওয়ার পর মার্কিন কূটনীতিকদের দেশ থেকে বহিস্কার করে রাশিয়া। সেই দেশের শীর্ষ নেতা পুতিনের সঙ্গে বৈঠককে ঘিরে নিজ দল রিপাবলিকান পার্টি ও ডেমোক্র্যাট উভয় শিবিরেরই তোপের মুখে পড়েছেন ট্রাম্প।
ঘরে বাইরে চাপের মুখেই পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় আমাদের মধ্যে দারুণ একটা সম্পর্কের সূচনা হবে। আপনি নিশ্চয়ই শুনেও থাকবেন যে, আমি সবসময়ই বলে আসছি, রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব খারাপ কিছু নয়। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি যে, বিশ্বও আমাদের একসঙ্গে দেখতে চায়।’
ট্রাম্প পুতিনের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা দুটি বড় পরমাণু শক্তিধর দেশ। বিশ্বের ৯০ শতাংশ পরমাণু অস্ত্র আমাদের কাছে। তবে এটা ভালো কিছু নয়, বরং নেতিবাচক। আমি মনে করি আমরা কিছু করতে পারবো। কারণ আমরা শুভশক্তির বাহিনী, অশুভ শক্তির নয়। অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে এটা নিয়েও কথা বলবো আমরা।’
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এই সামিটের দিকে ছিল সবার নজর। রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্র দেশ দুইটির মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরি সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ সেই সম্পর্ক আরো খারাপ করে তুলেছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করেছে বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যে এতো উত্তেজনা কেন?
এজন্য ফিরে যেতে হবে তথাকথিত স্নায়ুযুদ্ধের (১৯৪৫-১৯৮৯) সময়কালে। যুক্তরাষ্ট্র এবং তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ন কখনো যুদ্ধে জড়ায়নি, তবে ইউনিয়ন ভেঙে যাবার পরেও তাদের মধ্যে পার্থক্য রয়ে গেছে। বর্তমানে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আবার রাশিয়াকে সেই ক্ষমতায় নিয়ে যেতে চান। কখনো কখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানও নিচ্ছে দেশটি। ২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে ক্রাইমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার পর সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটে। তখন যুক্তরাষ্ট্র এবং আরো কয়েকটি দেশ রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
এই দুই নেতার বৈঠক কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ?
২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগের পর এই দুই নেতার সম্পর্কের বিষয়টি বিশ্বে সবার নজরদারির মধ্যে রয়েছে। যদিও ওই হস্তক্ষেপের অভিযোগ নাকচ করেছে মস্কো। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনে করে, মি. ট্রাম্পের পক্ষে রাশিয়া ওই নির্বাচন প্রভাবিত করেছে। নির্বাচনে রাশিয়ার ভূমিকা ছিল কিনা এবং মি. ট্রাম্পের শিবির তাতে কোন সহায়তা করেছে কিনা, সেটি নিয়ে তদন্ত করছেন স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুয়েলার। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগ, নির্বাচনে হারার কারণে এটি ডেমোক্রেটদের একটি ষড়যন্ত্র।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রচলিত রিপাবলিকান নীতির অনেকটা প্রতিকূলে দাঁড়িয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আকাক্সক্ষার কথা জানান। গত সপ্তাহেই তিনি শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট, জি সেভেন গ্রুপে রাশিয়াকে পুনরায় অন্তর্ভুক্তির পক্ষে সমর্থন দেন। ক্রাইমিয়াকে সংযুক্ত করার পর ওই গ্রুপে রাশিয়ার সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছিল।
তারা একে অপরের বিষয়ে কী করছেন?
ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসা করে বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৬ সালে তিনি বলেছেন, ‘তিনি খুব ভালো নেতা’। গত বছর তিনি মি. পুতিনকে বলেছেন ‘টাফ কুকি’। গত মার্চে রাশিয়ার বিতর্কিত নির্বাচনে মি. পুতিনের জয়ে মি. ট্রাম্প অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, যদিও তার উপদেষ্টারা তা না করার জন্যই পরামর্শ দিয়েছিলেন। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘খুবই উজ্জ্বল একজন ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমান এবং বহুমাত্রিক বলে বিভিন্ন সময় মন্তব্য করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন।
ট্রাম্পের মিত্ররা কি নিয়ে উদ্বিগ্ন?
গত সপ্তাহেই নেটো দেশগুলোর সঙ্গে একটি সম্মেলনে রাশিয়ার আগ্রাসী কর্মকান্ডের সমালোচনা করে ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি যৌথ বিবৃতিতে সাক্ষর করেন। এখন কি তিনি সেই উদ্বেগের কথা মি. পুতিনকে সরাসরি জানাবেন?
ইউরোপীয় মিত্ররা বলছেন, তাদের জানানো হয়নি যে হেলসিংকি বৈঠক থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প আসলে কি অর্জন করতে চাইছেন।
বাকি বিশ্বের জন্য এটি কী অর্থ বহন করছে?
অনেক অর্থই বহন করছে। সিরিয়া, ইউক্রেন, ক্রাইমিয়াসহ বিশ্বের অনেক জটিল বিষয়ে পরস্পর বিরোধী অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়া-যার প্রভাব পড়েছে সারা বিশ্বেই। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর অবরোধ সারা বিশ্বের জন্যই ক্ষতিকর বলে মি. পুতিন বর্ণনা করেছেন। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশেষ ভাবে এই বৈঠকের ওপর নজর রাখবে। রাশিয়ার হুমকির কারণে তারা কিছুটা অস্বত্বি মধ্যে রয়েছে, আবার অনেক দেশ তাদের জ্বালানির জন্য রাশিয়ারও ওপরও নির্ভরশীল। মধ্য আর পশ্চিম ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহের যে বিতর্কিত নর্ড স্ট্রিম-২ নামের প্রকল্প নিয়েছে জার্মানি, তাকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই রুটে ইউক্রেন, পোল্যান্ড বা বাল্টিক দেশগুলো থাকবে না। ফলে এসব দেশেরও এই বৈঠকের দিকে নজর ছিল। সবমিলিয়ে সারা বিশ্বেরই নজর ছিল গতকালের এই বৈঠকে আসলে কী হতে যাচ্ছে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।