Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে বিনিয়োগে ভাটা

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আসছেনা প্রত্যাশিত বিনিয়োগ। শিল্পায়ন থমকে আছে। কর্মসংস্থানের পথ রুদ্ধপ্রায়। গত প্রায় ৮ বছর যাবত চট্টগ্রামে বিনিয়োগে চলছে ভাটার টান। সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) নিম্নমুখী ধারায় রয়েছে। আর দেশীয় বিনিয়োগেও উদ্যোক্তাদের তেমন আকর্ষণ নেই। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তাদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান গ্যাস-বিদ্যুৎ ও ভূমি বা প্রয়োজনীয় শিল্পপ্লটের অভাবে বিনিয়োগ সম্ভাবনা আটকে আছে। এমনকি পুরনো ভারী ও মাঝারি আকারের শিল্প-কারখানায় উৎপাদনের চাকা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কিংবা বন্ধের পথে।
পাহাড়তলী, সীতাকুন্ড, কালুরঘাট, নাসিরাবাদের বেশ কিছু কল-কারখানা গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল) দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। অনেকগুলো কল-কারখানায় রেশনিং ও হলিডে স্টিগারিং করে গ্যাস সরবরাহ পেয়ে কোনোমতে টিকে আছে। তাছাড়া গার্মেন্টস ও বিভিন্ন রফতানিমুখী খাতের জন্য শিল্পপল্লী স্থাপনে অনিশ্চয়তাসহ শিল্পায়নের উপযোগী অবকাঠামোর সঙ্কট প্রকট। দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর সুবিধার আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণে তেমন অগ্রগতি নেই। সেই সাথে চট্টগ্রাম মহানগরীর পানিবদ্ধতার ‘ক্রনিক’ সমস্যায় এবং সুবিন্যস্ত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভাবে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাগণ।
অথচ চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র আগ্রাবাদে বেসরকারী খাতে তথা চিটাগাং চেম্বারের উদ্যোগে দেশের প্রথম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার (বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও শিল্পায়নে ব্যাপক আকারে সাড়া আশা করা হয়েছিল। চীন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও বিভিন্ন দেশের শিল্পোদ্যোক্তাগণ চট্টগ্রামে শিল্প-কারখানা স্থাপন এবং কোনো কোনো শিল্প, কল-কারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এখানে সম্প্রসারণ বা রি-লোকেট করার প্রস্তাবও দিয়ে গেছেন। কিন্তু এখনও কাক্সিক্ষত সাড়া মিলছে না।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ‘বাণিজ্যিক রাজধানী’ বলা হলেও চট্টগ্রামে শিল্পায়ন ও বিনিয়োগের গতি চলছে নেতিবাচক ধারায়। শত বছরের শিল্প-বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে চট্টগ্রামের ঐতিহ্য এবং সুখ্যাতি ফিকে হয়ে আসছে ক্রমেই। দেখা যাচ্ছে, গত ৮ বছরে বিনিয়োগের নিবন্ধন প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। এভাবে ক্রমাগতই কমছে শিল্পায়নে বিনিয়োগ নিবন্ধনের সংখ্যা। যদিও কোনো কোন বছরে নিবন্ধনের সংখ্যা কমলেও বিনিয়োগের আর্থিক প্রস্তাবের অংক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ‘প্রস্তাবিত’ বিনিয়োগের আংশিক আশ্বাস বাস্তবায়ন হয়েছে।
২০০৯ সালে ২৯২টি নিবন্ধনের বিপরীতে বিনিয়োগের প্রস্তাব ছিল ২ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার। ২০১০ সালে ২৮৮টি নিবন্ধনের বিপরীতে বিনিয়োগ প্রস্তাবে টাকার অংক ছিল ২ হাজার ৯১০ কোটি টাকা, ২০১১ সালে ২৩৭টি বিনিয়োগ প্রস্তাবের বিপরীতে ২ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা, ২০১২ সালে ২১১টি প্রস্তাবের বিপরীতে ১ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা, ২০১৩ সালে ১৫৪টি প্রস্তাবের বিপরীতে ২ হাজার ৩২১ কোটি টাকা, ২০১৪ সালে ১৪২টি প্রস্তাবের বিপরীতে ১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা, ২০১৫ সালে ১৩৪টি প্রস্তাবের স্থলে ২ হাজার ২১৫ কোটি টাকা, ২০১৬ সালে ১৩২টি প্রস্তাবের বিপরীতে ২ হাজার ২২০ কোটি টাকা এবং ২০১৭ সালে ১২৮টি বিনিয়োগ প্রস্তাবের বিপরীতে আর্থিক প্রস্তাব ছিল ২ হাজার ২১২ কোটি টাকার।
এদিকে চট্টগ্রামে বিনিয়োগ এবং শিল্পায়নে স্থবিরতার কারণ প্রসঙ্গে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি মীর্জা আবু মনসুর গতকাল (রোববার) দৈনিক ইনকিলাবকে বলেছেন, চট্টগ্রামে গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় সঙ্কট বিরাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। বিনিয়োগের জন্য অপরিহার্য অবকাঠামা সুযোগ-সুবিধারও অভাব রয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণেও বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন বিঘিœত হচ্ছে। অবশ্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেখানে শিল্পায়ন ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। তবে সেই সঙ্গে বনেদী এই শিল্পোদ্যোক্তা অভিমত ব্যক্ত করেন, দেশে এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই বটে। কিন্তু থাকলেও সার্বিকভাবে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা প্রশ্নে চাপা অসন্তোষ কখন বিস্ফোরণ হয় তা নিয়ে এক ধরনের অস্থিরতা আছে। কাজেই সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থার অভাব রয়ে গেছে।
দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা শিল্প-কারখানা স্থাপনে বিনিয়োগের পূর্বশর্ত হিসেবে দেখেন গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের নিশ্চয়তাকে। অথচ চট্টগ্রামে গ্যাস-বিদ্যুতের ধারাবাহিক সঙ্কটের কারণে ধুকছে শিল্প-কারখানার উৎপাদন এবং নতুন শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ সম্ভাবনাসমূহ। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) আওতায় চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুট। বিপরীতে গ্যাস সরবরাহ মিলছে সর্বনিম্ন ১৮৫ থেকে ২৬০ মিলিয়ন ঘনফুট। বৃহত্তর চট্টগ্রামের শিল্প-কারখানায় ১৬৭টি গ্যাস চালিত ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট(প্রধানত রফতানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পে), ৬৫টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন এবং প্রায় ৪ লাখ আবাসিক বা গৃহস্থালী গ্রাহকের নিত্যদিনের সঙ্কট এই গ্যাসের সমস্যা। গ্যাস সঙ্কট নিরসনে আড়াই মাস আগে কাতার থেকে পেট্রোবাংলা কর্তৃক আমদানিকৃত এলএনজিবাহী জাহাজ বর্তমানে মহেশখালীর অদূরে সাগরে অলস ভাসছে। কবে এলএনজি থেকে রূপান্তরিত গ্যাস গ্রিড লাইনে সরবরাহ হবে, আর কবে গ্যাস সঙ্কট ঘুচবে তা অনিশ্চিত।



 

Show all comments
  • ইমরানুল হক শাওন ১৬ জুলাই, ২০১৮, ২:১৪ এএম says : 0
    বিনিয়োগ ও শিল্প স্থাপন না হওয়ার কারণ দেশে সুশাসনের অভাব। ভোট নিয়ে চলছে বিতর্ক এবং অসন্তোষ। সবকিছুতে অনিশ্চয়তা। এর শেয কোথায়?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ