Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নেপথ্যে পণ্যবাহী গাড়ি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট, চলে লোড-আনলোডের কাজ

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, চান্দিনা থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

শিল্প কারখানার পণ্যবাহী ট্রাক ও কভার্ডভ্যান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতু দিয়ে ধীরগতিতে চলাচলের কারনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। মেঘনা সেতু এলাকা থেকে মহাসড়কের দাউদকান্দি উপজেলার জিংলাতলী পর্যন্ত গতকাল শুক্রবার এ যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ সময় যানজটে হাজার হাজার গাড়ী মহাসড়কে আটকে থাকতে দেখা যায়।
গত তিনদিন আগে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে থেমে থেমে এ যানজট শুরু হয়। গতকাল শুক্রবার সকালে মেঘনা সেতুতে একটি ট্রাক বিকল হয়ে পড়লে মহাসড়কে যানজট স্থায়ীভাবে রুপ নেয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে যানজটের মাত্রা আরো তীব্র হতে থাকে। পরে হাইত্তয়ে পুলিশ রেকার এনে ট্রাকটি সরিয়ে নিলে দুপুর ১২টায় যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল শুরু করে। এভাবেই মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবে যানজটের ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ বলছেন, শিল্প কারখানার পণ্যবাহী ট্রাক ও কভার্ডভ্যানগুলো ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি পণ্য নিয়ে ধীরগতিতে চলাচল ও শিল্প কারখানাগুলো অধিকাংশ মালবোঝাই গাড়ি মহাসড়কে রাখার কারণেই মূলত মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে শিল্প কারখানার পণ্যবাহী গাড়িতেই দখল হয়ে যাচ্ছে সড়কের একাংশ। এই মহাসড়কে বাস-ট্রাক-লরি-কাভার্ডভ্যানের ঠায় দাঁড়িয়ে থাকাই যেন এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে চার লেন সড়কের দু’পাশের বেশিরভাগ অংশই দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন কারখানার কন্টেইনার মুভার, লরি, কাভার্ডভ্যান ও পণ্যবাহী ট্রাক।
এছাড়া মহাসড়কেই চলে পণ্য ও কাঁচামাল লোড-আনলোডের কাজ। তাতে করে এখন ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা টোলপ্লাজা পার হতে গেলেই যানজটের কবলে পড়ে বসে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। এতে চার লেনের সুফল পাচ্ছেন না যাত্রীরা। শুক্রবার সকাল দশটায় কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার দোল্লাই নবাবপুর গ্রামের দোকানদার অনির্বাণ পরিবহনের বাসের যাত্রী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এক মাস বয়সী মেয়ের নিউমোনিয়া জ্বরের চিকিৎসার জন্য স্ত্রীসহ আজ ভোরে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছি। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুরে এসে যানজটে আটকা পড়ে শহীদনগর পর্যন্ত চার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে। অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে কখন ঢাকায় পৌঁছাতে পারব জানা নেই। গরমে গাড়িতে বাচ্চাটার খুব কষ্ট হচ্ছে। বাসের চালক লিটন মিয়া বলেন, ভোররাত সাড়ে চারটায় বাস ছেড়েছে। প্রথম ট্রিপের গাড়িরই এ অবস্থা। পরের গাড়ির কী অবস্থা হবে কে জানে ? তিনি বলেন, আগেরদিনও একই সমস্যায় পড়েছিলাম। ঢাকাগামী জৈনপুরী পরিবহনের বাসের যাত্রী নুসরাত জাহান বলেন, দুই বছরের সন্তান নুহানকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়ে তীব্র যানজটে আটকে পড়েছি। কখন ঢাকায় পৌঁছাবো এ নিয়ে ভাবছি।
যাত্রী ও চালকদের অভিযোগ, শিল্প কারখানাগুলোর পণ্য ও কাঁচামাল পরিবহনকারী গাড়ির পার্কিংয়ে দখল হয়ে থাকে সড়কের একপাশ। শুধু তাই নয়, কারখানাগুলোর কাঁচামাল ও পণ্য লোড-আনলোডের কাজও অনেক সময় চলে সড়কের ওপরেই। নিয়ম না থাকলেও থানা ও হাইওয়ে পুলিশকে টাকা দিয়ে ‘ম্যানেজ’ করে এভাবে পার্কিং ও লোড-আনলোডের কাজ কারখানাগুলো চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কারখানার গাড়িতে সড়ক দখলের বিষয়টি মেনে নিলেও ‘ম্যানেজ’ হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে পুলিশ।
হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, শিল্প কারখানাগুলো নিজস্ব ট্রাক স্ট্যান্ড নেই। তাদের অধিকাংশ গাড়ি সড়কে ডাম্পিং করে রাখা হয়। এ কারণেই মূলত মহাসড়কের এই অংশে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সড়ক দখলে রাখার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমরা মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করি। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হচ্ছে না। তবে টাকা নিয়ে পার্কিংয়ের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পণ্য ও কাঁচামাল আনা নেয়ার জন্য চান্দিনার উষা জুট মিল, সাহাদাত জুট মিল, দাউদকান্দির শহীদনগরের সোনালী জুট মিল ছাড়াও মহাসড়কের পাশে মেঘনা, সোনারগাঁও এলাকায় ছোট বড় শিল্প কারখানা গড়ে ওঠেছে। ওইসব কারখানায় গাড়ি রাখার জন্য নিজস্ব কোনও ট্রাক স্ট্যান্ড নেই। পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে তারা এসব গাড়ি মহাসড়কের ওপর পার্কিং করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জুট মিলের পরিবহন সেক্টরের এক কর্মকর্তা বলেন, সড়কে পার্কিং করার জন্য থানা ও হাইওয়ে পুলিশকে প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়া হয়। টাকা না দিলে পুলিশ অভিযান চালায়, ঝামেলা করে। দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ ও গজারিয়ার ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর আলমগীর হোসেন বলেন, শিল্প কারখানাগুলো অধিকাংশ গাড়ি সড়কে ডাম্পিং করে রাখা ও অতিরিক্ত মালবাহী যানবাহন মেঘনা-গোমতী ও মেঘনা সেতু দিয়ে ধীরগতিতে চলায় মূলত মহাসড়কের এই অংশে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে আইনগতভাবে যা কিছু করা সম্ভব, আমরা তার সবই করি। তারপরও তারা সড়কে গাড়ি রাখছে। গাড়ির সংখ্যা বেশি, রাখার জায়গা নেই এসব বলে তারা সড়কেই পার্কিং করছে। পুলিশ ও ভুক্তভোগিদের মতে, শিল্প কারখানার মালিকরা মহাসড়কের উপর গাড়ি ডাম্পিং করে না রাখা ও অতিরিক্ত মালবাহী যানবাহন নিয়ে মহাসড়কে চলাচলের ব্যাপারে চালকদের নির্দেশনা দিলেই মহাসড়কে যানজট বন্ধ করা সম্ভব। অন্যাথায় এই প্রবণতা দিনের পর দিন চলতে থাকবে। যাত্রীদেরকেও ভোগান্তি পোহাতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পণ্যবাহী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ