Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইপিজেড থেকে রফতানি ট্রফি প্রদান করবে সরকার

৬৩ প্রতিষ্ঠান পেল জাতীয় রফতানি পুরস্কার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

দেশের রফতানি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য জাতীয় রফতানি ট্রফি প্রদান করা হয়। ইপিজেড থেকে রফতানিকারকগণ এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন।
তবে আগামী বছর থেকে ইপিজেড থেকে রফতানিকারকদেরও জাতীয় রফতানি ট্রফি প্রদান করা হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গতকাল রোববার ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো আয়োজিত জাতীয় রফতানি ট্রফি ২০১৪-২০১৫ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ সব কথা বলেন।
বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস- চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য্য।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সরকার সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। রফতানিকারকদের পলিসি সাপর্ট ও নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের শ্রমিকরা এখন নিরাপদ ও কর্মবান্ধব পরিবেশে কাজ করছে। দেশের তৈরি পোশাক খারখানাগুলো এখন গ্রীন ফ্যাক্টরিতে পরিনত হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক সফলতার জন্য দেশের ব্যবসায়ীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রশংসনীয়। ১৯৭২-৭৩ অর্থ বছরে দেশের পাট, চা ও চামড়া রফতানি করে আয় হয়েছিল ৩৪৮ কোটি টাকা। আজ ১৯৯টি দেশে বাংলাদেশের ৭৭২টি পণ্য রফতানি করে আয় করছে প্রায় ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে এ রফতানি ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। শুধু তৈরী পোশাক রফতানি করে আয় হবে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তৈরি পোশাক রফতানি থেকে গত বছর ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আয় হয়েছে ৩৩.৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করলে দেশের গ্রামগুলোকে শহরে পরিনত করা হবে। গ্রামের মানুষ শহরের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে প্রধানমন্ত্রী ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। এগুলোর বাস্তবায়নের কাজ দ্রæত এগিয়ে চলছে। ২০৩০ সালে বাংলাদেশ বিশে^র মধ্যে ২৮তম অর্থনৈতিক শক্তি এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিনত হবে।
এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ পরিকল্পিত ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য দেশের ট্রেডিশনাল রফতানি পণ্যের পাশাপাশি নন-ট্রেডিশনাল আইটেম রপ্তানির উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে। ৭ম পঞ্চবাষির্কী পরিকল্পনায় দেশের আইটি, ঔষধ, ফার্নিচার, কৃষিপণ্য এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
৬৩ প্রতিষ্ঠান পেল জাতীয় রফতানি পুরস্কার: সর্বোচ্চ রফতানি আয়ের ভিত্তিতে এ বছর সেরা রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার পেয়েছে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস লি.। প্রতিষ্ঠানটি এ নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সেরা রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার পেল।
তৈরি পোশাক (ওভেন) খাতে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ ট্রফি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো যথাক্রমে একেএম নিটওয়্যার লিমিটেড, রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড ও অনন্ত অ্যাপারেলস লিমিটেড। তৈরি পোশাক (নিটওয়্যার) খাতের স্বর্ণপদক পেয়েছে ফকির নিটওয়্যার্স লিমিটেড। এ খাতে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে যথাক্রমে জিএমএস কম্পোজিট নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও স্কয়ার ফ্যাশনস লিমিটেড।
সুতা খাতে স্বর্ণ ট্রফি পেয়েছে কামাল ইয়ার্ন লিমিটেড। রৌপ্য ট্রফি পেয়েছে বাদশা টেক্সটাইল লিমিটেড আর ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে সুফিয়া কটন মিলস লিমিটেড।
টেক্সটাইল ফেব্রিকস খাতে স্বর্ণ ট্রফি পেয়েছে এনভয় টেক্সটাইল লিমিটেড। রৌপ্য ট্রফি পেয়েছে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল ও ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে হামজা টেক্সটাইলস। হোম ও বিশেষায়িত টেক্সটাইল পণ্য খাতে স্বর্ণ ও রৌপ্য ট্রফি পেয়েছে যথাক্রমে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস লিমিটেড ও এসিএস টেক্সটাইল লিমিটেড। টেরিটাওয়েল খাতে স্বর্ণ ট্রফি পেয়েছে নোমান টেরিটাওয়েল লিমিটেড।
হিমায়িত খাদ্যপণ্য খাতে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ ট্রফি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো যথাক্রমে জালালাবাদ ফ্রোজেন ফুডস লিমিটেড, মীনহার সি ফুডস লিমিটেড ও কুলিয়ারচর সি ফুডস লিমিটেড।
কাঁচা পাটপণ্য খাতে স্বর্ণ ও রৌপ্য ট্রফি পেয়েছে যথাক্রমে পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ লিমিটেড ও মেসার্স বাবুল জুট ট্রেডিং। পাটজাত পণ্যে স্বর্ণ ট্রফি পেয়েছে আকিজ জুট মিলস লিমিটেড। রৌপ্য ট্রফি পেয়েছে জনতা জুট মিলস লিমিটেড ও ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে দ্য গোল্ডেন ফাইবার ট্রেড সেন্টার লিমিটেড।
ক্রাস্ট বা ফিনিশড চামড়া পণ্য খাতে স্বর্ণ ট্রফি পেয়েছে এসএএফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, রৌপ্য পেয়েছে মেসার্স ঢাকা হাইড অ্যান্ড স্কিনস লিমিটেড। চামড়াজাত পণ্য খাতে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ ট্রফি পাবে যথাক্রমে পিকার্ড বাংলাদেশ লিমিটেড, আরএমএম লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও এবিসি ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ফুটওয়্যার খাতে স্বর্ণ ট্রফি পেয়েছে বে ফুটওয়্যার লিমিটেড। এ খাতে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে যথাক্রমে ফুটবেড ফুটওয়্যার লিমিটেড ও আকিজ ফুটওয়্যার লিমিটেড।
এ বছর এগ্রো প্রসেসিং পণ্য রপ্তানিতে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক পাওয়া তিনটি প্রতিষ্ঠানই প্রাণ-আরএফএল গ্রæপের। এর মধ্যে প্রাণ ডেইরি লিমিটেড স্বর্ণপদক, প্রাণ এগ্রো রৌপ্য পদক এবং ময়মনসিংহ এগ্রো (প্রাণ-আরএফএল গ্রæপের প্রতিষ্ঠান) ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে।
প্লাস্টিক পণ্য রফতানিতে স্বর্ণপদক পেয়েছে বেঙ্গল প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লি. ইউনিট-৩, রৌপ্য পেয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রæপের প্রতিষ্ঠান ডিউরেবল প্লাস্টিক লি.। ট্রফি পাওয়ার তালিকায় কৃষিজ পণ্য শ্রেণিতে স্বর্ণ ও ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে মনসুর জেনারেল ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড, রৌপ্য পদক পেয়েছে হেরিটেজ এন্টারপ্রাইজ। ফুল-ফলিয়েজ শ্রেণিতে রাজধানী এন্টারপ্রাইজ স্বর্ণ, ক্যাপিটাল এন্টারপ্রাইজ রৌপ্য পদক পেয়েছে। হস্তশিল্পজাত পণ্য শ্রেণিতে কারুপণ্য রংপুর লিমিটেড স্বর্ণ, ক্ল্যাসিক্যাল হ্যান্ডমেইড প্রডাক্টস বিডি রৌপ্য, বিডি ক্রিয়েশন ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে। সিরামিক শ্রেণিতে শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেড স্বর্ণ, প্রতীক সিরামিকস লিমিটেড রৌপ্য পদক পেয়েছে। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শ্রেণিতে ইউনিগেøারি সাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড স্বর্ণ; ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস শ্রেণিতে বিআরবি কেব্ল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড স্বর্ণ; অন্যান্য শিল্পজাত শ্রেণিতে বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেড স্বর্ণ; ফার্মাসিউটিক্যালস শ্রেণিতে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড স্বর্ণ, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড রৌপ্য, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ব্রোঞ্জ; কম্পিউটার সফটওয়্যার শ্রেণিতে সার্ভিস ইঞ্জিন লিমিটেড স্বর্ণ; প্যাকেজিং ও এক্সেসরিজ শ্রেণিতে মন ট্রিমস লিমিটেড স্বর্ণ, ইউনিগেøারি পেপার অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড রৌপ্য, জাবের অ্যান্ড জোবায়ের অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড ব্রোঞ্জ ও অন্যান্য প্রাথমিক পণ্য শ্রেণিতে স্বর্ণ পদক পেয়েছে গাজী এন্টারপ্রাইজ। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সংরক্ষিত স্বর্ণ ট্রফি পেয়েছে ফেক্সিনকো।
এ ছাড়া রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) শতভাগ বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকেও পুরস্কৃত করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক (নিট ও ওভেন) খাতে ইউনিভার্সেল জিনস লিমিটেড স্বর্ণ, প্যাসিফিক জিনস লিমিটেড রৌপ্য, ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও লিমিটেড ব্রোঞ্জ এবং অন্যান্য পণ্য ও সেবা খাতে স্বর্ণ পদক পেয়েছে আরএম ইন্টারলাইনিংস লি.।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য রফতানি বাণিজ্য উন্নয়নে মূখ্য ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাসমুহকে প্রতিবছর জাতীয় রফতানি ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে রফতানি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২৯টি পণ্য ও ২৯টি সেবার ৩২টি খাতের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় রফতানি ট্রফি প্রদান করা হয়। এবছর সর্বমোট ২৯টি স্বর্ণ, ২০ রৌপ্য এবং ১৪টি ব্রোঞ্চ পদক প্রদান করা হয়। এবার মোট ৬৩টি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় রফতানি ট্রফি ও সনদ প্রদান করা হলো। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ রফতানিকারকদের মাঝে এ ট্রফি ও সনদ বিতরণ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সরকার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ