বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর বাজার মোড় থেকে নরসিংহপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও মেরামত কাজ শুরু না হওয়ায় ৩ মাস ধরে এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যানবাহন স্বল্পতায় নরসিংহপুর হরিণা ফেরি সার্ভিসের ৫ ফেরির মধ্যে ৪ টি বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার প্রতি মাসে এ খাতে ৫-৬ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে বলে বিআইডবিøউটিসি জানিয়েছে। চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়া শরীয়তপুর সদর উপজেলার মনোহর বাজার থেকে ভেদরগঞ্জ উপজেলার আলুবাজার ফেরিঘাট পর্যন্ত ২৭ কিমি সড়ক। গত ডিসেম্বরে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগের সচিব সড়কটি পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি ২৭ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন।
দুটি গুচ্ছ প্রকল্পের মাধ্যমে মনোহর বাজার থেকে ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর বাজার মোড় পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সংস্কারে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৫ কোটি টাকা। গত ১৭ মার্চ শহীদ অ্যান্ড ব্রাদার্স ও আরসি নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এর কার্যাদেশ দেয়া হয়। এর মধ্যে মনোহরবাজার থেকে ভেদরগঞ্জ উপজেলার মির্জাপুর স্বনির্ভর সেতু পর্যন্ত কিছু অংশের কাজ শুরু করে আবার বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে স্বনির্ভর সেতু থেকে নারায়ণপুর বাজার মোড় পর্যন্ত কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ চলমান রাখলেও তার গতি মন্থর। অপর দিকে, নারায়ণপুর মোড় থেকে নরসিংহপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করার জন্য ১৫ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। সে কাজ পাওয়া ঠিকাদার মালামালের উর্ধ্বমূল্যের অজুহাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার পর তা রিভাইস হয়ে না আসায় এখনো সে অংশে কাজ শুরু হয়নি।
ফলে নাজুক অবস্থায় থাকা এ সড়ক দিয়ে বর্তমানে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা ও স্থলবন্দর ভোমরা ও বেনাপোলের সঙ্গে চট্টগ্রামে সহজ যাতায়াতে এ সড়ক ব্যবহার করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি ৩ মাস বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়ছে মানুষ। এ সড়কের যানবাহন বর্তমানে ঢাকা হয়ে দীর্ঘ পথ ঘুরে যাতায়াত করছে।
শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, মাদারীপুরের মস্তফাপুর থেকে চাঁদপুর সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের শরীয়তপুর অংশের সদর উপজেলার আঙ্গারীয়া থেকে ভেদরগঞ্জের নরসিংহপুর পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার সড়ক। ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়কটি উদ্বোধন করেন। সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কের ৩৫ কিলোমিটারের ২৭ কিলোমিটারই নাজুক। তিন মাস ধরে বৃষ্টি হওয়ায় সড়ক চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে গেছে। বেহাল সড়কটি সচল রাখার জন্য গত ৪ বছরে সংস্কারে ৩৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু সড়ক চলাচলের উপযোগী হয়নি।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে মনোহর বাজার পর্যন্ত সড়কে হালকা যানবাহন চলাচল করে। নারায়ণপুর থেকে নরসিংহপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত সড়কে কোনো যানবাহন চলাচল করে না। ওই ১২ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কিছু কিছু স্থান দিয়ে মোটরসাইকেল যাওয়ার অবস্থাও নেই। এ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিদিন ৫ ফেরি দিয়ে ৭-৮শ’ যান পারাপার হতো। তিন মাস ধরে যান চলাচল বন্ধ থাকায় ঘাটে ফেরিগুলো নোঙর করে রাখা হয়েছে। মাঝে মধ্যে একটি ফেরি দিয়ে কোনো প্রকারে সার্ভিস সচল রাখা হচ্ছে।
নারায়ণপুর মোড়ে সড়কে দেবে কুষ্টিয়া থেকে চাঁদপুরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আসা ট্রাকচালক আ. রাজ্জাক তফিলদার বলেন, সড়ক ঠিক হয়েছে শুনে এসে এখন বিপদে পড়েছি। একটু দূরে কাঁঠালভর্তি আরেক ট্রাকচালক বলেন, আমার ভাড়া লাগবে না আপনার মাল নামান, আমি আর যাবো না। রুহুল আমিন নামের ওই ড্রাইভার মেহেরপুর থেকে এসে এখন গাড়ি উঠাতে না পেরে এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। চরসেন্সাস ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও নরসিংহপুর ঘাটের সাবেক ইজারাদার মো. জিতু মিয়া বেপারী বলেন, ফেরিঘাট ও ৮ কিলোমিটার সড়ক আমার ইউনিয়নের ওপর দিয়ে গেছে। সড়ক মেরামতে যত দেরি হচ্ছে, আমাদের যানমালের ক্ষতি ততই বাড়ছে। দ্রæত এ সড়ক সংস্কার না হলে বিপদ বাড়তেই থাকবে
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডবিøউটিসি) শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌপথের আলুরবাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আব্দুস সাত্তার বলেন, এ সড়কে এখন আর যানবাহন নিয়ে কেউ আসতে চায় না। এ সড়কটি দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ খুব সহজে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সঙ্গে যাতায়াত করতে পারে। কিন্তু এখন তারা ঢাকা হয়ে ঘুরে যাতায়াত করছে। এ ঘাট দিয়ে যানবাহন চলাচল ও ফেরি সার্ভিস সচল থাকার সময় প্রতি মাসে এ ঘাট থেকে গড়ে ৭-৮ লাখ টাকা রাজস্ব আসত। এখন এক লাখ টাকাও আসে না।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শহীদ অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মতিউর রহমান মামুন বলেন, আমরা সাড়ে ১২ কিলোমিটার অংশের কিছু স্থানে কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টি থাকায় তা বন্ধ করতে হয়েছে। এখন কাজ করলে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো, তাই বন্ধ রেখেছি। শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, অনেকদিন ধরে এ সড়কের নাজুক অবস্থা। ২৭ কিলোমিটার সংস্কারে টেন্ডার হয়েছে। কাজ যাতে দ্রæত সম্পন্ন করে এ বিষয়ে ঠিকাদারদের বৈঠক হয়েছে। আর নারায়ণপুর থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত কাজের দর রিভাইস করার জন্য মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়ার সাথে সাথে কাজ শুরু করতে পারব। আর সড়ক চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আপাতত যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।