চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
কোন অন্যায় কাজ করে তার জন্য অনুশোচনা করা বা এই অপকর্ম আর জীবনে না করার জন্য কায়মনে তওবা করাও সততার একটি বৈশিষ্ট্য। হযরত বারিদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- মাগের ইবনে মালেক (রাঃ) হযরত নবী করিম (সাঃ) দরবারে গিয়ে আরজ করলেন- হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে পবিত্র করুন। রাসূল (সাঃ) বললেন তোমার সুমতি হউক, যাও, আল্লাহর দরবারে গিয়ে তওবা কর। মাগের ইবনে মালেক কিছুদূর গিয়ে আবার এসে বললেন- হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে পবিত্র করুন। এভাবে তিনি তিনবার বললেন। চতুর্থ বার রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন আমি তোমাকে কিসের থেকে পবিত্র করব। মাগের ইবনে মালেক বললেন- ব্যভিচার থেকে। রাসূল (সাঃ) সাহাবায়ে কেরামকে জিজ্ঞেস করলেন। লোকটি কি মাতাল? তারা উত্তরে বললেন- না। রাসূল (সাঃ) আবার জিজ্ঞেস করলেন সে কি মদ খেয়েছে? তারা জবাবে বললেন না। রাসূল (সাঃ) আবার মাগের ইবনে মালেককে জিজ্ঞেস করলেন- তুমি কি সত্যিই ব্যভিচার করেছ? মাগের ইবনে মালেক বলল হ্যাঁ। এরপরই মাগের ইবনে মালেককে প্রস্থারাঘাতে হত্যা করে ব্যভিচারের শাস্তি কার্যকর করা হল। এর তিনদিন পর রাসূল (সাঃ) সাহাবায়ে কেরামকে বললেন- তোমরা মাগের ইবনে মালেকের জন্য মাগফিরাতের দোয়া কর। সে যেরূপ তওবা করেছে তা গোটা জাতির জন্য বণ্টন করে দেয়া হলে তাদের জন্য যথেষ্ট হবে। ব্যবসা একটি অতি উত্তম ইবাদত। কিভাবে ব্যবসা করলে সততার সাথে ব্যবসা হবে তার কয়েকটি উদাহরণ হচ্ছে এই- ইমাম আবু হানিফা (রঃ) নিজের শরীক ব্যবসায়ী হাফস ইবনে আব্দুর রহমানের কাছে কিছু কাপড় বিক্রির জন্য পাঠান। তিনি তাকে বলে দেন একখানা কাপড়ে কিছু খুঁত আছে তা ক্রেতাকে জানিয়ে দিতে হবে। হাফস সেই কাপড় বিক্রি করে দেন। কিন্তু কাপড়ের খুঁতের কথা বলতে ভুলে যান। খুঁতপূর্ণ কাপড়ের বিনিময়ে তিনি পুরো দাম আদায় করেন। এই চালানের দাম ছিল ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ হাজার দিরহাম। ইমাম আবু হানিফা তার শরীককে ক্রেতার সন্ধান নিতে বলেন। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও ক্রেতার সন্ধান পাওয়া যায়নি। এরপরও তিনি তার শরীক থেকে পৃথক হন এবং গোটা চালানোর দাম আল্লাহর পথে দান করে দেন। নিজের পবিত্র সম্পত্তির সাথে সেটা তিনি মেশাতেও দেননি। প্রখ্যাত ইমাম ইউনুস বিন উবায়েদ কাপড়ের ব্যবসা করতেন। তিনি তাঁর ভাতিজাকে দোকানে রেখে নামাজ পড়তে যান। এ সময় তাঁর ভাতিজা দুশত দিরহামের একখানা কাপড় চারশ দিরহামে বিক্রি করে দেয়। ক্রেতা সন্তুষ্ট চিত্তে নিয়ে যায়। পথিমধ্যে ইউনুসের সাথে সাক্ষাত হয়। ইউনুস তাঁর কাপড় চিনতে পেরে জিজ্ঞেস করলেন- এটা কত দিয়ে কিনেছ? ক্রেতা বলল চারশ দিরহামে কিনেছি। ইউনুস বললেন এটা তো দুশত দিরহাম মূল্যের কাপড়। ক্রেতা আবার বললো এ কাপড় আমাদের দেশে পাঁচশত দিরহামে বিক্রি হয়। তাই এটা আমি সন্তুষ্ট চিত্তে নিয়েছি। ইউনুস সেই ক্রেতাকে তাঁর দোকানে নিয়ে গেলেন এবং তাকে দুশত দিরহাম ফিরিয়ে দিলেন। আর তাঁর ভাতিজাকে এই বলে তিরস্কার করলেন- তোর কি লজ্জা নেই? তোর মনে কি খোদাভীতি নেই? এভাবেই তাকে গালমন্দ করেন।
সৎলোক পরিচয় করা অত্যন্ত কঠিন। আসুন প্রশ্নোত্তরের আলোকে সৎলোকের পরিচয় জেনে নেই:-
১. ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ মানে ধর্মকে বাদ দিয়ে পশুত্ববাদকে বরণ করা। কেহ বলল আমি ধর্মনিরপেক্ষ। অথবা কেহ বলল আমি ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামে বিশ্বাসী কিন্তু রাজনৈতিক জীবনে ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী, আমি রাজনৈতিক জীবনে ইসলামী অনুশাসন মানিনা। এরূপ ব্যক্তি কি সৎ? এর জবাবে বলব- সৎ হতে হলে প্রথমে ধার্মিক হতে হবে এবং ইসলামী অনুশাসনকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে মেনে নিতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষ লোক কখনও সৎ হাতে পারেনা।
২. একদল লোক বলল- আমরা জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী অনুশাসনে বিশ্বাসী, এদের মুখে দাঁড়ি, পরনে পাঞ্জাবী আছে। এরা ‘‘আল্লাহর আইন চাই, সৎলোকের শাসন চাই’’ বলে শ্লোগান দিয়ে থাকে। কিন্তু এরা বলে থাকে- ‘‘নবী আমাদের মত দোষে-গুণে মানুষ, তিনি দশজনের মত একজন।’’ এরা স্বার্থের কারণে নারী নেতৃত্বের অনুসরণ করে আর স্বার্থের হানি ঘটলে নারী নেতৃত্বের বিরোধীতা করে। এরা কি সৎলোক? আমি তার উত্তরে বলব- এদের মুখে দাঁড়ি, পরনে পাঞ্জাবী এবং তারা মুখে ইসলামের কথা যতই বলুক না কেন এরা কখনও সৎলোক হতে পারেনা। কারণ মুখে দাঁড়ি পরনে পাঞ্জাবী ও হাতে তাসবীহ রেখে একদল লোক নবীজির লাশ চুরি করতেও এসেছিল ৫৫৭ হিজরীতে। এরা ছিল মূলত: খৃষ্টান। মুসলমানের রূপ ধরে তারা এ জঘন্যতম কাজ করতে এসেছিল। সুতরাং মুখে দাড়ি, হাতে তাসবীহ থাকলেই সৎলোক হওয়া যায় না। মুসলমান হতে হলে আক্বীদা সঠিক থাকতে হবে। সঠিক আক্বীদা বিশ্বাস থাকতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।